নিরাপদ পানির কারণে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছেস্টাফ রিপোর্টার :: বাংলাদেশের নিরাপদ পানির ব্যহার আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই কারনেই দেশেল গড় আয়ুর হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। এসডিজি,এমডিজি ইত্যাদি না থাকলেও আমাদের সাধারণ জনগণের উন্নতির লক্ষ্যে নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নিয়ে কাজ করা লাগত।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দৈনিক আমাদের সময় অফিসে ডর্‌প ও আমাদের সময়ের যৌথ আয়োজনে ‘‘২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রত্যাশা ও করণীয়: এসডিজি-৬ এবং ৮ ম পঞ্চমবার্ষিকী পরিকল্পনা’’ শীর্ষক প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একথা বলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন ধরনের এনজিও নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে বিধায় সরকার এইখাতে দ্রুত সাফল্য লাভ করছে। অনেক দিক থেকে ভাল অবস্থায় রয়েছি আমরা। বর্তমানে সরকার এই বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব সহকারে দেখছে।

বর্তমানে গ্রামকে শহরে পরিনত করার বিষয়ে তিনি বলেন, শহরের সকল উপাদান- বিদ্যুৎ, নিরাপদ পানি, সড়কসহ সকল সুবিধা ইতোমধ্যেই গ্রামের লোকের পেয়ে গিয়েছে। যার কারনে গ্রামকে শহরে পরিণত করতে খুব বেশি সমস্যা পেতে হবে না।

দৈনিক আমাদের সময়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর ও ডর্‌প এর পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণের পরিচালক যোবায়ের হাসান। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ সকলের জন্য নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ও সকলে জীবাণুমুক্ত জীবনের পাশাপাশি নারী স্বাসে’্য প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আগামী বাজেট নির্বাচন পরবর্তী প্রথম বাজেট হতে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১ এর পাশাপাশি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন করা হবে। পানি,পয়ঃনিষ্কাশন ও জীবাণুমুক্ত (ওয়াশ) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ওয়াশ প্রকল্পের বাস্তবায়নে নানা ধরনের কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন স’াপনে যথেষ্ট ইতিবাচক।

স’ানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ‘ওয়াশ’ সংক্রান্ত এসডিজির ৬.১,৬.২,৬ এ ও ৬ বি নিয়ে কাজ করার বেশি সুযোগ পাবে। বাজেটে ‘ওয়াশ’ প্রকল্পে আলাদা বরাদ্দ নিরুপন করা কঠিন। নিরাপদ পানি সরবারহ হলে পানিবাহিত রোগ কমে যায়। এছাড়া মৃত্যুহারেও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৮৭ শতাংশ নিরাপদ পানি ব্যবহার করে। যা দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ লোক এখনও নিরাপদ পানি ব্যবহার করছে না। ২০১৫ সালে ইউনিসেফ ও ডব্লিওএইচও এর মতে ৬১ শতাংশ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবহার করে। তবে বিবিএসের মতে এর সংখ্যা ৭৭ শতাংশ। তবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কমপক্ষ্যে ৩ কোটি ২০ লাখ লোক নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবহার করছে না।

নিরাপদ পানির কারণে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়েছেএতে আরও বলা হয়, ‘ওয়াশের’ বাজেট ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে যা হবে ৪ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা ও ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৫ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা হবে। কিন’ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স’ানীয় সরকারের মোট ১৫.৩২ শতাংশ ‘ওয়াশ’ খাতে বরাদ্দ ছিল। কিন’ ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা কমে দাড়াবে ১৫.৩০ শতাংশ। আর আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫.৩১ শতাংশ হবে।

তবে ‘ওয়াশ’ প্রকল্পে ওয়াসার উন্নয়ন বাজেটে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৫.৭৪ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৭৬.৬২ শতাংশ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৭৬.৬২ শতাংশ হবে। যার ফলে যে সকল প্রত্যন্ত অঞ্চল যেগুলো ওয়াসার আওতায় নেই সে এলাকায় উন্নয়নরে সম্ভাবনা কম থেকে যায়। ‘ওয়াশ’ খাতে মাথাপিছু ২৭৪ টাকা ব্যয় হবে মাত্র।

সভাপতির বক্তব্যে দৈনিক আমাদের সময়ের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার বলেন, উন্নয়শীল দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ এশিয়ার প্রথম পর্যায়ে আছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ শতাংশ ধরা হয়েছে যেখানে ভারতে এর প্রবৃদ্ধি ৭.৫ শতাংশ। কিন্তু এরপরও আমাদের বাজেট বাস্তবায়ন এখনও কাঙ্ক্ষিত আকারে হয়নি। আমরা অনেক বড় বাজেট দিচ্ছি। কিন’ বাস্তবায়নে অনেক গাফলতি রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘ওয়াশ’ বাজেটের বরাদ্দে ৮৩.৭২ ভাগ শহর অঞ্চল আর গ্রাম অঞ্চলে ১৬.২৮ ভাগ, এটা খুবই হতাশার। আমরা নিরাপদ পানি পেয়েছি কিন’ সেটা কতটুকু নিরাপদ পানি সেই জানা প্রয়োজন। নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা সেদিকেও নজর রাখতে হবে।

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এসব বিষয়গুলোতে অনেক বেশি নজর দিতে হবে, অনেক বেশি খেয়াল করতে হবে। যাতে সকল সূচকে আমরা এগিয়ে যেতে পারি বলে জানান তিনি।

ডর্‌প চেয়ারম্যান আজহার আলী তালুকদার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাজেটে অনেক অর্থবরাদ্দ থাকলেও বছর শেষে ওই অর্থ উত্তোলন করা যায় না। এ পর্যন্ত অনেক অর্থ উত্তোলন করতে না পারায় বাতিল হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে। এই জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রচেষ্টা থাকতে হবে। আগামী বাজেটে এসব বিষয় সহজ করতে পরিকল্পনা মন্ত্রীর সহযোগিতা চান।
তিনি বলেন, যেসব বিষয় নিয়ে বাজেট প্রণীত হবে, তার অনেকটাই নিয়ে ডর্‌প কাজ করছে। যেমন-পানি, স্যানিটেশন। আজকের আলোচনার মধ্য দিয়ে আগামী বাজেট প্রণয়নে কিছুটা হলেও কাজে আসবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here