পাবনায় পদ্মা-যমুনার পানি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি

ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  দেশের অন্যান্য এলাকার মতো পাবনায় পদ্মা-যমুনার পানি আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেকোনো সময় পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ইতোমধ্যে যমুনার পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই। এ অবস্থায় নদী তীরবর্তী এলাকার সবজিক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন বলেন, ‘পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে রোববার দুপুর ১২টায় পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার। যুমনা নদীর নগরবাড়ি পয়েন্টে ৯ দশমিক ৩ সেন্টিমিটার অতিক্রম করছে।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিনই পদ্মা ও যুমনার বিভিন্ন পয়েন্টে ১-২ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ কয়েক দিনের তুলনায় পদ্মা, চলনবিল, বড়াল, গুমানি, চিকনাইসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ঈশ্বরদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপৎসীমার মাত্র ১ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নগরবাড়ি পয়েন্টে ০ দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে পাবনার দুই পয়েন্টেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা ও যমুনা নদীতে আশঙ্কাজনকভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তীরবর্তী নিচু এলাকাতে কয়েক দিনের মধ্যে উঠতি নানা ধরনের সবজি ও ফসলের ক্ষেত ডুবে যেতে পারে। অনেকেই ইতোমধ্যে বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। নদীপাড়ের বাসিন্দারা উৎকণ্ঠা আর দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছে।

ঈশ্বরদীর সাঁড়াঘাট, চরকুড়লিয়া, বেড়ার নতুন ভারেঙ্গা ইউনিয়নের হাজারো বাসিন্দা নির্ঘুম দিন কাটাচ্ছেন। পূর্ব শ্রীকণ্ঠদিয়া, চরশাফুল্লা, সাঁথিয়ার নাগডেমরা ইউনিয়ন, সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় নদীভাঙনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের খলিলপুর, চরখলিলপুর এবং কালিকাপুর এলাকা, পাবনা সদরের আশুতোষপুর, বলরামপুর, বেড়ার রূপপুর ও মাসুমদিয়া ইউনিয়নের কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করার উপক্রম হয়েছে।

ঈশ্বরদীর সাঁড়া ইউনিয়নের সাঁড়াঘাট এলাকার বাসিন্দা ফজলুল হক মাস্টার বলেন, পদ্মার পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়াতে আমরা নদীপাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছি। সেইসঙ্গে আমাদের উঠতি সবজি ক্ষেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। সরকারের পক্ষ থেকে এখন থেকেই সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করার আহ্বান জানান তিনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাবনা কার্যালয়ের নিবাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন বলেন, পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ মিটার নিচে অবস্থান করছে। তবে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। বেড়ার নগরবাড়ি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এখনো আতঙ্কিত হওয়া বা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ার মতো কিছু হয়নি। ইতোমধ্যে নদীভাঙন এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। বন্যা দেখা দিলে বা নদীভাঙন শুরু হলে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্ধ দেওয়া হবে।

পাবনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দপ্তরের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা বন্যার কবলে পড়লেও আমাদের জেলাতে এখন পর্যন্ত কোথায় বন্যার প্রভাব দেখা যায়নি। পদ্মা যমুনাতে পানি বৃদ্ধি পেলেও কোথাও তেমন বন্যা হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বন্যা হলেও তেমন ক্ষয়ক্ষতি যাতে না হয়, সেজন্য জেলা ত্রাণ দপ্তর সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে রাখা হয়েছে। বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here