মোঃ আব্দুল হাকিম, নাটোর প্রতিনিধি::নাটোরে পড়াশুনা না ছাড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী সুমাইয়াকে (২৫) হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার মা নুজহাত বেগম। গতকাল রাতে তার মা শশুড় বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় মামলাটি করেন । মামলায় সুমাইয়ার স্বামী প্রকৌশলী মোস্তাক হোসেন সহ চার জন কে আসামী করা হয়।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সুমাইয়ার মা নুজহাত বেগম শ্বশুরের কাছ থেকে ফোনে মেয়ের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে যশোর থেকে নাটোরে ছুটে আসেন । এসে দেখলেন, হাসপাতালের মর্গে মেয়ের লাশ পড়ে আছে। শ্বশুর, স্বামী বা তাঁদের পরিবারের কেউই সেখানে নেই। নুজহাতের অভিযোগ, নির্যাতন করে তাঁর মেয়েকে হত্যা করেছেন স্বামীর বাড়ির লোকজন। সুমাইয়া বেগম যশোরের অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান যশোরীর মেয়ে। বিয়ে হয়েছিল নাটোর শহরের হরিশপুর বাগানবাড়ি এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে প্রকৌশলী মোস্তাক হোসেন সঙ্গে।

মা নুজহাত বেগম আরও বলেন, বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন সুমাইয়ার পড়ালেখা ও পরে চাকরি করার ইচ্ছা মেনে নিতে পারছিল না। এ কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় ছয় মাস আগেও তাঁকে ঘরে আটকে রেখে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, সুমাইয়ার বাবা সিদ্দিকুর ছিলেন একজন ইসলামি ভালো বক্তা। তাঁর অনুপ্রেরণাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সুমাইয়া। ভর্তির তিন বছরের মাথায় বাবার পছন্দেই ২০১৯ সালে মোস্তাককে বিয়ে করেন সুমাইয়া। পড়ালেখার খরচ বাবা সিদ্দিকুরই দিতেন। তাই পড়ালেখা বন্ধ করতে হয়নি সুমাইয়াকে। প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। ঢাকায় থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ গত সেপ্টেম্বরে বাবা সিদ্দিকুর মারা যান। এতে আর্থিক সংকটে পড়েন সুমাইয়া। শ্বশুরবাড়ি থেকে চাকুরীর জন্য পড়াশুনা না করে সংসারী হওয়ার নির্দেশ আসে। চলে অমানবিক নির্যাতন। শেষ পর্যন্ত জীবনের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়। ময়নাতদন্ত শেষে রাতে নাটোরের একটি কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার দুপুরে বলেন, গতকাল রাতে নিহত সুমাইয়ার মা নুজহাত বেগম থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এতে সুমাইয়ার স্বামীসহ চারজনের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। মামলা গ্রহণের পর আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে। সুমাইয়ার ননদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যহত আছে।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া গেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে । তিনি আরও বলেন, যেহেতু স্বামীর বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই স্বামী ও তাঁর স্বজনদেরই দায় দায়িত্ব বহন করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here