নারায়ণগঞ্জে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত শহীদ মিনারের ভেতরে জমায়েতে বিনা  উৎকানিতে পুলিশ তান্ডব চালিয়েছে। এতে ফোরামের আহ্বায়কসহ ২৫ জন আহত হয়েছে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ  রুটে বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাওয়ের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের নেতাকর্মীরা বুধবার সকাল ১১টায় শহরের চাষাঢ়া এলাকায় শহীদর মিনারে সমবেত হন।

সেখান থেকে শান্তিপুর্ণ মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় অভিমুখে রওনা দিলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বাধা অতিক্রম করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দিকে এগুতে চাইলে বিনা উৎকানিতে পুলিশ নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালায়। পরে ফোরামের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বেধে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ চাষাড়াস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভেতরে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ প্রথমে ৪ রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে বলে জানান সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুর কাদের। তিনি বলেন, সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করে। এসময় তাদেরকে মিছিল না করে নেতৃত্বস্থানীয়দের স্মারকলিপি নিয়ে ডিসি অফিসে যেতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু সে নিষেধ উপেক্ষা করে সংগঠনের লোকজন পুলিশের উপর চড়াও হলে তাদের লাঠিচার্জ করা হয়। প্রতিবাদে ফোরামের নেতাকর্মীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। সংঘর্ষে পুলিশের সহকারি উপ পরিদর্শক (এএসআই) তোবারক হোসেন আহত হয়েছে বলেও জানান ওসি।

সংঘর্ষে ও পুলিশ লাঠিচার্জ করলে যাত্রী অধিকার সংরড়্গণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বীসহ অননত্ম ২৫ আহত হন। তিনি বলেন, পুলিশের হামলায় আমি সহ নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান, গণফোরাম জেলা সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, বাসদ নেতা আবু নাঈম খান বিপস্নব, অমল আকাশ, হিমাংশু সাহা, ফারম্নক মহসিন সহ অনত্মত ২৫ জন আহত হয়েছে। পরে ফোরাম নেতৃবৃন্দ ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান ও তাদের দাবি বাস্তবায়নে ডিসির কাছে স্মারকলিপি দেয়।

জরুরী সংবাদ সম্মেলন

এদিকে ঘটনার পর বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে এক জরম্নরী সংবাদ সম্মেলন করেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নেতৃবৃন্দ। তারা সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশকে দায়ি করেন এবং এর পেছনে পরিবহন সেক্টর নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেট কিংবা সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা রাজাকার বাহিনীকে অভিযুক্ত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি সহ বিভিন্ন দাবিতে চাষাঢ়ায় শহীদ মিনারে সমাবেশ শেষে আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের জন্য রওনা দিলে কিন্তু পুলিশ কোন ধরনের উস্কানী ছাড়াই আমাদের মিছিলে থাকা লোকজনদের উপর চড়াও হয় এবং বেধড়ক লাঠিপেটা করে।

রাব্বি বলেন, স্বাধীনতার পরে তো দূরের কথা স্বাধীনতার আগেও এভাবে শহীদ মিনারের ভেতরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে কিংবা অধিকার আদায়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী করা লোকজনদের উপর হামলা করেনি।

রাব্বি বলেন, আমরা এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি প্রদান ও ডিসি অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান করি। সে সময়ে জেলার প্রধান গোয়েন্দা কর্মকর্তা (ডিআইওয়ান) মাঈনুর রহমান আমাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে।

রাব্বি বলেন, আগামী ৩১ জানুয়ারীর মধ্যে আমাদের উপর হামলা করা পুলিশ সদস্যদের শাস্তি প্রদান ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বর্ধিত বাস ভাড়া প্রত্যাহার করা না হলে হরতাল সহ লাগাতার কর্মসূচী পালন করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আহতদের উপস্থিত করা হয়। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত শ্রমিক নেতা মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, তরিকুল সুজন প্রমুখ।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/মাকসুদুর রহমান কামাল/নারায়ণগঞ্জ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here