মোঃ আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন :: বছরের পর বছর নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে আন্দোলন বা দিবস পালন করেও কি নির্যাতন কমছে? হয়তো সঠিক কোন উত্তর মিলবে না।
নারীদের সামাজিকভাবে সুরক্ষা দেয়ার রাষ্ট্রের যে দায়িত্ব রয়েছে রাষ্ট্র তা কতটুকু পালন করছে? যখন নারীদের সুরক্ষা বিষয়টি আসে তখনই প্রশ্ন তোলা হয় নারীদের বাইরে বের হওয়া কিংবা কাজে যাওয়া অথবা তাদের পোশাকের বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসা হয় এমন ভাবে উপস্থাপন করা হয় যে সকল কিছুর জন্য নারীরাই দায়ী। সমাজ সভ্যতা যতো এগিয়ে যাচ্ছে সামনে, ততোই যেন এই প্রবণতা বেড়ে চলেছে। মানুষ যতোই সচেতন হচ্ছে, ততোই যেন নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে তাদের অজ্ঞতাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে উদাসীনতা।অস্বীকার করার উপায় নেই যে, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে অতীতেও।
অবশ্য তখন মানুষের মধ্যে এতো সচেতনতা ছিল না। তখন নারী নির্যাতন যে একটা অপরাধ সেটা হয়তো অনেকে জানত না। এখন সময় পাল্টাচ্ছে। শিক্ষা দীক্ষায় এগিয়েছে মানুষ। সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে সকল ক্ষেত্রেই। কিন্তু নারী নির্যাতনের মতো একটি মারাত্মক স্পর্শকাতর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি। নারী সহিংসতা রোধে আছে আইন, বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সনদ ও চুক্তি। কিন্তু এগুলোর কোন বাস্তবায়ন নেই। এসব আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষও সচেতন নয়। সর্বোপরি আইন প্রয়োগকারী ও আইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী ও দরিদ্র মানুষের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে।
নারীদের উপর সহিংসতার আরেকটি কারণ হল এদের উপর সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। নারী নিজ পরিবারেও নির্যাতিত হচ্ছে। বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় সহিংসতার শিকার অনেক নারী চাইলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না বরং পরিবার ও সন্তানের কথা ভেবে সহ্য করছেন বাধ্য হয়ে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ ব্যাপী এসব সহিংসতার শিকার হয়ে প্রতি বছর অসংখ্য নারীর মৃত্যু হচ্ছে। কারণ তারা মুখ ফুটে কথা বলতে পারে না, তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। নির্যাতিত হওয়ার পর তাদের থাকতে হয় চাপের মুখে।তাই নারীদের প্রতি আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পরিবার ও সমাজ তথা আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। নারীদেরও সোচ্চার হতে হবে। নারীদের কথা বলতে হবে নিজ নিজ অধিকার আদায়ে।
যারা ধর্ষক তারা ধর্ষণের শিকার নারীর চেয়ে শক্তিশালী৷ অন্যদিক বাদ দিলেও লৈঙ্গিকভাবে পুরুষ শক্তিশালী৷ তারা সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবেও শক্তিশালী৷ নারীদের সামাজিকভাবে সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা এবং সাক্ষ্য আইনে নানা সমস্যা রয়েছে৷ আছে ধর্ষণের শিকার একজন নারীর চরিত্র হননের সুযোগ৷আদালতে নারীকেই প্রমাণ করতে হয় তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না? একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডাক্তারি পরীক্ষা না করলে ধর্ষণের আলামত নষ্ট হয়ে যায়৷ আদালতে তাকে অনেক বিব্রতকর প্রশ্ন করা হয়৷ ফলে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে৷
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের জন্য আইন ছাড়াও আমাদের প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিরোধ করতে পারবে যার মাধ্যমে নারী পাবে সহিংসতার প্রতিকার, গড়ে উঠবে নারী সহিংসতা মুক্ত একটি সুন্দর সমাজ।
লেখকঃ সদস্য, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি জাতীয় পার্টি। ইমেইল: jatiyosecchasebokparty@gmail.com