মাহমুদা হক মনিরা:: ২৭ মে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় আসন্ন ২০২১-২২ বাজেট উপলক্ষ্যে তামাক-কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরতে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেসন অব দি রুরাল পূয়র-ডর্‌প ও ডেভেলপমেন্ট জার্নালিষ্ট ফোরাম বাংলাদেশ যৌথভাবে “আসন্ন জাতীয় বাজেট ২০২১-২২ এ তামাক কর বৃদ্ধির মাধ্যমে যুব সমাজকে তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত করা” শীর্ষক ভার্চুয়াল ওয়েবিনার এর আয়োজন করেছে।

তামাকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ২০১৬ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। করারোপের মাধ্যমে তামাক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে এর ব্যবহার কমানো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি হলেও বাংলাদেশে এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নীতি বা দিক নির্দেশনা নেই। সংলাপে এ বিষয়ে করণীয় এবং আসন্ন ২০২১-২২ বাজেট উপলক্ষ্যে তামাক-কর বিষয়ক বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

এই ভার্চুয়াল সংলাপে এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড.শামসুল আলম, সদস্য (সিনিয়র সচিব), সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন; অধ্যাপক এম এ মতিন, মাননীয় সংসদ সদস্য, সংসদীয় আসন কুড়িগ্রাম-৩; আলোচক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি অ্যাডভাইজার, সিটিএফকে বাংলাদেশ, এবং সাবেক চেয়ারম্যান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি); ইলিয়াস কাঞ্চন, অভিনেতা এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,”নিরাপদ সড়ক চাই”। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাসান শাহরিয়ার, হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, প্রজ্ঞা। ভার্চুয়াল সংলাপে আরো উপস্থিত ছিলেন এই বিষয়ে অভিজ্ঞ অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় হাসান শাহরিয়ার, হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম, প্রজ্ঞা জানান, তামাক পণ্য ব্যবহারে অকাল মৃত্যুর সংখ্যা বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার এবং ৪৪.০% পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৫.৩ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। অর্থনৈতিক দিক থেকে তামাক ব্যবহারে রাজস্ব আয় ২২৮১০ কোটি টাকা বিপরীতে তামাক ব্যবহারজনিত অসুস্থতায় চিকিৎসা ব্যয় ৩০৫৬০ কোটি টাকা।
সরকারের নিকট প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, সকল সিগারেট ব্রান্ডে অভিন্ন কভারসহ সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৬৫% মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলন করতে হবে। ফিল্টারযুক্ত ও ফিল্টারবিহীন বিড়িতে অভিন্ন কভারসহ সম্পূরক শুল্ক চূড়ান্ত খুচরা মূল্যের ৪৫% মূল্যস্তরভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক প্রচলন করতে হবে। ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য জর্দা ও গুলের কর ও দাম বৃদ্ধিসহ সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক ৬০% আরোপ করা।

‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, “প্রস্তাবিত করের পরিমাণ খুব বেশি না, সেক্ষেত্রে পণ্যের দামও খুব বেশি বাড়বে না। কারণ আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের চেষ্টায় আমরা সবসময় সাথে আছি।”

মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি অ্যাডভাইজার, সিটিএফকে বাংলাদেশ, এবং সাবেক চেয়ারম্যান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) বলেন, “তামার একটি ক্ষতিকর পণ্য হওয়া সত্ত্বেও সবচেয়ে কম দাম বাংলাদেশে। ফলে সরকার যে নানামুখী উন্নয়নের পদক্ষেপ নিচ্ছে তার একটি বড় অংশ এখানে লাভ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রতিবছরই তামাকের মূল্য কিছু হারে বাড়ছে তবে তা মানুষের আয়ের বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য থাকায় তেমন লাভ হচ্ছে না। তামাক শিল্পে প্রচুর কাঠ ব্যবহার করা হয় ফলে পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের বেশিরভাগ জনসংখ্যাই এখন তরুন, এই তরুনদের মধ্যে যদি আমরা তামাক ব্যবহার কমাতে না পারি এবং নতুন করে যাতে আসক্ত না হয় সেটা নিশ্চিত করতে না পারি তবে ভবিষ্যতে আমাদের দুঃখজনক অবস্থার মোকাবিলা করতে হবে।”

ডরপের টোবাকো কন্ট্রোল প্রজেক্টের প্রোগ্রাম কো-অরডিনেটর রুবিনা ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারের এক পঞ্চমাংশ অর্থ ব্যয় হচ্ছে তামাক সেবনে এবং তারা মারাত্মক কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে তাদের চিকিৎসা করাতে পরিবারকে সব হারিয়ে পথে নামতে হচ্ছে। যদি তামাক বাড়ানো যায় এবং সিঙ্গেল শলাকা বিক্রি বন্ধ হয় তবে তরুনরা তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত হবে।”

বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড.শামসুল আলম, সদস্য (সিনিয়র সচিব), সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশন বলেন, “সমাজকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। তবে সম্পূর্ণ তামাক শূণ্য করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তামাক শূণ্য করার বিপরীতে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে অন্য কোনো বড় নেশাকে যেন সুযোগ করে দেওয়া না হয়। আমরা অবশ্যই যুব সমাজকে তামাক সেবন থেকে নিরুৎসাহিত করবো।”

জনাব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বলেন, “বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তামাক ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি আমাদের বাংলাদেশ। দেশের প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে এক তৃতীতাংশই তামাক ব্যবহার করছে। মাদক থেকে সমাজকে রক্ষা করতে আমাদের নানা পদক্ষেপও রয়েছে। এক্ষেত্রে পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।”

ডরপের উপ-নির্বাহী পরিচালক মো যোবায়ের হাসান বলেন, “যুবকদের তামাক সেবনে নিরুৎসাহিত করতে আমরা কাজ করছি। দেশের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য সকল ক্ষেত্রেই নজর রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। সেজন্য সকল সংগঠনকে একসাথে কাজ করতে হবে।”

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here