শনিবারের ভোটের আগে তাইওয়ানের বিরোধী ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির (ডিপিপি) জয়ের বিষয়টি নির্বাচনী জরিপেও উঠে আসে। নির্বাচনে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে ডিপিপি। এদিকে নির্বাচনে ডিপিপি জয়লাভ করলেও চীনের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, তাইওয়ানকে নিজেদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে বিবেচনা করে চীন এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে হলেও ভূখ-টিকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার হুমকি দিয়ে রেখেছে বেইজিং।
প্রসঙ্গত, ৬৬ বছর আগে চীনের গৃহযুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ক্ষমতাসীন কুয়োমিন্টাং পার্টির লড়াইয়ে ক্ষমতাসীনরা পরাজিত হয়। ফলশ্রুতিতে কুয়োমিন্টাং দলীয় নেতারা চীনের মূল ভূখ- ছেড়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নেন। এরপর সেখানে নিজেদের শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলেন তারা। তবে কুয়োমিন্টাংরা ‘এক চীন নীতি’র সমর্থক হলেও ডিপিপি স্বাধীনতাকামী। এ জন্যই চীনের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক এবারের নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল। নির্বাচনে ডিপিপি প্রার্থী সাই ইং-ওয়েন জয়ী হওয়ায় চীন-তাইওয়ান সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ আবারো চরমে উঠবে বলে ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কেননা, এর আগে ডিপিপির চেন শুই বিয়ান প্রথমবারের মতো তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০০-২০০৮ সাল পর্যন্ত তার মেয়াদকালে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে ৫৯ বছর বয়সী সাই নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি হচ্ছেন ডিপিপির দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট। যদিও চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক কী হতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট করে কিছু বলেননি সাই ইং-ওয়েন।
উল্লেখ্য, গত বছর ৭ নভেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট মা ইং-চিউ সিঙ্গাপুরে এক ঐতিহাসিক বৈঠকে মিলিত হন। কয়েক দশকে দুই পক্ষের মধ্যে সেটিই ছিল প্রথম শীর্ষপর্যায়ের বৈঠক। ওই বৈঠকে মা ইং তাইওয়ানের শান্তি সুসংহত করার পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি জোরদার করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওই বৈঠকে মা ইং-চিউ হটলাইন স্থাপন ছাড়াও কয়েকটি জরুরি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১৯৯২ সালের মতৈক্য সুসংহত করা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা, শত্রুতামূলক অবস্থা কমানো এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিবাদের সমাধান করা, বন্দিবিনিময় সম্প্রসারণ, পারস্পরিক কল্যাণ বৃদ্ধি করা, হটলাইন স্থাপন, জরুরি সমস্যা সমাধান ও সহযোগিতার মাধ্যমে চীনা জনগণের শান্তিপূর্ণ ঐক্যে সক্রিয় হওয়া। কিন্তু শনিবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কুয়োমিন্টাংয়ের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি দেশটির জনগণ। বরং স্বাধীনতাপন্থী ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টিতেই (ডিপিপি) আস্থা রেখেছে তারা।