জনগণের প্রত্যাশার গণতন্ত্র স্বাধীনতার এত বছর পরও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে পোড়া মানুষের বিভৎস ছবি দেখে। তবুও এ আর্তনাদে পাষাণের হৃদয় কাঁদে না। তাকিয়ে দেখে, আর ভোটের হিসেব কষে মেকি আওয়াজ তোলে। এর শেষ কোথায়, কেউ জানে না। শুধুই অজুহাত, আর মাএ ক’দিন! এভাবেই কেটে গেলো চৌত্রিশ দিন। এরই মাঝে সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়েছে অনেক পরিবার। বিধাতার কাছে স্বজনহারা মানুষগুলোর গগণবিদারী আর্তনাদ, আর কতো? তবুও শেষ হচ্ছে না নরপশুদের নারকীয় তান্ডব।
একদিকে প্রতিরোধ আর একদিকে আন্দোলন, ফাঁদে জনগণ। জীবন্ত দগ্ধ মানুষগুলো যেনো ক্ষমতালোভীদের দাবার গুটিতে পরিণত হয়েছে। টার্গেট একটাই-ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হবে- ক্ষমতায় যেতে হবে। মুখেই শুধু গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার। অন্তরে তুমি কে?
এভাবেই পোড়া রাজনীতিতে চলছে বর্তমান গণতন্ত্র চর্চা। যার বলি হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তবুও শেষ হচ্ছে না ক্ষমতার লড়াই। দু’পক্ষই অনড়। এমন পরিস্থিতিতে জ্বলছে দেশ, পুড়ছে মানুষ। চারদিকে হাহাকার। আকাশে কালো মেঘ। আলো নিভু নিভু। ভয়ে কাঁপছে গণতন্ত্র। পঙ্গু হচ্ছে অর্থনীতি। মানুষ হারাচ্ছে কর্মসংস্থান। অধিকারের আওয়াজ আজ মাটি চাপা প্রায়।
যারা রাজনীতি বোঝে না, তারাও আজ রাজপথে। চলছে জেদা-জেদী অতিমাত্রায়। ধূলোমাখা রাজপথে কাঁটার স্তর। স্বাভাবিক জীবনে তিমির আঁধার। তবুও লোভীদের লালসা ক্ষমতা। ফলে বাকরুদ্ধ সাধারণ মানুষ। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের হাক-ডাক কিছুই হয়নি। এমন পরিস্থিতিতেই নৌকা চালিয়ে কূলে যেতে মরিয়া মাঝি। কিন্তু জলশুন্য বিলে নৌকা ঠেকেছে চরে, সে দিকে খেয়াল নেই। আরেক পক্ষ গোঁ ধরেছে-চূড়ান্ত লৰ্যে পৌঁছাবার। দু-পক্ষের রশি টানা টানিতে নাভিশ্বাস জনমনে। তারা এখন ক্লান্ত। আর কতো?
প্রতিযোগিতার এ কলুষিত লড়াইয়ে মানুষ পুড়ে কয়লা হোক, তাতে কিইবা আসে-যায়। দায়তো কারো একার নয়। ক্ষমতার বাঁচা-মরার লড়াইয়ে জিততেই হবে। ক্ষমতালোভীদের চোখে কালো চশমা। মানুষ পোড়া গন্ধই তাদের কাছে সুগন্ধির মতো। জনগণের ভাষা বোঝার কেউ নেই। জ্বলছে-পুড়ছে-মরছে, সেদিকে কারোরই মাথা ব্যথা নেই, লক্ষ একটাই- শুধুই ক্ষমতা।
পরিসংখ্যান মতে, চলমান সহিংসতার এক মাসে এ পর্যন্ত সারাদেশে নিহত ৭৬, আহত ৬৭৮, মোট অগ্নিদগ্ধ ২৫৩, যানবাহনে আগুন ৯০০ ও ভাঙচুর ৩৬৪, স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর ২৯, ককটেল নিক্ষেপ ১৩৪৭। আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া সারাদেশে বিচার বহির্ভূতভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক ২৩ ব্যক্তিকে হত্যা। এর মধ্যে ১৯ জন নিহত হয়েছে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে‘। বাকি ৪ জনের মধ্যে ৩ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজত থেকে পালানোর সময় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। অন্য একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
অন্যদিকে রাজধানী থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ১ হাজার ২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সারাদেশে এর সংখ্যা আরো ব্যাপক। সর্বশেষ রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মিরপুরের কালশি এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম। অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে দেশ। জ্ঞানপাপীরা বলছেন, সঙ্কট কেটে যাবে দ্রুত।
কিন্তু কবে কেউ জানে না। দুই দলের অনড় অবস্থানে পুড়ে কয়লা হচ্ছে মানুষ, দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। আর গুম,খুন-ক্রসফায়ারতো এখন র্বটিনওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। তবুও দায়িত্ব নিতে নারাজ ৰমতাপিপাসুরা। ফলে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় ব্যবসায়ী, শিক্ষর্থী অভিভাবকসহ দেশের ১৬ কোটি জনতা। কে দিবে এর জবাব। কেউ জানে না। ঘূর্নিপাকে ঘুরছে জনগণের ভাগ্য।
প্রত্যাশার সোনার বাংলা গড়তে ক্ষমতা লোভীরা আর কতো সপ্নের মধ্যে ঘুম পাড়াবে জনগণকে? ক্ষমতার লোভ কেন পুরা জাতীকে বইতে হবে? আর কতো মানুষ দগ্ধ হলে এ খেলা বন্ধ হবে? আর কতো লাশ পড়লে শুভবুদ্ধির উদয় হবে? আর কতো পোড়া মানুষের আর্তনাদ দেখতে হবে? এর উত্তর জানা নেই কারোরই। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়, জনগণের প্রত্যাশার গণতন্ত্রের জন্যে, আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
প্রতিদিন এরকম প্রশ্ন যখন বিবেকের দরজায় কড়া নাড়ে, ঘুম ভাংগার আগে। তখনও দায়ীত্বশীলদের কথায় বেড়ে যায় ব্যথা। কেড়ে নেয় প্রাণ। তবুও এ সমস্যার নেই কোন সমধান। শুধুই সময় ক্ষেপন, অহেতুক কথা। আলোচনা নয়, জনগণের সহযোগিতা দু’পক্ষই চায়। যে জনগণ পুড়ে কয়লা হয়ে মরছে, দগ্ধ হচ্ছে, ভোটের অধিকার হারিয়েছে। সে জনগণের সহযোগিতা চাওয়াটা কতোটা কাম্য তা জানা নেই, তবে জনগণের হিসেব নেয়ার সময় এসেছে…।
লেখেক: কবি ও সাংবাদিক, মোবাইল: ০১৬৭৬২০১০৩০, ই-মেইল: mehedi222@gmail.com