ঢাকা: অর্থপাচার মামলায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোতাহার হোসেন রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ রায় ঘোষণা করেন।

তারেক রহমান আদালতের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন তারেক রহমানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম লিটন, অ্যাডভোকেট তাহেরুল ইসলাম কোয়েল, অ্যাডভোকেট মো. মহসিন মিয়া।

দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন স্পেশাল পিপি অ্যাড. মোশাররফ হোসেন কাজল, মহানগর দায়ের জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু, অ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম মেনু।

গত ১৪ নভেম্বর মামলাটির যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মোতাহার হোসেন রোববার রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য্য করেন।

২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলাটি দায়ের করেন। ৪ বছর ২১ দিন বিচারিক কার্যক্রম শেষে দেয়া হলো এ মামলার রায়।

২০১১ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।  এ বছরের ৮ আগস্ট আদালত তারেক রহমান ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। এদের মধ্যে দেশি সাক্ষী ছাড়াও  মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেসটিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট মিস ডেবরা লেপরোভেটও এদেশে এসে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন।

এ মামলার সাক্ষীরা হলেন- সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট করপোরেট শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার বিভূতি ভূষণ সরকার, সোনালী ব্যাংক ক্যান্টনমেন্ট করপোরেট শাখার সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম, বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মামলাটির রেকর্ডিং অফিসার হোসনে আরা বেগম, এফবিআই এজেন্ট মিস ডেবরা লেপরোভেট, বর্তমান ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আলীমুজ্জামান, গুলশান থানার ওসি কামাল উদ্দিন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির চেয়ারপারসন খাদিজা ইসলাম, পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ করিম, সোনালী ব্যাংক ময়মনসিংহ অঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার ওমর ফারুক ভূইয়া, দুদক কর্মকর্তা সৈয়দ তাহসিনুল হক ও সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সৈয়দ এহসানুল হাফিজ।

২০১৩ সালের ২৬ মে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহামানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য আদেশ দেন আদালত।

গত ২৭ অক্টোবর আসামি মামুনের পক্ষে আদালতে দাখিল করা ২৪ জনের সাফাই সাক্ষীর তালিকা হতে আদালত ৮ জনকে সাক্ষ্যদানের জন্য মঞ্জুর করলেও শেষ পর্যন্ত ৫ জন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

গত ৩১ অক্টোবর সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। সাফাই সাক্ষ্যদাতাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান।

ওই ৩১ অক্টোবরই আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে পাঁচ পৃষ্ঠায় ১০টি পয়েন্টে লিখিত বক্তব্য দিয়ে আদালতে মৌখিকভাবে পেশ করেন।

গত ১৪ নভেম্বর দুদকের পক্ষে একদিন এবং আসামিপক্ষে ২ দিন যুক্তিতর্কের শুনানির পর বিচারক এ রায়ের তারিখ ঠিক করেন।

এদিন আসামিপক্ষে বিএনপি নেতা ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, অ্যাডভোকট খায়রুল ইসলাম লিটন ও জাহেদুল ইসলাম কোয়েল সর্বশেষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেন, দুদক মামলা প্রমাণে সমর্থ হননি। তাই আসামিদের তারা বেকসুর খালাস দাবি করেন।

এ সম্পর্কে আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া জানান, প্রসিকিউশন অভিযোগ প্রমাণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এছাড়া এ আদালতের এ মামলা পরিচালনা করার ক্ষমতাও নেই। আর তারেক রহমানের কোনো সম্পৃক্ততা তো নেই-ই। তাই রায়ে তারা খালাস পাবেন।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর দুদকের পক্ষে বিশেষ পিপি মোশারফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক আদালতে উপস্থাপন করে আসামি মামুন ও তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সিঙ্গাপুরের ব্যাংকের মাধ্যমে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন।

এ টাকার মধ্যে তারেক রহমান ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here