প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের দু’দিন আগেই ধসে  গেলো তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কআসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: তিন গুণ নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করার পরেও পানি চাপে ধসে গেল লালমনিরহাটের দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর সংযোগ সড়কের। উদ্বোধনের দু’দিন আগেই সংযোগ সড়কটি তিস্তার নদীর পানির চাপে ধসে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সেতুটির। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। অথচ গত বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাতে সেতুর উত্তর পাশের সংযোগ সড়কের ইচলী এলাকার একটি ব্রীজ পানির চাপে ধসে পড়েছে।

জানা গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা অধিকতর উন্নয়ন ও ব্যবসা- বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আর্ন্তজাতিক ব্যবসায়ীক রুট বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর রংপুরের দূরত্ব কমিয়ে আনতে তিস্তা নদীর ওপর কাকিনা-মহিপুর ঘাটে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্ধেশ্বর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল এ সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরই মধ্যে সেতুর কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশনের কাছ থেকে বুঝে নিয়েছে বাস্তবায়নকারী কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল দফতর। আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সেজন্য সেতুর উত্তর পাশে মঞ্চ প্রস্তুর কাজ চলছে। এরই মধ্যে সেতুর সংযোগ সড়কের ইচলী এলাকার একটি ব্রীজের মোকা ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এখন নৌকায় করে চলাচল করছেন পথচারীরা। এর আগেও ব্রীজের মোকা ধসে পড়লে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে সংশ্লিষ্ট দফতর।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় জানান, ৮৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ফুটপাতসহ ৯ দশমিক ৬ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ১২৩ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ১৬টি পিলার, ২টি অ্যাপার্টমেন্ট ও ১৭টি স্প্যানে ৮৫টি গার্ডারের ওপর সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে। একই টাকার মধ্যে সেতুটি রক্ষার জন্য উভয় পাশে ১৩০০ মিটার নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুর সঙ্গে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের কাকিনা থেকে সেতু পর্যন্ত ৫ দশমিক ২৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ২ প্যাকেজে ৪ কোটি ৪৬ লাখ এবং এ সড়কে ২টি ব্রীজ ও ৩টি কালভার্ট নির্মানে ৩টি প্যাকেজে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয় হয়।

সেতু থেকে রংপুরের অংশে ৫৬৩ মিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় হয় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা। প্রথমে সড়ক নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে এক কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এই ৫ কিলোমিটার সড়কে ৩ দফায় মোট ১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ধস থেকে ব্রীজক রক্ষা করতে পুনরায় তিন কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ সংস্কার কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কামাল অ্যাসোসিয়েট স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছায়া ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করে। কাজ শেষ না হতেই গত বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ইচলী এলাকার ব্রীজ মোকা ধসে পড়লে স্থানীয়রা বালুর বস্তা ফেলে পানির ¯্রােত রক্ষা করেন। নিম্নমানের কাজের কারণে উদ্বোধনের দু’দিন আগেই সড়ক ধসে পড়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয়রা জানান, সংযোগ সড়ক নির্মাণের শুরু থেকে কাজের মান নিয়ে অভিযোগ করেও সুফল মেলেনি। নিম্নমানের কাজ ঢাকতে চার দফায় সংস্কার করেও চলাচলের উপযোগী করতে পারছে না প্রকৌশল দফতর। নদী শাসনের ১৩০০ মিটার বাঁধ অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে বলেও দাবি স্থানীয়দের।

তাদের দাবি, তিস্তা নদীর পানি মূল ¯্রােতধারা সেতু হয়ে না গিয়ে লোকালয় হয়ে যাচ্ছে। এতে লোকালয় ভাঙ্গছে, সেই সঙ্গে ভেঙ্গে যাচ্ছে এই ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ব্রীজ-কালভার্ট। এই সড়কটি ভেঙ্গে যাওয়ায় উদ্বোধনের আগেই তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুটি অকার্জকর হয়ে পড়লো।

সেতু এলাকার কামরুজ্জামান, শরিফুল ইসলাম ও মোক্তারুল ইসলাম জানান, নামমাত্র কাজ দেখিয়ে এই প্রকল্পের অর্থে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের পকেট মোটা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতারের হুমকি দিত।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ নেওয়াজ খান জানান, নদী প্রতিমুহূর্তে গতিপথ পরিবর্তন করে থাকে। সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা যখন করা হয়, সে সময়ের গতিপথ অনুযায়ী সেতু ও নদী শাসন বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এটার দায় তার নয়। উল্টো পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যথা সময়ে হবে। ধসে যাওয়া অংশ দ্রুত মেরামত বা সাময়িক যোগাযোগের জন্য ব্যবস্থা করতে প্রকৌশল বিভাগ কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here