ডেস্ক রিপোর্ট:: আজ মে মাসের দ্বিতীয় রোববার, বিশ্ব ‘মা দিবস’। পৃথিবীর মানুষ এই দিনটি উদযাপন করে পরম ভালোবাসা মমতা নিয়ে। মা’য়ের প্রতি সন্তানের ভালোবাসা প্রকাশের বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয় না। প্রতিটি দিনই হোক মা দিবস।

কবি রবার্ট ব্রাউনিং বলেছেন, ‘মাতৃত্বেই সকল মায়া, মমতা ও ভালোবাসার শুরু এবং শেষ।’ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দাঁড়ায়, পৃথিবীর সূচনা থেকে মা শব্দটির মমতা এবং ক্ষমতা অসীম, যা কোনো কিছুর মানদণ্ডে বিবেচনা করা যায় না। মা ছাড়া কোনো প্রাণীরই প্রাণ ধারণ করা সম্ভব নয়।

সন্তান গর্ভে ধারণ করেই মা জীবনে প্রথম মৃত্যুর ঝুঁকির মুখোমুখি হন। সময় যত বাড়তে থাকে, ঝুঁকিও তত বাড়ে। একজন মা ১১ মাস গর্ভ ধারণ করে সন্তানকে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখান, যা সত্যি অবিশ্বাস্য।

সাধারণত একজন মানুষ ৪৫ ইউনিট ব্যথা একবারে সহ্য করতে পারে, আর সেখানে একজন মা যখন সন্তান জন্ম দেন, তখন তিনি ৫৬ ইউনিট ব্যথা সহ্য করেন, যা একসাথে ১০টি হাড্ডি ভেঙে যাওয়ার ব্যথা থেকেও বেশি!

পৃথিবীতে একজন মানুষের প্রতি অন্য মানুষের দয়া সহানুভূতির চেয়েও যার ভালোবাসা বেশি তিনিই হলেন মা। শত ত্যাগ ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে মা বড় করে তোলেন সন্তানকে। নিজে না খেয়ে সন্তানকে খেতে দেন। মায়ের স্মৃতি বহন করেই সন্তানের বেঁচে থাকা, মায়ের একটা শরীরই হলো তার সন্তান।

নিজে শত কষ্ট সহ্য করলেও সন্তানের সামান্য কষ্ট মা সহ্য করতে পারেন না। সন্তানের প্রথম এবং সবচেয়ে বড় শিক্ষক মা। একজন মা সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে, নিজেকে তীলে তীলে বিসর্জন দেন।একজন দক্ষ শিক্ষক দ্বারাও অসম্ভব।

মায়ের হাতেই হাতেখড়ি হয় একটা সন্তানের। বয়স যতই বাড়ুক, মায়েদের কাছে তাদের সন্তান সব সময়ই ছোট থাকে। সন্তান মায়ের অনুকরণে কথা বলতে শেখে; তাই মায়ের কাছে প্রথম শেখা ভাষাকে মাতৃভাষা বলে। একজন মা সুভাষিনী হলেই সন্তানরাও মিষ্টভাষী হয়।

নৈতিক চরিত্র ও মূল্যবোধের শিক্ষা সন্তানকে মা দিয়ে থাকেন। একজন আদর্শ মা সন্তানের পাশে থাকেন বিপদে বন্ধু হিসেবে। হতাশায় আশার আলোকবর্তিকা হয়ে। অসহায় অবস্থায় অভিভাবক হয়ে। সর্বোপরি সকল পরিস্থিতিতে স্নেহ-দয়া ও ভালোবাসার অপার ভাণ্ডার হলেন মা।

একজন মায়ের যদি ৫টি সন্তান থাকে তাহলে তিন বছর করে লালন-পালন করেন ১৫ বছর। তা করার পরও মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন না। অসহ্যকর কষ্টকর একটা সংসার তৈরি করেন। সারাটি জীবন শত কষ্ট সহ্য করে, জীবনের সঙ্গে লড়াই করে শুধু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকেন মা।

এত ত্যাগ স্বীকার করার পরেও আমরা মা’কে যথাযথ সম্মান করি না। বিশ্বজুড়ে আজ মা’য়েরা অবহেলিত, সন্তানরা খারাপ আচরণ করে। বয়স হলেই মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসে। দেশে বৃদ্ধাশ্রম দিন দিন বাড়ছে, ইউরোপ আমেরিকায় এটা খুবই সহজ। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মায়ের খোঁজখবরও নেয় না উদাসীন সন্তানরা।

অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.) মায়ের অধিকার নিয়ে তিনবার বলেছেন, সন্তানের ওপর, পিতার অধিকার সেখানে একবার। মা সন্তানের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানেই জান্নাত। মা যেমন সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল ও স্নেহপরায়ণ, সন্তানদেরও উচিত মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা ও মমত্ববোধ বজায় রাখা।

আমাদের করণীয়, মায়ের সঙ্গে শিশুসুলভ আচরণ করা। সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় কথা বলা। তাদের সুখ-শান্তির জন্য আমাদের ধনসম্পদ ব্যয় করা। তাদের সঙ্গে বিনম্রভাবে চলাফেরা করা। যে কোনো বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করা। তাদের সঙ্গে কর্কশ ও বিশ্রী বাক্যে কথা না বলা।

শেষ বয়সে একটু শান্তি, ভালোবাসাময় সময় দেয়া। এ বয়সে একটু আদর পেলেই মায়েরা খুশি।মা খুশি হন যেমনটা একটা শিশু সামান্য কিছুতেই খুশি হন। মায়ের জন্য সুন্দর জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করা মায়ের ঠিকানা যেন কখনো বৃদ্ধাশ্রমে না হয়।

তাহলে সন্তানের এই জন্ম পাপ ও ব্যর্থতায় ভরে যাবে। আজকের এই বিশেষ দিনে আমরা অন্তত এভাবে ভাবতে পারি গত এক বছর মাকে কতটুকু সময় দিয়েছি। মায়ের মর্যাদার জন্য কতটুকু করেছি, কতটুকু করা উচিত ছিল?

আধুনিক মা দিবসের প্রচলন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দিবসটির প্রবক্তা আনা মারিয়া রিভস জার্ভিস। তার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস ছিলেন একজন শান্তিবাদী সমাজকর্মী। তিনি ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

১৯০৫ সালে অ্যান মারা যান। তার মৃত্যুর পর মেয়ে আনা মায়ের স্বপ্ন পূরণে কাজ শুরু করেন। সব মাকে শ্রদ্ধা জানাতে একটি দিবস প্রচলনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হন তিনি। ১৯০৮ সালে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার একটি গির্জায় আনা তার মায়ের স্মরণে অনুষ্ঠান করেন। একই বছর মার্কিন কংগ্রেস মা দিবসকে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ছুটি ঘোষণার প্রস্তাব নাকচ করে। তবে তাতে দমে যাননি আনা। তিনি তার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মা দিবস পালিত হতে থাকে।

অবশেষে আনার প্রচেষ্টা সফল হয়। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটি সরকারি ছুটি ঘোষিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের দেখাদেখি পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস হিসেবে পালিত হতে থাকে।

সূত্র: জাগো নিউজ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here