ঢাকা: জেলা সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কোর কমিটি নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশনা পালনের জন্য বলা হয়েছে।

এ সংক্রান্ত নির্দেশনাসহ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব কাজী এমদাদুল হক ।

চিঠিতে কোর কমিটি গঠনের একটি ফরম্যাটও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন, পুলিশ সুপার (এসপি), র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ও এনএসআইয়ের জেলা পর্যায়ের প্রধানরা।

এছাড়াও কোস্ট গার্ডের স্থানীয় ইউনিট কমান্ডার এতে সদস্য হিসেবে থাকবেন। সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কোর কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে প্রতিটি জেলায় নাশকতা প্রতিরোধে যে কমিটি আছে তার অভিভাবক হিসেবে কাজ করবে এ কোর কমিটি।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে, উক্ত কমিটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে বিভিন্ন সূত্র থেকে আগাম তথ্য সংগ্রহ করবে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় যৌথভাবে  তাৎক্ষণিক পদক্ষপ গ্রহণ করবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসাইন ভূঞা বলেন, কোর কমিটি জেলা সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিকে প্রয়োজনীয় পরার্মশ ও সহযোগিতা প্রদান করবে। কমিটির সভাপতি জেলার দৈনন্দিন আইন- শৃঙ্খলা সম্পর্কিত বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করবেন।

এছাড়া আসন্ন নির্বাচনে জেলাগুলোর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এ কমিটি জেলা সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটিকে সহায়তা দেবে। সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধে সব জেলায় আগে থেকেই একটি করে কমিটি রয়েছে। কোর কমিটির পাশাপাশি আগের কমিটিও তাদের নির্ধারিত কাজ অব্যাহত রাখবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দশম জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় ঝুঁকি বাড়ছে মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের।

পাশাপাশি নির্বাচনে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পর্যবেক্ষক না থাকায় এ ঝুঁকি বেড়েছে বলে মনে করছেন মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। চট্রগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের বেশকয়েকজন ডিসি জনপ্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।

একাধিক ডিসি বলেন, আমরা আন-অফিসিয়ালি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি, যেখানে নির্বাচনের প্রার্থীরা নিরাপদে বাইরে যেতে পারছেন না সেখানে নির্বাচনী কর্মকর্তা হয়ে মাঠে যাওয়া খুবই ভয়ের। বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোট নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়ায় এ ঝুঁকি আরও বেড়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পর্যবেক্ষক না থাকাও একটি ভয়ের কারণ। তাদের মতে, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকলে দলের ভাবমূর্তির কারণে সহিংস ঘটনা থেকে বিরত থাকবে বিরোধী দল।

গত বছরের নভেম্বরে জামায়াত-শিবিরের দেশব্যাপী তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) নেতৃত্বে নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ডিসিদের নেতৃত্বে গঠিত ৮ সদস্যের কমিটির  সদস্যরা ছিলেন— পুলিশ সুপার (ডিএসবি), এনএসআইএ, র‌্যাবের  প্রতিনিধি, জেলার কমান্ডার আনসার, ভিডিপি উপ-পরিচালক ও একজন অতিরিক্ত জেলা  ম্যাজিস্ট্রেট।

এরপর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ৭ মার্চ একটি পরিপত্র জারির মাধ্যমে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়।

পরিপত্রে বলা হয়, ‘দেশ ও জনগণের জানমাল রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সদস্য ছাড়াও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আলেম সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সারাদেশের জেলা, মহানগর, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হবে।

এ অবস্থায় মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনোবল বাড়াতে ও সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নতুন করে ডিসির নেতৃত্বে কোর কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিল সরকার।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here