ডেস্ক রিপোর্ট:: বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের উপ-পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. প্রবীর কুমার সরকার, সহযোগী অধ্যাপক এবং উপ পরিচালক (অর্থ) মোঃ শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে চরম আর্থিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সর্বস্তরের কর্মচারীদের সাথে চরম অপেশাদার মনোভাবের অভিযোগ উঠে এসেছে। সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে যে এই উপ পরিচালকদ্বয়ের যৌথ সিন্ডিকেট, অপেশাদার আচরণ, দুর্ব্যবহার, সর্বোপরি আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন অনিয়মের কারনে একদিকে যেমন কর্মচারীরা তীব্র অসন্তুষ্টিতে রয়েছে অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন ডাক্তার বলেন, সম্প্রতি আবুল হোসেন নামের একজন দানবীরের আর্থিক অনুদানে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে আবুল হোসেন রেসপাইরেটরী সেন্টার ও নিউমোনিয়া রিসার্চ সেন্টার চালু হয়। হাসপাতালের রোগী সেবার স্বার্থে এই সেন্টার চালু হলেও সেখানে চলে হাসপাতালের উপ-পরিচালক, ডা. প্রবীর কুমার সরকারের একক আধিপত্য। প্রথমত উক্ত সেন্টারের নাম বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের নামে হবার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও উপ-পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. প্রবীর কুমার সরকারের ব্যক্তিগত পছন্দের নামকরণকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। শুধুমাত্র তার ইচ্ছার কারনেই অত্র হাসপাতালের একজন সাবেক অধ্যাপকের ছবি উক্ত নিউমোনিয়া রিসার্চ সেন্টারে বৃহদাকারে সন্নিবেশ করা হয় যা অত্র হাসপাতালের অন্য কোন ওয়ার্ড বা বিভাগে নজির পাওয়া যায় না। এর সবই করা হয়েছে ড. প্রবীর কুমার ও তাদের ঘনিষ্ঠজনদের খুশি করার কারনে। এছাড়াও এক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় আরো দেখা যায় যে, আবুল হোসেন রেসপাইরেটরী সেন্টার ও নিউমোনিয়া রিসার্চ সেন্টার নির্মাণ করার জন্য হাসপাতালকে প্রায় ১ কোটি পঞ্চাশ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়। কিন্তু এর বাইরেও ডেকোরেশন, ইলেকট্রিক পাইপ, লাইন এয়ার কন্ডিশন্ড ইত্যাদি বাবদ ডা. প্রবীর কুমার সরকার আরো প্রায় সত্তর (৭০) লাখ টাকার বিলের অনুমোদন নেন! যা অত্র হাসপাতাল অভ্যন্তরীণভাবে বহন করেন। অথচ এই বিপুল পরিমান টাকা দিয়ে হাসপাতালের নিজস্ব খরচেই সম্পূর্ণ একটি রিসার্চ সেন্টার করা সম্ভব বলে অনেকেই দাবী করেন। এছাড়াও ডা. প্রবীর কুমার তার ব্যক্তিগত প্রজেক্ট চৎবাবহঃরড়হ ড়ভ ঈযরষফযড়ড়ফ অংঃযসধ রহ ইধহমষধফবংয:ঞযব ভরৎংঃ ঘধঃরড়হধষ ঝঁৎাবু ইধংবফ ঝঃঁফু এর যাবতীয় সমস্ত কাজ আবুল হোসেন নিউমোনিয়া রিসার্চ সেন্টারে করে থাকেন। যার জন্য সংশ্লিষ্ট সেন্টারে তিনি একটি কনফারেন্স রুমে করেছেন। রোগী দেখার নাম করে প্রতি সোম ও বৃহষ্পতিবার তিনি হাসপাতালের ডিউটির সময় শেষ হবার পূর্বেই মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে স্টেশন ত্যাগ করেন, ডিউটি কালীন সময়ে , প্রশাসনিক কাজের সময়ে তিনি কাজ বাদ দিয়ে ব্যক্তিগত প্রজেক্ট নিয়ে উক্ত রিসার্চ সেন্টারে ব্যস্ত থাকেন, হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মচারীকে হাসপাতালের দায়িত্ব বাদ দিয়ে তার ব্যক্তিগত প্রজেক্টের কাজে সহযোগীতা করতে বাধ্য করার মত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এতে হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক ও দাপ্তরিক কাজের ব্যঘাত ঘটে কিন্তু আবার তিনিই সেই কাজের বিঘœতার জন্য কর্তব্যরত সবার সাথে দুর্ব্যবহার করেন আর নিজের দুর্বলতা ঢাকতে প্রাতিষ্ঠানিক সব কাজে প্রথাগত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে জনাব শাহাদাত হোসেন, উপ-পরিচালক (অর্থ) কে অফিসিয়াল বা আন অফিসিয়ালভাবে সম্পৃক্ত করেন।

অন্যদিকে জনাব শাহাদাত হোসেন, উপ-পরিচালক (অর্থ), ডাঃ প্রবীর কুমার সরকার, উপ পরিচালক (হাসপাতাল) ও সহযোগী অধ্যাপক-এর প্রশাসনিক দুর্বলতা ও ছত্রছায়াকে কাজে লাগিয়ে হাসপাতালের সমস্ত অনিয়ম ও দুর্ণীতির সাথে জড়িয়ে পরেছেন। কথিত আছে যে তার মন জয় করে না চলতে পারলে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিশেষ করে আর্থিক ফাইল বা নথি স্থবির হয়ে পড়ে। ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে হাসপাতালের বিভিন্ন মেডিকেল ইকুইপম্যান্ট, সার্জিক্যাল আইটেম, কর্মচারীদের বিভিন্ন ফান্ড যেমন সিপিএফ, যে কোন দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত সমস্ত কিছুই তার খেয়াল-খুশি মতো তাকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে বাধ্য করা হয়। অনুসন্ধান করে জানা গেছে যে, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের সর্বোচ্চ অথোরিটি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা বোর্ড বা পরিচালনা বোর্ডের অবগতি বা অনুমোদন ব্যতিরেকেই তিনি সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংকের আমিন বাজার শাখায় সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বার্থে দদইধহমষধফবংয ঝযরংযঁ ঐড়ংঢ়রঃধষ ধহফ ওহংঃরঃঁঃব ঈড়হঃৎরনঁঃড়ৎু চৎড়ারফবহঃ ঋঁহফ” এর নামে ৯০(নব্বই) লক্ষ টাকার এক বছর মেয়াদী ৬(ছয়) টি, সর্বমোট ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকার এফ ডি আর গত ২৮/১২/২০২২ তারিখে করেন। পরবর্তীতে গত ২৮/০১/২০২৩ তারিখে পরিচালনা বোর্ডের ৯বম সভায় বিভিন্ন ব্যাংকে হাসপাতালের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা নির্দিষ্ট হারের মুনাফায় ডিপোজিটের প্রস্তাব পরিচালকের মাধ্যমে উপস্থাপন করলেও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এন্ড কমার্স ব্যাংকের আমিন বাজার শাখায় যে ৬টি এফডিআর (৫কোটি ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের) ইতোমধ্যে পরিচালনা বোর্ডের অনুমতি ব্যতিরেকেই লেনদেন করা হয়েছে, অত্যন্ত সুকৌশলে পরিচালনা বোর্ডের নিকট সে তথ্য গোপন করা হয়। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইসস্টিটিউট আগারগাঁও, শ্যামলীতে হওয়া সত্ত্বে কেন আশেপাশের সুবিধাজনক বা উপযোগী ব্যাংক ব্যতীত এতো দুরবর্তী জায়গার একটি ব্যাংকের শাখায় হাসপাতালের কর্মচারীদের কষ্টার্জিত কোটি কোটি টাকার অর্থ বোর্ডের অনুমোদন ব্যতীত ট্রান্সফার করা হয় তা দিয়ে আর্থিক কেলেঙ্কারীর বিষয়টি আরো স্পষ্টতর হয়। এ ঘটনার আরেকটু গভীরে গিয়ে দেখা যায় যে, শুধু এই ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকাই নয় বরং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক অর্থ উক্ত ব্যাংকের একটি উপ-শাখা হাসপাতাল প্রাঙ্গনে স্থাপনেরও প্রতিশ্রুতি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়েছিলেন। এছাড়াও হাসপাতালের ভেতরে তারই প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় পূর্বে সিটি ব্যাংকের একটি এজেন্ট বুথ স্থাপন করা হয় যদিও হাসপাতালের সমস্ত লেনদেন কৃষি ব্যাংকে হতো, এমনকি কৃষি ব্যাংকের একটি বুথ ও হাসপাতালের সি ব্লকে বিদ্যমান।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here