ডেস্ক রিপোর্ট :: ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়ী হলেই কেবল উন্নয়নের মহাসড়কে শুভ যাত্রার সাহস আসে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আসন্ন কৃষিবিদ দিবস-২০২১ উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে ৩য়, সবজি উৎপাদনে ৩য়, আম উৎপাদনে ৭ম, আলু উৎপাদনে ৭ম এবং পেয়ারা উৎপাদনে ৮ম স্থানে থেকে বিশ্ব-পরিমণ্ডলে সমাদৃত। বিশ্বে ধান, পাট, কাঁঠাল, আম, পেয়ারা ও আলু এবং সবজি ও মৎস্য-উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২০০৯ সালে খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৫৩ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন।

আগামীকাল শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ‘কৃষিবিদ দিবস ২০২১’ উপলক্ষে আজ শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দেওয়া এই বাণী প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন বাংলাদেশ কৃষিবিদ দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিবিদ দিবসে আমি দেশের সকল কৃষিবিদ, কৃষক এবং কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কৃষি সমৃদ্ধির উৎকর্ষে আসে খাদ্য নিরাপত্তার স্বস্তি। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে জয়ী হলেই কেবল উন্নয়নের মহাসড়কে শুভ যাত্রার সাহস আসে। আত্মমর্যাদা শীল জাতির উন্নয়নের মেগা প্রকল্পের মেলা বসে। বর্তমান সরকারের কৃষি অনুকূল নীতি ও প্রণোদনায় কৃষক ও কৃষিবিদদের মিলিত প্রচেষ্টা আমাদের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে অবদান রাখছে। অধিক জনঘনত্বের দেশে নিত্য ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে কৃষি-উৎপাদনের ক্রমবৃদ্ধি বিশ্বের কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার। বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ঘোষণার মান রেখেছেন বাংলার কৃষক ও কৃষিবিদগণ।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কৃষিজাতের সর্বোচ্চ সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদানের ঘোষণা দেন, যা এদেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিজ্ঞানীদের জন্য ছিল ঐতিহাসিক মাইলফলক। ফলে অধিকতর মেধাবী শিক্ষার্থীরা কৃষিশিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠছেন। বঙ্গবন্ধুর সেই নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কৃষি বান্ধব নীতি অনুসরণ করছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ১০ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক একাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। কৃষকদের প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষক-উপকরণ কার্ড দেয়া হয়েছে। বর্গা চাষিদের জন্য জামানত বিহীন কৃষিঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৪০২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।

বিএনপি-জামাতের সময় সারের জন্য ১৮ জন কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সারের দাম কয়েক দফা কমিয়েছি। সেচের বিদ্যুৎ বিলে ২০ শতাংশ রিবেট প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত সার, বিদ্যুৎ ও ইক্ষুখাতে মোট ৭৫ হাজার ৮ শত ১৫ কোটি টাকা উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষকের পুষ্টি বিধান ও আয়ের উৎস সৃষ্টি করতে প্রতিটি ইউনিয়নে ৩২টি করে মোট ১ কোটি ৪০ লাখ ৩ শত ৮৭টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়। নিরাপদ শাকসবজির যোগান ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে রাজধানীসহ ৪১ জেলায় ‘কৃষকের বাজার’ স্থাপন করা হয়েছে। ১২ বছরে প্রায় ৭০ হাজার কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়, যার মধ্যে অত্যাধুনিক কম্বাইন হারভেস্টর, রিপার, সিডার, পাওয়ার টিলারসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি রয়েছে।

জলবায়ু-পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ-বিনির্মাণ হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুষ্টি-প্রাচুর্য ও নিরাপদ-খাদ্যের ঠিকানা হবে আমাদের সোনার বাংলাদেশ। বিদ্যমান কৃষিকে বাণিজ্যিক রূপান্তরের অভিযাত্রায় কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ এবং সরকারের নীতি-সহায়তা ও প্রণোদনা সম্পৃক্ত কৃত্যপেশার অনুকূলেই থাকবে, এই আশ্বাস আমি আপনাদের দিচ্ছি।

কৃষিবিদ দিবসে গৃহীত সকল কর্মসূচি সাফল্যের উৎকর্ষে ভরে উঠুক এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূত্র: বাসস

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here