শিপুফরাজী, চরফ্যাশন প্রতিনিধি:: উপজেলার চরাল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাধে আশ্রয় নেওয়া অসহায় ছিন্ন মুল মানুষ গুলির কাজ করলে খাবার জোটে, আর না করলে আধপেটে থাকতে হয় । তার উপর শীত বস্ত্রের অভাব। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশায় জনজীবন স্থবির। ঠাণ্ডা বাতাসের সাথে সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। এ কারনে শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্রমশ অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে আবহাওয়ার আচরণ।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলেছে। জানা নেই আদৌ রান্না হবে কি না। তরকারি তো দূরের কথা, এ বেলার দু’মুঠো চালও ঘরে নেই। দিনের আয়ে দিন চলে। কাজ না পেলে ধারদেনার বোঝা বাড়ে। তাই বাধ্য হয়ে কেউ দুবেলা কিংবা এক বেলা খেয়ে দিন কাটায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে এমন সংকট, দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষগুলোর নিত্যদিনের সঙ্গী। কষ্টের দিনগুলো কিছুতেই শেষ হতে চায় না এদের। কাজ করলে খাবার জোটে, আর না করলে আধপেটে থাকতে হয় চরফ্যাশনের চরাল আর বেড়িবাঁধের মানুষগুলোর।

উপজেলার চরমনোহর, চরলিউলিন, চর মোতাহার, ধলারচর, ঢালচর, চরপাতিলা, কলাতলীর চর, চরনিজাম, চর কুকরি মুকরি, শিকদারের চর, জাহান পুর, চর হাছিনা,  চরমাদ্রাজ, চর আশ্রাফ আলম, ঢাল চর, পাতিলা, চর ফার“কি, চর হাছিনা, চর বদনা, মেঘবাসান, চর আফজাল, চর নাজিম উদ্দিন,  চর কলাতলী, সোনার  চরের মতো এমন আরও অনেক চরের মেঠোপথ পাড়ি দিতে হয় হেঁটে। নেই কোনো যানবাহন। তবু এখানে জীবন চলে জীবনের প্রয়োজনে। এখানে দিনের পর দিন বেঁচে থাকবে অভাবী মানুষের শীতবস্ত্র , অনাহার আর অর্ধাহারের গল্প।

ঢালচরের মোমেনা বেগমের ঝুপড়ি ঘরে উত্তরা বাতাসের শীতল প্রবাহ। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। স্বামী নেই। থাকেন মেয়ের জামাইয়ের সঙ্গে। নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর পর শীত নিবারণের জন্য আলাদা করে প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ থাকে না মোমেনার। চরপাতিলার নাসিমা বেগমের নিচু ঘরে মাথার ওপরে থাকা টিনের চালা দিয়ে ক্রমাগত ঝরে শিশিরের ফোঁটা। আবার কুকরিরচরের আবদুল মজিদের ঘরের সবগুলো কাঁথা একত্রিত করেও শীত নিবারণ করতে পারছেন না। এভাবেই সমুদ্র তীরবর্তী উপকূলের‚ হাজারো মানুষ তীব্র শীতে কাতর। তীব্র শীতে এই সময় চরফ্যাশনের চরা ল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ী বাধে আশ্রয় কিন্তু কিছু মানুষের ঘুম শেষ হয় আজানের শব্দে। বাকি রাতটুকু তারা জেগে রয় স্নিগ্ধ রোদেলা সকালের অপেক্ষায়। দীর্ঘ কষ্টের রাতটার চেয়েও রোদে পিঠ এলিয়ে দেয়া সকালটাই যেন তাদের কাছে অনেক বেশি আরামদায়ক।

উপজেলার বকসীঘাটের খেয়া নৌকার মাঝি মো জামালের । দিনভর তেঁতুলিয়ার বুকে খেয়া পারাপারে যাত্রীর অপেক্ষায় সময় কাটে তার। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে যে যাত্রীর দেখা মেলে তা পার করেই সংসার চলে। বকসীঘাট ওপারে বাংলাবাজার। বাংলাবাজার বেড়িবাঁধের ওপরে একটি দোকানের সামনে মানুষের আড্ডা চলছে। তাদের সেই আড্ডায় শামিল হতেই বেরিয়ে আসে আরও কিছু কষ্টের গল্প। কর্মহীন মানুষগুলো কেউ ছোট ব্যবসা করে, কেউ নৌকা চালিয়ে, কেউ মাছ ধরে, কেউ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। শীত মৌসুমে এলাকার মানুষের কষ্টটা আরও বেশি। এক বেলা ভাত জোগাড়ের কষ্ট কতটা তীব্র এই এলাকার মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পায়।

 

এদিকে বেসরকারি এনজিও পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ) সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো কামালউদ্দিন বলেন, পরিবার উন্নয়ন সংস্থা (এফডিএ)  কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চরফ্যাশনের বিভিন্ন চরে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় তারা প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দিয়ে ৫০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এছাড়া ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের আওতায় চরা লের প্রান্তিক মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণে লক্ষে ৬০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের জীবন মানোন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তারা কাজ করে যাবে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান এই কর্মকর্তা।

চরফ্যাশন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা জানান, চরালের মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ভিজিডি প্রকল্প, ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং ঋণদান কর্মসূচি রয়েছে। এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্র স্ব আয়ের মনোভাব গড়ে তুলছে। প্রতিটি এলাকায় এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here