নদীভাঙনে বদলে যাচ্ছে নোয়াখালীমুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি :: আবদুল হাকিম চার দফা নদীভাঙনের পর ভোলার বোরহানউদ্দিন ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন নোয়াখালীর হাতিয়ায়। পঞ্চম দফায় নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে সে আশ্রয়স্থলও। এরপর বনদস্যুদের কাছ থেকে একচিলতে জায়গা কিনে ঘর বানিয়েছিলেন সুবর্ণচর উপজেলার চর খন্দকার গ্রামে। নদীতে মাছ ধরে ও আশপাশের জমিতে সবজি চাষ করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছিলেন। কিন্তু মাসকয়েক আগে ষষ্ঠবারের মতো নদীভাঙনে হারিয়ে যেতে বসেছে সে স্বপ্নও।

আবদুল হাকিমের মতোই প্রতি বছর নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষের বসতি। তবে সবচেয়ে বেশি ভাঙনের শিকার হচ্ছে নোয়াখালীর সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়া উপজেলা, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর, রামগতি এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মানুষ। ব্যাপক মাত্রার এ নদীভাঙন বদলে দিচ্ছে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের মানচিত্রও।

হাতিয়া উপজেলা পরিষেদের চেয়ারম্যান মোর্শেদ লিটন জানান, হাতিয়ার মানুষ ভাঙনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করছে। উপজেলার তিন দিকই ভাঙছে। এর মধ্যে ছয়টি এলাকার ভাঙন সবচেয়ে তীব্র। এসব এলাকার ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ ভাঙনের কবলে নিঃস্ব হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ পাঁচ-ছয়বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। তবে ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোকে সমপরিমাণ সহযোগিতা বা পুণর্বাসন করা সম্ভব হয়নি।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, চর ফকিরা ও চরএলাহী এবং সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ও চর ক্লার্ক ইউনিয়নের উপকূলীয় অঞ্চল নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই এসব এলাকার শতশত পরিবার ঘরবাড়ি হারাচ্ছে।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল এ প্রসঙ্গে বলেন, উপজেলার মুছাপুর ও চর এলাহী ইউনিয়নের প্রায় ছয়টি স্থানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে দিয়ারা বালুয়া গুচ্ছগ্রাম, পূর্ব কচ্ছপিয়া, ভূমিহীন মার্কেট, চর ফকিরা ৬ নম্বর ওয়ার্ড, চর এলাহীর নারিকেল ব্যাপারীর দোকান থেকে গাংচিল পর্যন্ত। এসব এলাকার অন্তত ২০ হাজার পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখন বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে বাস করছে। এছাড়া আট কিলোমিটার পুরনো সড়ক ও ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ও চরক্লার্ক ইউনিয়নের দক্ষিণ হেমায়েতপুর, চর বায়েজিদ মৌজা, চর খন্দকার, আলেমপুর, সৈয়দপুর, চর নোমান সমাজ ও চর মোজাম্মেল মৌজাসহ অন্তত ১০টি এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি হারিয়েছে প্রায় তিন হাজার পরিবার।

একই সঙ্গে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি, সিডিএসপি-৪-এর সাত-আট কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও বন বিভাগের লক্ষাধিক গাছ। গত মাসেই চরক্লার্ক ইউনিয়নের চর খন্দকারে সাবেক ২ নম্বর কাটাখালী সুইস গেটটি বিলীন হয়েছে। ফলে জোয়ারের সময় পানি দ্রুত সমতল ভূমির দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিলীনের হুমকিতে রয়েছে সোলেমান বাজার এলাকার বসতবাড়ি।

দুই ইউনিয়নে ভাঙনের বিষয়ে মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এনামুল হক ও চর ক্লার্ক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল বাসার বলেন, ভাঙনের চিত্র উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যও বিষয়টি অবগত।

তবে নোয়াখালী জেলার তিন উপজেলা সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙনের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নোয়াখালী কার্যালয়ে। পাউবো কার্যালয়ে গেলে তাদের কাছে ক্ষয়ক্ষতির কোনো হিসাব নেই বলে জানান জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার কার্যালয় শুধু নদীভাঙন প্রতিরোধে পরিকল্পনা ও বাজেট প্রস্তাব করে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here