মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী প্রতিনিধি :: সারা শরীরে অন্তত অর্ধশত বেত্রাঘাতের চিহ্ন। বেতের আঘাতে বাম হাতের কনুইর নিচে ফেটে গেছে। স্কুলে পড়া দিতে দেরি হওয়ায় শ্রেণি শিক্ষকের বেদম বেত্রাঘাতে এখন কলাপাড়া হাসপাতালের বেডে শুইয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছে দশম শ্রেণির ছাত্র শাহীন আলম। ছেলের শরীরে এ বেতের আঘাতের ক্ষত চিহ্ন ও তার আর্তনাদ শুনে তার বেডে বসে এখন দু’চোখের জল ফেলছে মা সাহিদা বেগম।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্যারা শিক্ষক হাসান আল আউয়াল গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে দশম শ্রেণির ইংরেজি প্রথম পত্র ক্লাস নিচে এসে এমন বর্বরতা চালায়। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পেরে ওই শিক্ষককে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করে পরিস্থিতি শান্ত করে প্রধান শিক্ষক। কিন্তু ঘটনায় ভয়াবহতায় মঙ্গলবার অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভয় ও আতংকে ক্লাসে আসেনি।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রচন্ড গরমেও শরীরে গামছা পেছিয়ে বেতের আঘাতের চিহ্ন ঢাকার চেষ্টা করছে শাহীন। বেতের প্রতিটি আঘাতে শরীর অন্তত এক ইঞ্চি করে ফুলে উঠে কালচে হয়ে আছে। বাম হাতের একটি অংশ ফেটে গেছে। মেখানে ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। গলা ও বাম কানের নিচে শাপলার ডাটার মতো ফুলে আছে।
আহত শাহীন জানায়, সোমবার দুপুর একটায় ক্লাসে আসের শিক্ষক হাসান আল আউয়াল। ক্লাসে এসেই সে সবাইকে আগের দিনের পড়া দিতে বলেন। কিন্তু সে পড়া না পাড়ায় স্যার তাকে বেধড়কভাবে মারতে শুরু করে। তাঁর বেদম প্রহারে এক পর্যায়ে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।
শাহীনের সহপাঠী মারুফ তার স্বজনরা জানায়, স্যার সবাইকেই দুই-তিনটা করে বেত্রাঘাত করে। কিন্তু শাহীনকে অন্তত ৫০টি বেত্রাঘাত করে। এতে শাহীন ক্লাসেই অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। এতে ভীতসন্তস্থ্য শিক্ষার্থীরা ক্লাস ছেড়ে বাইরে বের হয়ে আসে। শিক্ষার্থীদের চোখে-মুখে আতংক ও মারধরের খবর শুনে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা শাহীনকে শিক্ষকদের বসার রুমে নিয়ে শুইয়ে রাখে। কিন্তু তার জ্ঞান না ফিরলে পাশ্ববর্তী বাজার থেকে এক ডাক্তার এনে শাহীনকে একটি ইনজেকশন পুশ করে ও ওষুধ খাওয়ায়। বিকাল সাড়ে তিনটায় তার জ্ঞান ফিরলে বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্ররা তাকে বাসায় পৌছে দেয়।
শাহীনের খালু মো. সোলায়মান জানান, প্রথমে শাহীনকে দেখে তারা ভেবেছেন ক্লাসে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু তার গায়ের জামা খুলে এ ভয়াবহ আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। তার বাম হাত ফেটে যায়। সন্ধায় শাহীন আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়লে রাতে তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেণ।
শাহীনের মা সাহিদা বেগম জানান, এভাবে কোন শিক্ষক যে মারতে পারে তা কল্পনা করলেও শরীর কেঁপে ওঠে। শাহীনের পিঠে এক ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই যেখানে বেতের আঘাত করা হয়নি। ছেলেটা ঠিক মতো শুইতে পারছে না। একটু পরপরই যন্ত্রনায় কেঁপে উঠছে। স্কুলের শিক্ষকরা তার ছেলেকে মারধর করলেও বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ছাড়া প্রধান শিক্ষক কিংবা অন্য কোন শিক্ষক তাকে দেখতে কিংবা খোঁজ খবর ও চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়নি।
কলাপাড়া হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জেএইচখান লেলীন জানান, শাহীনের সুস্থ্য হতে অন্তত পাঁচ-সাত দিন সময় লাগবে। প্রতিটি বেতের আঘাত শরীরে ক্ষত হওয়ায় হয়তো তার ওই চামড়া উঠে যাবে। এজন্য তার জরুরী ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান জানান, যেভাবে মারা হয়েছে বিষয়টি সত্যিই দুঃখজনক। তারা ম্যানেজিং কমিটির সাথে আলাপ করে শিক্ষক হ্সাান আল আউয়ালকে বরখাস্ত করেছেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদ হোসেন জানান, শিক্ষার্থী মারধরের ঘটনায় ওই প্যারা শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যাপারে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।