_7852আল-মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: খাগড়াছড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশে বণার্ঢ্য র‌্যালী আনন্দ শোভাযাত্রা সহ নানা কর্মসুচি পালনের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তিচুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তীর কর্মসুচি পালিত হয়েছে । ঐতিহাসিক দিনটি পালনের জন্য খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যেগে আজ শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) সকালে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ।

চুক্তির ১৯ বছর পূর্তিতে প্রশাসন,রাজনৈতিক,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে শোভাযাত্রা বের করে। সকালে শোভাযাত্রাটি জেলা পরিষদ থেকে শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টাউন হলে গিয়ে শেষ হয়।

জেলা পরিষদের প্রাঙ্গনে শোভাযাত্রার উদ্বোধনী আলোচনায় এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে  শান্তি সম্প্রীতি ও উন্নয়ন ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’র ফসল। পাহাড়ের আজকের এ’শান্তি বর্তমান সরকারের অবদান বলে তিনি উল্লেখ করে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান।

বর্তমান সরকার শান্তিচুক্তি করে অসি’তিশীল পার্বত্যাঞ্চলকে শান্তি সম্প্রীতির ঠিকানায় পরিণত করেছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর বর্তমান সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তিতে আবদ্ধ হয় জনসংহতি সমিতির সশস্ত্র সংগঠন ‘শান্তিবাহিনী’র সদস্যরা।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলায় প্রায় দুই হাজার শান্তি বাহিনীর সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। সরকার তৎকালীন সময়ে অস্ত্র সমর্পণকৃত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন বিভাগে চাকরি দেন।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অ স ম মাহবুবুল আলম, বিজিবি সদর সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মতিউর রহমান, জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মজিদ আলী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোমিনুর রশিদ,খাগড়াছড়ি সদর জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল হাসান মাহমুদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এটিএম কাউছার সহ বিভিন্ন দফতরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদ্বয় শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।

এছাড়াও র‌্যালীতে অংশ নেয় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: জাহেদুল আলমসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিকেলে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম মাঠে এক বর্ণাঢ্য কনসার্টের আয়োজন করেছে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের (পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালিদের একটি সংগঠন) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্টু পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিকে অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে বলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানকে অস্বীকার করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে বসবাসকারী একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বাঙালিদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। সমপ্রতি অবৈধ চুক্তির ফসল ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার পথ সুগম করেছে।

অপর এক সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতির সমিতির (এমএন লারমা) সভাপতি সুধাসিন্দু খীসা বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে এখনো অনেক বিষয় রয়ে গেছে। ভূমি কমিশন যদি যথাযথভাবে কাজ করে এবং কাজ করার জন্য যদি আন্তরিক হন তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সমস্যার কিছুটা হলেও পরিষ্কার হবে। সরকারের বিভিন্ন ভূমিকায় পাহাড়ে অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে।

গুইমারায় শান্তিচুক্তির ১৯ বর্ষপূর্তিতে র‌্যালী আলোচনা সভা

8767435গুইমারা অস্থায়ী কলেজ ক্যাম্পাস মাঠে সকালে অনুষ্ঠানের উদ্ভোধন করেন, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল কামরুজ্জামান এনডিসি পিএসসি। এ সময় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা উড়িয়ে পরে আলোচনা সভা করে।

এ সময় প্রধান অতিথি বলেন, নিরাপত্তাই হচ্ছে একটি দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির অংশ। সারা দেশের ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও শান্তি চুক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখতে পার্বত্য চুক্তির ফলে পাহাড়ের সংঘাতের অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়েছে উল্লেখ রিজিয়ন কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল কামরুজ্জামান।

এ সময় শোভাযাত্রায় অন্যান্যদের মধ্যে অংশ নেয়, খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, গুইমারা বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল জাবেদ সুলতান,সিন্দুকছড়ি জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল বাব্বি আহমেদ, মাটিরাঙ্গা জোন কমান্ডার লে. কর্নেল জিল্লুর  রহমান, গুইমারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) এবিএম মশিউর রহমান, রামগড় সহকারী পুলিশ সুপার কাজী হুমায়ুন রশিদ ভূঁইয়া, গুইমারা থানা অফিসার ইনচার্জ জুবায়ের উল হক, মানিকছড়ি অফিসার ইনচার্জ  আব্দুর রাকিব, রামগড় থানা অফিসার ইনচার্জ মাইন উদ্দিন ও গুইমারা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ সম্পাদক মেমং মারমা প্রমূখ।

এছাড়াও বিভিন্ন সরকারী-বেসররকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রশাসনের নেতৃবৃন্দরা শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভায় অংশ নেয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here