সোহানুর রহমান :: রাজনীতি বর্তমানে অনেকাংশে অপরাজনীতি ও দুবৃত্তায়নের শিকার উল্লেখ করে জনকল্যাণমূখী রাজনীতি ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ও সংস্কার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বরিশালের সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) নেতৃবৃন্দ। তারা মনে করেন তরুণদের উপর বিনিয়োগ ও কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
সুজনের আয়োজিত ‘বাংলদেশের রাজনৈতিক সংস্কার ও নাগরিক ভাবনা ‘ বিষয়ে গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
২৬ জুলাই (শুক্রবার) বিকেলে নগরীর সেলিব্রেশন পয়েন্টে সুজনের বরিশাল মহানগরের সভাপতি অধ্যক্ষ গাজী জাহিদ হোসেন’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক নিয়মকানুন নাই। তিনি আরো বলেন, গত বছর নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে আমাদের তরুণরা ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ দাবি তুলেছিলো। সাম্প্রতিক নির্বাচন ও পরবর্তী সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, রাষ্ট্র মেরামতের বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। তাই রাষ্ট্র মেরামতের সূচনা হতে হবে শাসন কাঠামোকে কার্যকর করার মাধ্যমে, যার জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনায় কতগুলো সুদূরপ্রসারী সংস্কার। পরিশুদ্ধ রাজনীতির কথা ভাবতে হলে লেজুরবৃত্তির রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এ সময় অনুষ্ঠানে সুজনের সংস্কার প্রস্তাবসমূহ তুলে ধরা হয়। প্রস্তাবগুলো হলো- রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, নির্বাচনী সংস্কার, কার্যকর জাতীয় সংসদ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, সাংবিধানিক সংস্কার, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, স্বাধীন বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, দুর্নীতি বিরোধী সর্বাত্মক অভিযান, যথাযথ প্রশাসনিক সংস্কার, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শক্তিশালী নাগরিক সমাজ, মানবাধিকার সংরক্ষণ, অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনে একটি নতুন সামাজিক চুক্তি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ। এই ১৮ দফা প্রস্তােেব আলোচনায় অংশ নেন বরিশালের রাজনীতিবিদ, শিক্ষক,উন্নয়ন কর্মী, যুব ও নারী নেতারা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাসদের মনীষা চক্রবর্তী সংসদ সদস্যদের আচরণ আইনের সমর্থণ করেন। তিনি বলেন,রাজনীতির পরিবর্তন করতে হলে নতুন প্রজন্মের মাধ্যমে সম্ভব। এজন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন দরকার। তিনি নারী ও শিশু ধর্ষনের কঠোর বিচার নিশ্চিতে আইন সংস্কার ও দ্রুত বিচার দাবি করেন।
বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের প্রধান নির্বাহী সোহানুর রহমান ‘তরুণদের জন্য বিনিয়োগ’ দফায় দ্বিমত পোষণ করে সংসদীয় গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে ইয়ুথ পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার দাবি তোলেন। প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, বাজেটে তরুণদের জন্য বাজেট বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সোহানুর বলেন “আমরা সরকারি আর্জেন্ট এ্যাকশন চাই, বিদেশের পরামর্শে কর্মপরিকল্পনা না করে স্থানীয়দের মতামতের বাস্তবায়ণ করতে হবে’।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্যানেল আলোচক অধ্যাপক ড.আশিক ই ইলাহী বলেন, ‘আমাদের তরুনদের সঠিকভাবে গড়ে তুলতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা দূরের কথা, রুপার বাংলাও গড়া সম্ভব হবে না। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুপ্রভাত হালদার বলেন,আমাদের সন্তানরা আমাদের যেভাবে দেখতে চায় আমাদের সেভাবে তৈরী হতে হবে।
গণফোরাম বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. হিরন কুমার দাস মিঠু রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে স্বাধীনতার মূল চার স্তম্ভ রাখার দাবি জানান। তিনি প্রস্তাব করেন “বঙ্গবন্ধু,মুক্তিযুদ্ধ,বাংলাদে শ মেনে চলতে পারলে দেশ চলবে,নইলে চলবে না।” সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেছেন,সুশাসন প্রত্যাশা করা যায়, কিন্তু বাস্তবায়ন কঠিন।