রবীন্দ্র নাথ পাল::

imagesopসামপ্রতিক কালে দুটি ঘটনা জনমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার দুটো খবর চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। যাদের কাছে আমরা নিরাপত্তা চাইবো,যারা আমাদের নিরাপত্তা দিবেন, যারা আমাদের জীবন রক্ষা করে অপরাধীদের আইনের হাতে সোপর্দ করে ন্যায বিচার নিশ্চিত করবেন,তারাই যদি অপরাধী হয়ে যান-তাহলে শুধু সাময়িক বরখাসত্ম করে অপরাধ ঠেকানো যাবে না। সাধারন মানুষ ন্যায় বিচার চায়,চায় অপরাধীর যোগ্য শাস্তি। এভাবে একের পর এক অপরাধের

সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িয়ে পড়লে সাধারন মানুষ নিরাপত্তার জন্য যাবে কোথায়? অপরাধীরা অপরাধ করবে এটাই স্বাভাবিক।তাই বলে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন,তারা যদি অপরাধীদের বাঁচাতে ঐ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হন,তাহলে তাদের ঐ অপরাধের অভিযোগে বিচার না হয়ে সাময়িক বরখাসত্ম করলে পোঁড়া ঘাঁয়ে লবন দেয়া ছাড়া আর কি হতে পারে।

সমপ্রতি সিলেটের জালালাবাদ থানা এলাকায় শিশু সামিউল হত্যা ও নোয়াখালীর কোম্পানী গঞ্জের কিশোর মিলন হত্যা এবং তা ধামাচাঁপা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যের ন্যাক্কার জনক ভুমিকা সারা

দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে নি:সন্দেহে।তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই যে অপরাধীদের সাথে সখ্যতা এবং তাদের সহায়তা করে এটা ঠিক না। অনেক ভাল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আছেন,যারা অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। আমরা ঢালাও অভিযোগ করছি না। আমাদের বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঠিকই জানেন কারা অপরাধীর সাথে জড়িয়ে অর্থের পাহাড় গড়ছেন। এই অর্থের পাহাড় গড়তে তারা কত নিম্ন অপরাধে জড়িয়ে পুরো বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন করে চলেছেন। নারায়নগঞ্জের ৭খুনের ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যে বোধদয় হয়নি সামিউল ও মিলন হত্যা ঘটনা চাঁপা দেয়ার ঘটনাই প্রমান করে।

প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপরাধে জড়িযে পড়ার তথ্য সংবাদপত্রে প্রকাশ হচ্ছে। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যাচ্ছে। এরপরও যারা অপরাধে জড়িয়ে একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন করছে,আর যাই হোক এরা অনুপ্রবেশকারী না। এরাও পেশাদার অপরাধী বলতে হয়।বিচার হীনতা বিচার না হওয়ার নামানত্মরই মাত্র। এভাবে অপরাধী ও তাদের খেদমতদার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় দুর্বৃত্ত সদস্য গোটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দুর্নামের ভাগীদার করছে।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায় পুলিশের সহায়তায় ও নিস্কৃয়তায় গনপিটুনিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাধারন মানুষ মারা গেছে।

এসব মৃত্যুকে ধামাচাঁপা দিতে অপরাধীদের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর

সদস্যরাই বেশী তৎপর। এভাবে চলতে থাকলে সমাজে সমাজবিরোধীদের জয়জয়াকার হবে। যা কোন শুভ লক্ষন নয়। মিলন হত্যা ধামাচাঁপা দিতে অসহায় পরিবারকে চাকুরীর লোভ, নগদ অর্থ লেনদেন, আদালতে ৫২ বার সময় চাওয়া, জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তদবির এবং শেষমেষ পুলিশের ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে মৃত মিলনকে আবার জীবিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব না খাটালে অনেক ঘটনা

সত্যের মুখ দেখতো। আজকাল মাদক ব্যবসাও নিয়ন্ত্রন হয় নেতাদের মাধ্যমে। তাহলে এই নেতৃত্ব দিয়ে ভবিষৎ প্রজন্ম কিভাবে এগিয়ে যাবে।

সমাজের এই দুষ্টক্ষতদের সাথে কিছু অর্থলোভী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জড়িয়ে আইনের প্রতি সাধারন মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিছু সৎ কর্মকর্তা আছেন,যারা অসৎদের ভয়ে তটস্ত থাকেন। অসৎ কর্মকর্তারা এতই শক্তিশালী যে রাজনৈতিক নেতাদের চাপে তাদের ভাল পোষ্টিং হয়। স্বনামে -বেনামে গাড়ী বাড়ী হয়। অথচ ঠুটো জগন্নাথ দুদক হাত পা গুটিয়ে বসে থাকে নগদের আশায়। এভাবে একদিন সবই যদি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়, তাহলে ও অবাক হবার হবার কিছু থাকবে না। একটি ছোট্র গল্প বলে শেষ করছি।

এক লোক খালী শরীরে পরনের লুঙ্গি ধরে থানার সামনে দিয়ে দৌড়িয়ে যাচ্ছে।আর ধর ধর করে চিৎকার করে এক লোকের পিছু ছুটছে। এ সময় একজন পথচারী তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করলো,কি হয়েছে। দৌড়াতে দৌড়াতে হাপিয়ে উঠা লোকটি থেমে বললো, ঐ লোকটি তার সব ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে। পথচারী তখন বললো, আরে দৌড়ে ছিনতাইকারীকে পাবেন না। তার চেয়ে সামনে থানা আছে,আপনি গিয়ে অভিযোগ করুন।পুলিশই ধরে তাকে আইনে সোপর্দ করবে। একটু দম নিয়ে ছিনতাইয়ের কবলে পড়া লোকটি পথচারীর দিকে তাকিয়ে বললো, না ভাই-থানায় গেলে আমার পরনে যে লুঙ্গিটি আছে,সেটিও থাকবে না।

আমরা প্রত্যাশা করছি আকণ্ঠ অনিয়মে নিমজ্জিত হবার আগেই যেন একটি শুদ্ধি অভিযান চালানো হয়। আর সাময়িক বরখাসত্ম না করে অপরাধে জড়িতদের যারা সহায়তা করবে,তাদেরও সেই মামলায় আসামী করে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা হয়। তাহলেই পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি ঘটতে পারে। মনে রাখতে হবে এরা দেশ জাতি ও সমাজের আসল শত্রু।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here