পাবনা : গত ৫ বছরে পাবনায় ১২ হাজার ৯’শ ২১টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে ৪০১টি। বিপুল সংখ্যক অপরাধ সংঘটিত হলেও সাজাপ্রাপ্ত মামলার সংখ্যা দেড়শতাধিক। দায়েরকৃত মামলার মাত্র সাড়ে ৮% নিষ্পত্তি হয়েছে। পাবনা জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির গত ৫ বছরের মাসিক সভার বিবরণী থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলার মধ্যে প্রায় ২৫০ মামলাই রাজনৈতিক মামলা। তবে পুলিশ বলছে বিভিন্ন সংহিংসতার কারনে দ্রুত বিচার আইনে এসব মামলা সংঘটিত হয়েছে। তাই রাজনৈতিক মামলা হিসাবে চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। তবে জামায়াত-বিএনপির দাবি, তাদের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে সব মামলা দায়ের করা হয়েছে তা শুধুই হয়রানিমূলক। এসব মামলায় প্রায় ২৫ হাজার জনকে আসামী করা হয় এবং গ্রেফতার করা হয় প্রায় দেড় হাজার।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যনত্ম ৫ বছরে পাবনায় মোট ১২ হাজার ৯’শ ২১টি বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ও চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার সংখ্যা ৪০১টি। ডাকাতি মামলার সংখ্যা ৪২টি, দস্যুতা ৪৩টি দ্রুত বিচার আইনে ৩৯৭টি, দাঙ্গা ৫টি, ধর্ষণ ১৩৯টি, এসিড নিক্ষেপ ৯টি, অন্যান্যভাবে নারী নির্যাতন ৭৯৫টি, শিশু নির্যাতন ৪১৫টি, অপহরণ ৫৭টি, পুলিশ সংক্রানত্ম ৫৮টি, সিধেল চুরি/ গরু চুরি ২৬১টি, অন্যান্য চুরি ৪১৩টি, অস্ত্র আইনে ২০১টি, মাদক ১৫০২টি, চোরাচালান ৫১৯টি ও অন্যান্য ৭৬৭৪টি মামলা রয়েছে।

তথ্যে আরও জানা যায়, ২০০৯ সালে পাবনায় সংঘটিত মোট অপরাধের সংখ্যা ২৩৫৩টি, ২০১০ সালে ২৭৬১টি, ২০১১ সালে ২৫৬৯টি, ২০১২ সালে ২৬৪৭টি এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালের মোট অপরাধের সংখ্যা ছিল ২৫৯১টি।

এ সব অপরাধের মধ্যে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার উল্লেখ্য যোগ্য হলো, বেড়া উপজেলার দুর্গম ঢালারচরে ২০১০ সালের ২০ জুলাই চরমপন্থিদের গুলিতে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক কফিল উদ্দিন, নায়েক আব্দুল ওয়াহেদ ও কনষ্টেবল শফিকুল ইসলাম নামের ৩ পুলিশ হত্যা। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্ররুয়ারি জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পুলিশের গুলিতে সিরাজুল ও আলাল নামের ২জন কর্মী নিহত হয়। ৩দিন দিন নিখোঁজ থাকার পর ২০১৩ সালের ১০ মার্চ লাশ পাওয়া যায় সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইব্রাহিম আলী মৃধার। ২৭ অক্টোবর’১৩ তারিখে মুলাডলির শেখ পাড়া নামক স্থানে যুবলীগের হামলায় নিহত হয় জুলহাস নামের এক জামায়াত কর্মী। ২০১১ সালের ১ জুন বেড়া উপজেলায় ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ওসমান গনি ওরফে গামা (৩৫) নামে বিএনপির এক কর্মী। ২২ আগস্ট ২০১২ বেড়া উপজেলার কৈটোলা গ্রামে আ’লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে মির্জা ইদান নামের এক যুবদল কর্মী নিহত হয়। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ পাবনা শহরে দিবালোকে বিএনপির দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি মিছিলকে কেন্দ্র করে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় মিলন নামের এক যুবদল কর্মী। ১ জুলাই ২০১৩ শহরে কাচাড়িপাড়ায় প্রতিপক্ষের গুলিতে মামুনুর রশীদ ও টিপু নামে ২যুবলীগকর্মী মারা যায়। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুবার্ষিকি উপলক্ষে আওয়ামীলীগ আয়োজিত শোক মিছিলে পাবনা শহরে ঝালাইপট্টি এলাকায় এক যুবলীগকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসব চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডে অধিকাংশেরই কোন চার্জশীট বা বিচারকাজ শুরু হয়নি। এসব হত্যাকান্ড ছাড়াও গত ৫বছরে অসংখ্য হামলা, সংঘর্ষ, ছিনতাই, অপহরণ, ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় জেলার সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ দিন দিন বাড়লেও পরিস্থিতি উন্নতিতে নেই কোনো কর্যকরী পদক্ষেপ। এ বিষয়ে পাবনার পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন আহমেদ জানান, হত্যাকান্ডগুলোর অধিকাংশই পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও পূর্ব বিরোধের জের ও জমি-জমা সংক্রানত্ম কারণে ঘটছে। জেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সর্বদা সাধ্যমতো কাজ করছে। পুলিশের একার পক্ষে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বন্ধ করা সম্ভব নয় মত ব্যক্ত করে তিনি বলেন,পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে হবে।

কলিট তালুকদার/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here