মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::
খুলনার পাইকগাছায় পাখি শিকারের অপরাধে এক যুবককে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। দন্ড প্রাপ্ত যুবক হাসিব রহমান (৩২) উপজেলার গজালিয়া গ্রামের কুদ্দস মোড়লের ছেলে। পাখি শিকারী হাসিব মঙ্গলবার সকালে গজালিয়া এলাকায় এয়ারগান দিয়ে
পাখি শিকার করছিল।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনায় উপজেলা আনসার ও ভিডিপি প্রশিক্ষক আলতাফ হোসেন হাসিবকে এয়ারগান ও এক’শ রাউন্ড সীসার গুলিসহ আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে শিকার করা বিভিন্ন প্রজাতির ৯টি পাখি উদ্ধার করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও মমতাজ বেগম পাখি শিকারের অপরাধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২ এর আওতায় আটক হাসিব কে ৭দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। উল্লেখ গত কয়েক দিন বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রযুক্তির ফাঁদে ফেলে অতিথি পাখি শিকারের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অবশেষে টনক নড়ে সংশ্লিষ্ট প্রসাশনের। তবে অন্য শিকারীদের আটক এবং আইনগব ব্যবস্থা নিতে পরিবেশবাদীরা জোর দাবী জানান।
উপজেলার বিভিন্ন জলাশয় ও চিংড়িঘের থেকে সংঘবদ্ধ শিকারী চক্র মোবাইলে বিদেশী অতিথি পাখির ডাকের অডিও শুনিয়ে প্রলুব্ধ করে নীচে নামিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রতিদিন রাতে শিকার করছে অতিথি পাখি। পাখি নিধন বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের যোগসাজশের অভিযোগ অনেকের। শীতের শুরুতেই পৃথিবীর বিভিন্ন শীত প্রধান দেশগুলো থেকে কিছুটা উষ্ণতার আশায় হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে দল বেঁধে বাংলাদেশের বিলাঞ্চলে আসে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি। তবে শিকারী চক্রের নিয়মিত অত্যাচার ও অভয়াশ্রমের অভাবে এক প্রকার অবাধে প্রতিনিয়ত অতিথি পাখি নিধন হচ্ছে।
উপজেলার সোলাদানা, গড়উখালী, চাঁদখালী বয়রা, কচুবুনিয়া, বাসাখালী, বাইসারাবাদ, তেঁতুলতলা, লতা, উলুবুনিয়া, পুটিমারী, শংকরদানা, হানিমুনকিয়া, বাহিরবুনিয়া, দেলুটি, সোলাদানা, কপিলমুনি, তালতলা, গোয়ালবাথান, শ্রীফলতলা, প্রতাপকাটি, শামুকপোতা, চকবগুড়া, খড়িয়া, অকাইবাসী, ঠাকুনবাড়ী, আমিরপুর, বাইনবাড়ীয়া, কুমখালী ও পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের রয়েছে। প্রজাতি ভেদে সকাল অথবা সন্ধ্যা নামতেই বিভিন্ন প্রজাতির এসব অতিথি পাখিরা দল বেঁধে খাদ্য সংগ্রহে নেমে পড়ে।
এ সময় সংশ্লিষ্ট ঘের বা জলাশয়ের কর্মচারীদের যোগসাজশে অথবা শিকারী চক্র আগে থেকেই ওৎ পেতে থাকে পাখি শিকারে। শিকারী চক্র প্রতিদিন ফাঁদ ও বিষ টোপ দিয়ে বিভিন্ন জাতের পাখি শিকার করতো। তবে এখন এসব পাখি শিকারে শিকারী চক্র প্রযুক্তির সহায়তায় সহজেই বোকা বানাচ্ছে এসব পাখিদের। গুগল থেকে সার্চ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাক ডাউনলোড করছে স্ব-স্ব মোবাইলে। এরপর রাতের আকাশে পাখিদের আনাগোনা দেখে অ্যামপ্লিফায়ার ও মোবাইলে ওইসব পাখির ডাক বাজানো শুরু করছে। এরপর পাখিরা ওই টোন শুনে মনে করছে তার অন্যান্য সাথীরা সেখানে নিরাপদে অবস্থান করছে। আর শিকারীদের এসব নিত্য নতুন প্রতারণায় প্রলুব্ধ হয়ে নীচে নামতেই জড়িয়ে পড়ছে পেতে রাখা ফাঁদে। এভাবে প্রতিদিন শিকার হচ্ছে অসংখ্য অতিথি পাখি। পাইকগাছা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাড. প্রশান্ত কুমার মন্ডল বলেন, পাখি শিকার বন্ধে মনিটরিং সহ প্রশাসনীক ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।