পরীক্ষার মধ্যেও কোচিং বাণিজ্য চলছেমহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :: সারাদেশে কোচিং বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। কিন্তু নির্দেশ না মেনে অমান্য করে খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনি চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। উপজেলার কপিলমুনি প্রায় বিশটি ছোট-বড় কোচিং সেন্টার রয়েছে। যার বেশিরভাগই আইন অমান্য করে পরিচালিত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানান, কোচিং না করলে পরীক্ষা হলে সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে না। তাছাড়া বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পাঠদান প্রক্রিয়া নাজুক, তাই বাধ্য হয়ে প্রতি মাসে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা দিয়ে কোচিং করছে তারা।

পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে দেশের সব ধরনের কোচিং বন্ধের নির্দেশনা দেন শিক্ষামন্ত্রী। কোচিং-বাণিজ্য বন্ধে শাস্তির বিধানসহ নীতিমালা প্রণয়নের পরও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। কিছু শিক্ষক সাইনবোর্ডের আড়ালে অবাধে এই ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। দেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে কোচিং সেন্টার গুলোতে অভিযান পরিচালিত হলে পাইকগাছাতে তেমনটি পরিলক্ষিত হয়নি।

ফলে উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভীতিহীন ভাবে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক এখনও প্রাইভেট পড়াচ্ছেন ও কোচিং করাচ্ছেন। কপিলমুনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে এবং শিক্ষক-অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

তবে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসন, দুদক, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কোচিং ও প্রাইভেট সাথে জড়িত কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক দেব্রত আইচ, সজল কান্তি সরকার, সজল রায়, বিরেন্দ্র কর্মকার, প্রকাশ, দিবেন্দু, বিকাশ, আমিনুর সরদার, উজ্জ্বল বিশ্বাস ও সুজিত।

কপিলমুনি মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক খলিল, বিশ্বজিত দে, মিন্টু সাহা, কার্তিক, সাইফুল ও নিহার। কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান। কপিলমুনি বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষক পলাশ দাশ। কপিলমুনি কলেজ ও পাল পাড়া রোডে বাসা বাড়িতে অধিকাংশ কোচিং সেন্টার গুলো পরিচালিত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে কোনো কোনো শিক্ষক ছুটি শেষে বিদ্যালয়ের শ্রেণী কক্ষে প্রাইভেট পড়ান। ওই সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ শ্রেণী কক্ষ ভাড়া বাবদ একটি নিদিষ্ট অর্থ পকেটস্থ করেন বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।

তবে কোচিং বাণিজ্যে এ সব শিক্ষকদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে কপিলমুনি মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইরেজী শিক্ষক খলিল। সে জাফর আওলিয়া মাজার সংলগ্ন নিজ বহুতল ভবনে কয়েকটি আলাদা ব্যাচে ভোর ৬টা হতে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় ৩শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী পড়ান।

২০১২ সালের ২০ জুন কোচিং-বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতষ্ঠানের শিক্ষকরা নিজ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের কোচিং করাতে বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। তবে তারা নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের অনুমতি নেওয়া সাপেক্ষে অন্য স্কুল, কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে নিজ বাসায় পড়াতে পারবেন। তবে কোনও কোচিং সেন্টারের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে কোচিং-বাণিজ্য পরিচালনা করা যাবে না।

বেশ কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রী নাম না প্রকাশ শর্তে জানান ক্লাসের বাইরে কোচিং সেন্টারে না পড়লে ফেল করিয়ে দেওয়া সহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেওয়া হয়। কয়েকজন অভিভাবক জানান কষ্ট হলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই ছেলে মেয়েদের স্কুলের শিক্ষকদের কাছে কোচিং করাতে হচ্ছে।

কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হরেকৃষ্ণ দাশ জানান, কোচিং চালনো যাবে না বলে জানি। কোনো শিক্ষক অনুমতি নিছেন কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, অনুমতি দেওয়া বা বন্ধে করতে পারি না। কপিলমুনি মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার শম্পা জানান এসএসসি পরীক্ষা চলাকালী কোচিং বন্ধের অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনা পায়নি, টিভির পর্দায় জেনেছি। বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত এমন প্রশ্নে বলেন বিষয়টি আমি দেখছি।

কপিলমুনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরজ্জামানকে ফোনে পাওয়া যায়নি। কপিলমুনি বিনোদ বিহারী শিশু বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. মুজিবর রহমান জানান আন্ডার ফাইভ ক্লাস এ আওতায় পড়ে না। আমার অনুমতি নিয়ে ছুটির পর প্রাইভেট পড়ান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন জানান মৌখিকভাবে সকল বিদ্যালয়ের প্রধানকে জানানো হয়েছে তার পর যদি কোনো শিক্ষক কোচিং অব্যাহত রাখেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকা নিয়ে কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে (রবিবার বিকাল ৩টা ১৪মিনিট) ফোন করা হলেও পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফখরুল হাসানকে পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here