পুরুষের চেয়ে বিড়াল পোষা ভালো : তসলিমা নাসরিননিউজ ডেস্ক :: বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন দেশ থেকে নির্বাসিত হয়েছেন ২০ বছর আগে। এই ২০ বছর তিনি ইউরোপ, আমেরিকা, ভারতের নানা প্রান্তে, নানা শহরে থেকেছেন। গত কয়েক বছর ভারতের রাজধানী দিল্লিই তার ঠিকানা।

নির্বাসনের এই ২০টা বছরের দিনরাত, সুখদুঃখ নিয়ে দিল্লির অ্যাপার্টমেন্টে বসে তসলিমা কথা বলেছেন বিবিসি বাংলার সঙ্গে। তিনি বলেছেন- ২০ বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি জেনেছেন পুরুষ পোষার চেয়ে বিড়াল পোষা অনেক ভালো।

ইউনাইটেড নিউজের পাঠকদের জন্য তার সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-

তসলিমা বলেন, একা থাকতে থাকতে বদ অভ্যেস হয়ে গেছে। মানুষের ভিড় থেকে নিজেকে সরিয়ে একাই থাকি। বিড়াল পুষতে পুষতে এখন বিড়াল দেখলেই পুষতে ইচ্ছা করে। একা থাকা মেয়েরা নাকি খুব বিড়াল পোষে। এখানে-সেখানে পুড়তে পুড়তে তসলিমা এইটুকু জেনেছে পুরুষ পোষার চেয়ে বিড়াল পোষা ভালো।

তিনি বলেন, কুড়ি বছরে কত কিছু ঘটেছে, কত দেশে থেকেছি, কত শহরে থেকেছি।  আবার কত শহর পাল্টেছি, কত দেশ বদল করেছি কোথাও মনে হয়নি আমি ভালো আছি। কোনটা মনে হয়নি আমার দেশ। যদিও ইউরোপের নাগরিকত্ব পেয়েছি, কিন্তু ইউরোপকে সত্যিকার অর্থে আমার দেশ বলে মনে হয়নি। সব সময় মনে হয়েছে- আমি নিজের দেশে যাব। আবার এখন, কুড়ি বছর পর মনে হয়- দেশ বলে বোধহয় আমার কিছু নেই। মানুষ যারা আমাকে ভালোবাসে, যারা আমার লেখা পড়ে, বোঝে, যারা শ্রদ্ধা জানায়, তাদেরকেই আমার দেশ বলে মনে হয়। যখন আমি ইতালি যাচ্ছি, নরওয়ে যাচ্ছি, ফ্রান্সে যাচ্ছি- কত মেয়েরা বলে তোমার লেখা পড়ে আমরা শক্তি পায়, তুমি আমাদের অনুপ্রেরণা। তারা ভালোবাসে আমাকে। তাদেরকেই মনে হয় আমার দেশ। দেশ বলতে আমি শুরু মাটি, গাছপালা, বাড়িঘর, যেখানে আমার জন্ম হয়েছিল বা যেখানে আমি বড় হয়েছি সেটাকেই মনে হয়, তা নয়। আমি তারপরও অন্তত আমার দেশে ফেরার অধিকারের জন্য লড়াই করব, যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন।

প্রশ্ন : পছন্দেই হোক বা অপছন্দেই হোক, গত তিন-চার বছর ধরে দিল্লি আপনার ঠিকানা। আপনি বললেন বহু বছর ঘুরতে হয়েছে, ঠাঁই নাড়া হতে হয়েছে বার বার। এই শহরগুলোকে কতটা আপন করে নিতে পেরেছেন? যেমন ধরুন, দিল্লির প্রসঙ্গে যদি বলি- আপনি কতটা দিল্লিয়াইড হতে পেরেছেন? আপনি কি চাঁদনি চকে গিয়ে বিরিয়ানি খান করিমসে, বা দিল্লির হাটে বাজার করেন।

তসলিমা : মাঝে মাঝে মনে হয় পৃথিবীর সব জায়গা আমার। দিল্লির যে জায়গাগুলোর কথা বলছেন ও গুলোতে আমি যাই। আমি দিল্লির হাটে গিয়ে বাজার করি। আমি ইন্ডিয়াগেটে আইসক্রিম খাই। করিমসে গিয়ে বিরিয়ানিও খায়। কিন্তু এগুলোতো দোকান পাঠ, এগুলোতে রাস্তাঘাট। আসল দিল্লিয়াইড হতে যেটা দরকার তা দিল্লির মানুষ আমাকে কতটা আপন করে নিয়েছেন। যেখানেই যাই একটা জিনিস লক্ষ করেছি, সবাই আমাকে আউটসাইডার ভাবে। আমি যতোই এখানকার মানুষ হতে চাই, কিন্তু সবাই আমাকে ভাবে অন্য দেশের, বলে তুমি তো আমাদের নও।

প্রশ্ন : এখনো আপনি বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিতা লেখিকা এটাই পরিচয়?

তসলিমা : হ্যাঁ এখনো। যদিও আমি ভারতে থাকতে থাকতে ভারতের বিষয়টা বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি জানি। এখানে নিউজ পেপার আসছে সকাল বেলা, টিভি খুলছি, সুতরাং ভারতের খবরগুলো বেশি আসছে। বাংলাদেশে খবরগুলো তেমন আসছে না আমার কাছে। তাছাড়া আমি বিশ্বের খবরও জানছি। বিবিসি, সিএনএন দেখছি, ওতে তো আর বাংলাদেশের খবর এতো করে আসছে না, যদি না বড় দুর্ঘটনা ঘটে। তবে সব জায়গায় কিন্তু আমাকে বলা হয়- তুমি অন্য দেশের। সুতরাং যতোই আমি আপন করে নেয় অন্য শহরকে, মানুষকে, তারপরও তারা একটা দেয়াল রাখে। সেটা সব দেশে দেখেছি। এখানকার সমস্যা নিয়ে আমি যখন প্রতিবাদ করি, তখন কিছু মানুষ আমার বিরুদ্ধে গেলে যায়। বলে তুমি বাইরের লোক আমাদের ভেতরের ব্যাপার নিয়ে কথা বলবে না। কিন্তু আমিতো নিজেকে পৃথিবীর লোক ভাবি।  তাই আমি পৃথিবীর সব ব্যাপারে কথা বলি। আমেরিকায় উল্টা-পাল্টা হলে আমি আমেরিকাকে গালাগালি করি। ইউরোপের কিছু প্রোবেলেম দেখলে ওটা নিয়ে কথা বলি। তাহলে ভারতে থাকছি, ভারতের নিয়ে কথা বললে তোমাদের এতো গা জ্বলে কেন। আবার বাংলাদেশ নিয়ে কথা বললে ওখানকার লোক বলে- এই দেশ নিয়ে কথা বলার আর তোমার কোনো অধিকার নেই। এই দেশ তোমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। যে দেশে থাকছো সে দেশ নিয়ে কথা বল। তাই বলে, আমি তো আর থেমে থাকি না। আমি পৃথিবীর যেখানেই থাকি, আমি লিখে যাচ্ছি, আমি বই লিখছি, ব্লগে  লিখছি।

প্রশ্ন : এই লেখা প্রসঙ্গে আসছি। আপনি একজন লেখক এবং বাংলা ভাষায় লেখালেখি করেন। বাংলা ভাষাভাষি পরিমণ্ডল থেকে এতোদিন ধরে বাইরে থাকতে হচ্ছে- আপনার কি মনে হয় লেখালেখিতে তার প্রভাব পড়ছে।

তসলিমা : আমাকে যখন বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দিল, ১৯৯৪ সালে। তখন তো ইউরোপে গিয়ে পড়লাম। খুব চেষ্টা করতাম দেশে ফেরার জন্য। কিন্তু দেশে ফেরা তো সম্ভব হচ্ছিল না। কলকাতায় ফিরতে চাইলাম কিন্তু ভারত সরকার আমাকে ভিসা দেয়নি ছয় বছর। ছয় বছর পর ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে ভিসা দেওয়া হলো।  আমি সঙ্গে সঙ্গে চলে এলাম কলকাতায়। কিছুদিন থাকলাম। তারপর ভিসা শেষ হয়ে গেল। চলে যেতে বাধ্য হলাম। আবার ফিরে ফিরে আসতাম। প্রতি বছর আসতাম। আমি চাইতাম আমি একটা বাংলাভাষি পরিবেশে থাকি। যেখানে মানুষগুলো বাংলাভাষায় কথা বলছে, আমিও বাংলাভাষায় তাদের সঙ্গে কথা বলব। কারণ আমি বাংলাভাষায় লিখি। যদি বাংলাভাষা থেকে দূরে থাকি, বাইরে থাকি- আমার পক্ষে আর হয়তো বাংলাভাষায় লেখা সম্ভব হবে না। এটা আমি বিদেশে বসেই অনুভাব করছিলাম। ইংরেজিতে কথা বলতে হতো, অনেক সময় বাংলায় লিখতে গেলে কোনো শব্দ হয়তো খুঁজে পেতাম না, হাতড়াতে হতো। এই জন্যে বিদেশে সমস্ত কিছু ছেড়ে ২০০৪ থেকে যখন আমাকে রেসিডেন্ট পারমিট দেওয়া হলো আমি কলকাতায় বাস করতে শুরু করলাম। কেউ কি প্যারিস ছেড়ে কলকাতায় থাকে? আমি থাকলাম আমার ভাষার জন্য, আমার লেখা জন্য। বাংলার মানুষ তা বুঝলেও সরকার তো বোঝেনি। আমাকে যদি তাদের রাজনৈতিক ফুটবল বানানো যায়, আমাকে লাথি দিয়ে তাড়িয়ে দিলে যদি তাদের দুটো ভোট জোটে- তাই হলো। এতে আমার সর্বনাশ হলো কি না, আমি ভালো বই লিখতে পারলাম কি না সে কথা কে বুঝলো? তাড়িয়ে দিল।

প্রশ্ন : আপনাকে তাড়ানোরও কুড়ি বছর হয়ে গেল। কুড়ি বছরে উঠা-পড়াও নিশ্চয় ছিল? কোনটি উঠা, কোনটি পড়া বলে মনে হয়?

তসলিমা : দেখুন, বিদেশি বিভুঁইয়ে ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ভাষার মধ্যে থাকলে এক সময় হতাশ হয়ে পড়ে মানুষ। আমি যদি কোনো মানুষকে খুন করতাম, বা আমি যদি সত্যি একজন ক্রিমিনাল হতাম, তখন দেশ থেকে তাড়িয়ে দিলেও আমার একটা শান্ত্বনা থাকতো। কিন্তু মানুষের ভালোর জন্য লিখলাম, মানবতার জন্য লিখলাম, মেয়েদের সমান-অধিকারের কথা লিখলাম, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে লিখলাম, এটা এতোই অন্যায় হয়ে গেল যেজন্য আমাকে তাড়াতে হবে? এই কুড়ি বছরে অনেক পুরস্কার পেয়েছি, যেগুলো আমি কল্পনাও করিনি। মুক্তচিন্তার জন্য ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট থেকে শাখারোপ পুরস্কার, সিমানদা বুফার পুরস্কার পেয়েছি ফরাসি সরকারের কাছ থেকে।  কিন্তু এগুলোর চেয়েও বড় আমার কাছে যখন মানুষ এসে চোখের জল ফেলে। বলে তুমি আমাদের প্রেরণা, ওইটা আমাকে অনেক বেশি স্পর্শ করে।

প্রশ্ন : পেছন ফিরে তাকিয়ে কখনো কি এমন মনে হয়েছে- আমি যদি অন্যভাবে লিখতাম, আমার লেখায় যদি ঝাঁজ একটু কম হতো, তাহলে তো আমি বাংলাদেশে থাকতে পারতাম। আর পাঁচটা লোকের মতো নিজের দেশে নিজের ভাষার মধ্যে থাকতে পারতাম। এতোটা বাড়াবাড়ি করা হয়তো উচিত হয়নি। বা না করলেও হতো?

তসমিলা : না, এ রকম ভাবনা আসে না। আমার আগেও যারা মিন মিন করে নারীবাদের কথা বলতো, ওদের কথা কেউ শুনতো না। সমাজটাকে ধাক্কা দিতো না। কিন্তু ধাক্কা দেওয়ার দরকার ছিল। ধাক্কার ফল আমার জীবন দিয়ে সইলাম। কিন্তু মানুষ তো কিছুটা ভেবেছে এবং এই প্রসঙ্গ নিয়ে তো আলোচনা হয়েছে। এখন প্রচুর মেয়েরা লিখছে, বা ছেলেরা লিখছে। কিন্তু আমি সেই তেইশ বছর আগে যা লিখেছিলাম, সেই নির্বাচিত কলাম, সেই গুলোই লিখছে এখন। তখন যে রাগ ছিল আমার, যেভাবে আমি বলতে চেয়েছি- সেভাবেই বলেছি। আর মানুষের রাগ থাকা উচিত। রাগের প্রয়োজন আছে।

প্রশ্ন : এতো রাগ নিয়ে মনে করেন আবার বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন?

eWg&aFsyyPg&aFতসলিমা : আমার মনে হয় না আমাকে কেউ বাংলাদেশে ফিরতে দেবে। যদি দেয় সেতো খুব ভালো। কিন্ত বাংলাদেশে যতদিন এই ধর্মান্ধ লোকগুলো আস্ফালন করবে, বা ধর্মান্ধ লোকগুলো যতদিন আছে ততদিন সম্ভব হয়তো না। আমি কিছুরই জন্য অনুতাপ করি না। যা আমি লিখেছি, আমি তাই লিখবো। এখন আমার যদি নতুন করে জন্ম হয়, তথন যদি কেউ বলে তখন তুমি কি একটু অন্যভাবে লিখবে? না,  আমি ঠিক এভাবেই লিখবো, যেভাবে লিখেছি। আমাকে ভুগতে হয়েছে। তবে পজেটিভ জিনিসটি হচ্ছে আমি অনেক দেশে, অনেক কিছু দেখেছি। অনেক লেখক আমাকে কাছে টেনে নিয়েছেন, আমি আরো বড় করে পৃথিবীটাকে দেখতে পাচ্ছি। হয়তো বাংলাদেশে থাকলে যে চোখটা আমার হয়েছে, মনটা আমার হয়েছে, এতোটা হতো না।

প্রশ্ন : ভারতে একটি নতুন সরকার এসেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তারা সম্পর্কে উন্নয়নে আগ্রহী এমনটাই বলা হচ্ছে। নতুন সরকার যদি বাংলাদেশে সঙ্গে আপনার ইস্যুটা উত্থাপন করে তাহলে একটা ব্রেকথ্রু হতে পারে।

তসলিমা : আমি সত্যিই চাই যে ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলুক। কারণ আমি ভারতে আছি, বলছি যে আমি বাংলাদেশে ফিরতে চাই। ভারত সরকার যদি বলে আমি খুবই কৃতজ্ঞ থাকবো। আমি কংগ্রেস সরকারকে বলেছিলাম- আপনারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলুন। কারণ আপনার মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মূল্য দিয়ে আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশ এতকিছুর ওপর নির্ভর করছে আপনাদের ওপর, সেখানে আপনারা তো একই শর্তটা দিতে পারেন যে- তোমারও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মূল্য দেও, আমরা যেমনটা দিচ্ছি।

প্রশ্ন : কিন্ত সদ্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘুরে এলেন বাংলাদেশ। ভিসা থেকে শুরু করে মৈত্রী এক্সপ্রেস, তিস্তা, স্থলসীমান্ত চুক্তি অনেক বিষয়ে আলোচনা হলো। তসলিমা নাসরিন সেই আলোচনায় এসেছে- তেমনটি শোনা যায়নি।

তসলিমা : না না, তসলিমা তো আর আসবে না। তসলিমা ছোট ব্যাপার এখানে। তিস্তা, রাজনৈতিক সম্পর্কের বিষয় যেখানে সেখানে তো তসলিমা আসতে পারে না। আমি খুবই ছোট মানুষ। আমি বলেছি যে আমি খুব কৃতজ্ঞ থাকব যদি তারা বলে। এইটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারের চেয়ে গণতন্ত্রের ব্যাপার। গণতন্ত্রের প্রধান যে পিলার, সেই বাক স্বাধীনতা বা মতপ্রকাশের অধিকারের ব্যাপার।

প্রশ্ন : কোনো অংকই যদি না মেলে, আমি বলতে চাইছি তসলিমা নাসরিনকে যদি আরো কুড়িটা বছর নির্বাসনেই কাটাত হয়, তসলিমা নাসরিন কীভাবে কাটাবেন সেটা কি কিছু ভেবেছেন?

তসলিমা : আমি তো আগে থেকে প্লান করে কিছু চলি না। আমি চলমান লোক, আমি যখন যা ইচ্ছে হয় তখন তাই করি। করতে চেষ্টা করি। সব সময়তো আর সম্ভব হয় না। যেমন ধরুন আমার এখন কলকাতায় যেতে ইচ্ছে করছে, আমি কি যেতে পারব? আমাকে যেতে দেওয়া হবে না। কুড়িটা বছর কীভাবে যাবে তা তো আমি আগে থেকে প্লান করে রাখি না। দুইদিন পর আমি হয়তো মরে যাব। তবে যেখানেই থাকি, আমি লিখে যাব এইটুকু জানি। যতদিন বাঁচি, যতদিন আমার মাথা কাজ করবে, ততদিন আমি যে কথাগুলো বলেছিলাম সে কথাগুলো বলব এবং আরো যদি নতুন আইডিয়া আসে সেই সব প্রকাশ করব।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here