গাজী হানফি মাহমুদ, নরসিংদী প্রতিনিধি: নরসিংদীর রায়পুরায় দুই পক্ষের মধ্যে টেঁটাযুদ্ধে প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার বেলা ১২ টার থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার নিলক্ষা ইউনিয়নের দড়িগঁাও গ্রামের সহিদ মেম্বার ও হরিপুর গ্রামের সুমেদ আলীর গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে।

এতে উভয় পক্ষের টেঁটা ও ককটেল বিস্ফোরণে ২০ ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন, মিষ্টার মিয়া (২৪), আবু ছিদ্দিক (২২),শাহীন মিয়া (১৮), হানিফা (২৪), তাহার মিয়া (৩০), মনির  হোসেন (২৫), রিপন মিয়া (২৪), বাবুল (২৬), জামাল (৩০) ও খোকা মিয়া (২৮)।

তাদের নরসিংদী ও পাশ্ববর্তী নবীনগর উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এছাড়া বেইশ কয়েক জন কে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, ২০১২ সালে ২১ অক্টোবর গোপীনাথপুর গ্রামের জজ মিয়া ও রহিম গ্রুপের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সালিশ বৈঠক বসে। এ সময় জজ মিয়ার সমর্থক আঃ হেকিমকে প্রতিপক্ষ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে। এ মৃত্যুর ঘটনা কে কেন্দ্র করে সংর্ঘষ ছড়ি পরে পার্শবর্তী হরিপুর, দড়িগাঁও,বীরগাঁও ও আমিরাবাদ গ্রামে। এক পর্যায়ে রহিমের পক্ষে যোগ দেয় হরিপুর গ্রামের সুমেদ আলী ও জজ মিয়ার পক্ষে দড়িগঁঁও গ্রামের সহিদ মেম্বার। এতে করে গত দুই বছরে বিক্ষিপ্ত কয়েক দফা সংঘর্ষে দুই পক্ষের টেঁটাবিদ্ধ হয়ে ৪ ব্যক্তি নিহত হয়েছে। এ পর্যন্ত অগ্নিসংযোগ হয়েছে প্রায় ২৫টি বসত ঘরে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকারও উপরে সম্পদ। খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে অনেক পরিবার।

এ প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের নভেম্বরে তৎকালীন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী রাজি উদ্দিনের নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসন দুই পক্ষের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দেয়। দীর্ঘ চার মাস বিরতির পর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উল্লেখিত গ্রুপের মাঝে পুনরায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলতি বছর গত ৩০ মার্চ সহিদ মিয়ার সমর্থক দড়িগাঁও পূর্বপাড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের ছেলে জুসেদ মিয়া মাঠে কাজ করতে গেলে সুমেদ আলীর সমর্থক জাকির হোসেন তাঁর দলবল নিয়ে হামলা চালায়।

এ ঘটনার জের ধরে গত ৪ ও ৫ এপ্রিল বেলা এগারটার দিকে দড়িগাও ও হরিপুর গ্রামের সীমানা এলাকায় দুই পক্ষের সমর্থকরা টেঁটাযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এতে প্রায় ৪০ ব্যক্তি টেঁটাবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিল। এর রেশ কাটতে না কাটতেই গত ৭ এপ্রিল সুমেদ আলীর লোকজন সহিদ মিয়ার এক সমর্থকের একটি গরু এবং ফসলী জমি থেকে মরিচ লুটপাট করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনা কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মাঝে আবার সংঘর্ষের সূচনা হয়। বুধবার সকাল থেকেই দুই পক্ষের লোকজন টেঁটা, বল্লাম,দা,ককলেটসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দুই পক্ষের মাঝে বেলা ১২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় টেঁটা ও ককটেল বিস্ফোরণে উভয় পক্ষের প্রায় ২০ ব্যক্তি আহত হয়।

খবর পেয়ে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল মতিন ও সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) একে এম জহিরুল ইসলাম এবং নরসিংদী ও রায়পুরা থানা পুলিশ দীর্ঘ তিন ঘন্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে বিকালে ৪টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন আনতে সক্ষম হয়।

রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাস আগে প্রশাসনের সহযোগীতায় তাদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করা হয়েছিল। কিন্তু কোন কাজে আসেনি। ইতোপূর্বে দুই দফা সংর্ঘষের পর আজও তাঁরা আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here