মুহাম্মদ রহমত উল্যাহ, নোয়াখালী থেকে

নোয়াখালীর কবিরহাটের ২নং সুন্দলপুর ইউনিয়নের মালীপাড়া গ্রামের আরিফ মাষ্টার বাড়ীর মৃত পুলিশ কনেস্টবল ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর নবীর পরিবারের উপর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২৪ ডিসেম্বর হামলা চালায়। এত ঘনাস’লে মারাত্বক ভাবে আহত হয় মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জাহানারা বেগম (৬০), ছোট ছেলে মিজানুর রহমান ( ২৩), মেয়ে তাসলিমা আক্তার (২৬), পুত্রবধূ নাজু ( ২৫)। সন্ত্রীরা মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জাহানারা, মেয়ে তাসলিমা ও পূত্রবধূ  নাজুর শীলতা হানি ঘটায়।

এ ঘটনায় জাহানারা বাদী হয়ে বুধবার নোয়াখালী সিনিয়র বিচারিক আদালতে ২১ জন কে আসামী করে একটি পিটিশন মামলা করেন। মামলা নং- ৯৪৬। মামলা ও মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২৪ ডিসেম্বর দুপুরে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী ও ছেলে মিজান ঘরে পাশে মুক্তিযোদ্ধার কবর সংলগ্ন সন্ত্রাসীদের দখলে থাকা প্রায় ১৯ ডিং সম্পত্তিতে কাঁটা দিতে যায়। এ সময় ঐ সম্পত্তিতে জোর করে দখলে থাকা সন্ত্রাসীরা বাধা প্রদান করে। জাহানারা তাদের কে মুক্তিযোদ্ধার কবরের পাশে থাকা জমি ছেড়ে দিতে বললে সন্ত্রাসীরা কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে ৮-১০ জনের একদল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জাহানারা কে কোপাতে থাকে। মাকে বাঁচাতে মিজান এগিয়ে আসলে মিজানকে ও সন্ত্রাসীরা কোপায়। এসময় সন্ত্রাসীরা মোবাইল ফোনে খবর দিয়ে আর ও ১৫০/২০০ জন কে ঘনাস’লে জমায়েত করে। এতে জোট বেঁধে তারা মুক্তিযোদ্ধার ঘরকে কুপিয়ে তছনছ করে ফেলে। ঘরে থাকা মেয়ে, পুত্রবধূকে যুবক সন্ত্রাসী ও একটি দলের পরিচয়ে মারধর ও শীলতা হানি ঘটায়। এতে ক্ষান- হয়নি সন্ত্রাসীরা। তারা মুক্তিযোদ্ধার ঘরে থাকা ৪টি বিদেশী ব্রিফকেস, ৮ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৮০ হাজার টাকা, ১টি নকিয়া ৭৭৩ মোবাইল, ৪০ মণ ধান, ৩০ হাজার টাকার কাপড়-চোপড় সহ প্রায় ৬ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এসময় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে বাচাঁতে প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে তাদের কয়েক জনকে ও পিটিয়ে আহত করলে পরে আর কেউ ভয়ে এগিয়ে আসেনি। খবর পেয়ে কবিরহাট থানা পুলিশ ঘটনাস’লে আসলে সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপসি’তি টের পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। মারাত্বক ভাবে আহত অবস’ায় মুক্তিযোদ্ধার ছোট ছেলে মিজান ও তার মাকে প্রতিবেশীরা নোয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী জাহানারা জানান, আমার স্বামী জীবন বাজি রেখে এ দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধের পর পুলিশ বাহিনীতে কর্তব্যরত অবস’ায় ১৯৯৬ সালে একটি অপারেশনে চাঁদপুর জেলার শাহরস-ী থানায় সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন। আমার স্বামী নিহত হওয়ার পর থেকে পাশ্ববর্তী সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীর কবরের পাশে জোর করে রাতের আঁধারে ১৯ ডিং সম্পত্তি দখল করে ঘর তুলে নেয়। আমার সন-ানরা ছোট থাকায় আমি ঐ সময় কিছুই করতে পারিনি। প্রতিবাদ জানালে বিভিন্ন সময় আমার ও আমার ছেলেমেয়ের উপর ভাড়াটে সন্ত্রাসী দ্বারা মারধর ও অত্যাচার করত। এ বিজয়ের মাসে আমার স্বামীর কবর কে কাঁটা দিয়ে ঘেরাও ও কাঁটা তারের বেড়া দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা এ রকম তান্ডব চালায়। তিনি কান্না জড়ি কন্ঠে বলেন, যে স্বামী জীবন বাজি রেখে এ দেশ স্বাধীন করেছেন, তাঁর পরিবার ও সামান্য কবরের জায়গার উপর এত অত্যাচার ? তিনি আর ও জানান, সন্ত্রাসীরা দিনে রাতে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। না হয় আমার পুরো পরিবারকে ও শেষ করে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। প্রতিবেশী বৃদ্ধ লুৎফুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এক জন জন প্রতিনিধি মেম্বারের নের্তত্বে ২০০/২৫০ জন সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে পুরো পরিবারকে নিহিুত করে দেয়। এছাড়া ও এত বছর ঐ সন্ত্রাসীদের মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর অত্যাচারের বর্ণনা দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান ছায়েদুল হক জানান, ঘটনা শোনার সাথে সাথে আমি ঘটনাস’লে ছুটে যাই এবং সব দেখে আশ্চর্য হয়ে যাই। আমি আমার পরিষদের মাধ্যমে উভয় পক্ষকে বসে মীমাংসা করার পরামর্শ দিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here