স্টাফ রিপোর্টার :: বাংলাদেশ ন্যানো সোসাইটির উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভাবনা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় জুম এপের মাধ্যমে উক্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম। বাংলাদেশ ন্যানো সোসাইটির সভাপতি, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আল- নকীব চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.লুৎফুল হাসান। মূখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সায়েন্টিস্ট এন্ড ডিরেক্টর ড.সেঁজুতি সাহা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ন্যানো সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ও এআইউবির সহযোগী অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ মাহবুব রব্বানী।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইবিজিই এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্লান্ট বায়োটেকনোলজি ডিসিপ্লিন এর হেড অধ্যাপক ড. তোফাজ্জল ইসলাম, কৃষি ও চিকিৎসা বিজ্ঞানে ন্যানো টেকনোলজির ব্যবহার, বাংলাদেশে ন্যানো টেকনোলজি ইনস্টিটিউট তৈরির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ন্যানো টেকনোলজির বেশিরভাগ সুবিধা হয়তো ভবিষ্যতের কয়েক দশকের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে কিন্তু বর্তমানেও এই প্রযুক্তি নানান ভাবে আমাদের পৃথিবীকে পরিবর্তিত করতে সাহায্য করছে। আপনি হয়তো ভাবছেন ন্যানো টেকনোলজি একে বারে অসাধারণ জিনিষ এবং এটি সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি—কারণ “টেকনোলজি” বলতে আমরা মানুষের তৈরি টেকনিককেই মনে করি। কিন্তু আমাদের জীবন নিজে থেকেই ন্যানো টেকনোলজির এক বিরাট উদাহরণ। আমাদের শরীরে প্রোটিন, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, কোষ ইত্যাদি ন্যানো টেকনোলজির সূত্রেই কাজ করে।

মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে ড. সেঁজুতি সাহা বলেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে শিক্ষার সঙ্গে গবেষণার বন্ধন সৃষ্টি করা দরকার বলে বঙ্গবন্ধু মনে করতেন। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সে দেশে পাঠিয়ে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও গবেষণার অভিজ্ঞতাকে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করেছেন, যার সুফল আজও আমাদের দেশ পাচ্ছে। আগে ৭ কোটি মানুষের খাবার যোগাতে আমাদের হিমশিম খেতে হতো আর এখন এত মানুষ হওয়া স্বত্ত্বেও আমাদের খাদ্য উদ্বুদ্ধ থাকছে। আমরা এখন বিদেশে খাদ্য রপ্তানি করতে পারছি। কি চমৎকার, কি আশ্চর্যজনকভাবে আমরা কত দ্রুত এগিয়ে গেছি। মাঝেমাঝে আমি অবাক হয়ে যাই, এ যুগে এসে আমরা যেখানে এখনো নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কল্পনা করতে পারিনা সেখানে বঙ্গবন্ধু কিভাবে এতকিছু কল্পনা করতেন। তার মানে হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-ভাবনা কতটা সুদূর প্রসারী ছিলো।
বঙ্গবন্ধু জানতেন, আমাদের মেধাবী তরুণদের গবেষণায় সম্পৃক্ত করতে পারলে যে কোনো অসাধ্যকে জয় করা সম্ভব। সেজন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন করেন। তবে পরমাণু শক্তি কমিশন গঠন করার আগে বঙ্গবন্ধু গবেষণামনস্ক দক্ষ জনগোষ্ঠী গঠনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা যে একটি দেশের মূল শক্তি হিসেবে কাজ করে, তা বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও ভাবনায় প্রভাব ফেলেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানবিক গবেষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিনির্ভর গবেষণার যে নিবিড় মেলবন্ধন দরকার, তা বঙ্গবন্ধু আমাদের শিখিয়েছেন।

বিশেষ অতিথির উপাচার্য অধ্যাপক ড.লুৎফুল হাসান বলেন, বঙ্গবন্ধু সব সময়ই ভাবতেন, এদেশকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, এদেশের মানুষকে কিভাবে ভালো রাখা যায়। সে কারনে তিনি কৃষিকে খুব গুরত্ব দিতেন। আর এই কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ন্যানো প্রযুক্তি একটি কার্যকর ও সম্ভাবনাময় কৌশল হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। ন্যানো কণার ব্যবহার উদ্ভিদের পুষ্টির উন্নয়ন, সার ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি, ফসলে উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পানি ব্যবস্থাপনা, ফসলের রোগ নির্ণয়, বালাই দমন, খাদ্য মোড়কীকরণ এক কথায় কৃষির উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় আমরা ব্যাপকভাবে বলেছি যে, চতুর্থ বিপ্লবকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমাদের প্রস্ততি প্রয়োজন, অনেক গবেষণা প্রয়োজন, বিজ্ঞানীদের প্রণোদনা প্রয়োজন।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দেশে চতুর্থ বিল্পব শুরু হতে যাচ্ছে। যে সময়টা অনেক দেশে পঞ্চম বিপ্লবের কথা বলা হচ্ছে। এখন এমন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। যেখানে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্যরকম একটা উন্নয়ন ঘটতে যাচ্ছে। এটিকে আমাদের ধারণ করতে হবে, অবগাহন করতে করতে হবে এবং আমাদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আপনারা জানেন, এইটা সেই সময় যখন আমরা আর্থ-সামাজিকভাবে অনেক উন্নতি করেছি, দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মাথাপিছু আয়ে, প্রবৃদ্ধি অর্জনে, নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষায়নে আমরা এখন ১ নম্বরে চলে গেছি এবং মাতৃ মৃত্যুহারও সবচেয়ে কম এখন আমাদের বাংলাদেশে। গত ১ যুগে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি করেছে, বিশ্বে অনেক এগিয়ে গেছে। আমি এটাকে বলি পরিকল্পনার যুগ, পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সোনালি যুগ। আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা তৈরি করেছি এবং মোটাদাগে সেভাবেই পরিকল্পনা গুলো বাস্তবায়িত হয়েছে। একটি সুপরিকল্পনা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে সম্পদের বণ্টন এবং বাজেটিং আমরা সেভাবেই করেছি এবং দ্রুত আর্থসামাজিকভাবে এগিয়ে গিয়েছি। দ্রুত প্রবৃদ্ধির কারণ হলো উপযুক্ত পরিকল্পনা আমাদের হাতে থাকা। উপযুক্ত দূর লক্ষ্য আমাদের সামনে থাকা। এ প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা প্রণয়নে আমি নেতৃত্ব দিয়েছি। শুধু ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নয় আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ এবং ভিশন ২০৪১ এর ভিত্তিতে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করেছি। আগামী ৪১ সালের মধ্যে আমাদের দেশ উন্নত দেশ হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হবো। আমাদের সুনির্দিষ্ট পথচিত্র তৈরি করে রেখেছি। ক্রমান্বয়ে আমরা একটা উন্নত দেশের দিকে যাবো। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।

ড.শামসুল আলম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রদ্ধাভরে কে স্মরণ করছি, যার সুপরিকল্পিত উদ্যোগ ও সূদুর প্রসারী চিন্তা-ভাবনার কারনে আজকে আমরা এতদূর এগিয়ে যেতে পেরেছি। আজ কৃষির যতটুকুই উন্নয়ন, তার ভিত রচনা করে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কৃষিতে ব্যাপক রুপান্তর ঘটাতে চেয়েছিলেন তিনি।  স্বাধীনতার পরে যখন কোষাগার ছিলো শূন্য, কৃষিতে ছিলো নাজুক অবস্থা, সে সময়েই কৃষকের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা থেকে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন কৃষি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন।  মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও কৃষিকে বিশেষ গুরত্বের সাথে দেখেন। এখনো কৃষি বিষয়ে কোন প্রজেক্ট তার হাতে গেলে তিনি সেটি কখনোই ফিরিয়ে দেন না। এমনকি অন্যান্য প্রজেক্টের টাকা কম-বেশি হলেও তিনি কৃষি,চিকিৎসা গবেষণার প্রকল্পের টাকা বিন্দুমাত্র কমান না। আমরা চাই, আপনারা ভালো মানের গবেষণা, প্রকল্প আমাদের দেন। টাকা-পয়সা নিয়ে আপনাদেরকে ভাবতে হবে না। যত টাকা লাগে আমরা দিতে প্রস্তত আছি। গবেষণা খাতকে এগিয়ে নিতে গত বাজেটে ১০০ কোটি টাকা গবেষণা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বিশেষ করে চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যক্ষেত্রে গবেষণা কাজের জন্য আমাদের বাধা নেই। আপনারা কাজ করেন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করার জন্য সব সময়ই প্রস্তুত আছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ন্যানোটেকনোলজির কার্যকরী চর্চা ও শিল্পে প্রয়োগ শুরু হওয়া দরকার। এজন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন উন্নত গবেষণা ও সরকারি উদ্যোগ।দেশের বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিগণকে ন্যানোটেকনোলজি বিষয়ে সংগঠিত হয়ে এর চর্চা ও শিল্পে প্রয়োগের পন্থা উদ্ভাবনের জন্য আহ্বান জানান তিনি।

উল্লেখ্য যে, ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া সহ দেশ-বিদেশের ১৭৩ জন জ্ঞানী-গুনী ব্যক্তিবর্গ সংযুক্ত হয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here