স্টাফ রিপোর্টার :: বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ‘অষ্টাদশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২০’। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৭৪টি দেশের ২২০টি চলচ্চিত্র নিয়ে একযোগে রাজধানীর নয়টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত নয় দিনের উৎসবটির পর্দা নেমেছে রোববার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সভাপতিত্ব করেন উৎসব কমিটির নির্বাহী সদস্য ম. হামিদ। রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদের আয়োজনে এবারের উৎসবের স্লোগান ছিল- ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’।
বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সমাপনী আয়োজনে উৎসবের বিভিন্ন বিভাগে প্রদর্শিত ছবিগুলোর মধ্য থেকে বিচারকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য, তথ্যচিত্রসহ পাঁচটি শাখার মোট ১১টি বিভাগে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতিযোগিতা বিভাগে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্মের পুরস্কার পায় ইরানি ছবি ‘ক্যাসেল অব ড্রিম’। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে এশিয়ান কম্পিটিশন বিভাগের নির্মাতা রেজা মিরকারিমি নির্মিত ছবিটি পেয়েছে এক লাখ টাকার পুরস্কার। বাংলাদেশ প্যানোরামা ফিপ্রেসি জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতেছে তানিম রহমান নির্মিত ছবি ‘নডরাই’। সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড বিভাগে দর্শকের রায়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্বাচিত হয় ভারতের অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ছবি ‘ফাইনালি ভালোবাসা’। উইমেন্স ফিল্ম মেকার সেকশনে স্বল্পদৈর্ঘ্য বিভাগে মেক্সিকোর সান্ড্রা রাইনোসো নির্মিত ছবি ‘ভিডিও টেপ’ জিতে নিয়েছে বিশেষ পুরস্কার। একই বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে পুরস্কার জিতেছে রাশিয়ার দারিয়া বিনেভসকায়া নির্মিত ছবি ‘মাই নেম ইজ পিতায়া’।
একইভাবে শ্রেষ্ঠ ফিচার ফিল্ম পুরস্কার পেয়েছে পোল্যান্ডের ম্যালগোরজাতা ইমিয়েস্কা নির্মিত ছবি ‘অল ফর মাই মাদার’। স্পিরিচুয়াল বিভাগে শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য পুরস্কার জিতেছে লুভরো মেরডেন নির্মিত ছবি ‘দ্য স্ট্যাম্প’। একই বিভাগে সেরা ফিচার ফিল্মের পুরস্কার জিতেছে চীনের ইয়েসির নির্মিত ছবি ‘কোয়ালি অ্যান্ড রাইস’।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকের পৃথিবীতে ক্রমাগত যন্ত্রের ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে মানুষগুলোও যন্ত্র হয়ে যাচ্ছে। মানুষ যাতে যন্ত্র না হয়ে যায়, মানুষ যেন মানুষ থাকে, মানুষের মানবিকতা যেন লোপ না পায়, সে জন্য চলচ্চিত্র বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সমাজকে পরিবর্তন করার সবচেয়ে বড় এবং সহজ মাধ্যম হলো চলচ্চিত্র। কেননা, চলচ্চিত্র খুব সহজে মানুষকে মানুষের কাছে নিয়ে আসতে পারে। তিনি বলেন, মিডিয়ার অত্যধিক বিস্তারে চলচ্চিত্র হারিয়ে গেছে। ভালো কলাকুশলীও তৈরি হচ্ছে না। হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। চলচ্চিত্রকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি, চলচ্চিত্র নিয়ে এ ধরনের উৎসব আমাদের সেসব পদক্ষেপকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
স্বাগত বক্তব্যে উৎসব পরিচালক আহমদ মুজতবা জামাল বলেন, দেশীয় চলচ্চিত্র ও শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে বৈশ্বিক সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে আমাদের এ উৎসবের আয়োজন, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করারও একটা উদ্দেশ্য কাজ করে।
এর আগে দেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্রের গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাপনী আয়োজন। ‘সব সখিরে পার করিতে নেবো আনা আনা’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘বাবু সেলাম বারে বার’, ‘যাও পাখি বলো তারে/সে যেন ভোলে না মোরে’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা আমায় কথা দিয়েছে’- গানগুলো পরিবেশন করেন শিল্পী মাখন মিয়া এবং সাথী ও তাদের দল। দর্শকদের অনুরোধে গান গেয়ে শোনান কলকাতার বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ও চলচ্চিত্র পরিচালক অঞ্জন দত্ত। তিনি গেয়ে শোনান রবীন্দ্রসংগীত ‘পুরনো সেই দিনের কথা’ এবং নিজের ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা সত্যি’।
বরাবরের মতোই এবারের উৎসবেও এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারামা, সিনেমা অব দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন ফিল্মস, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার সেকশনে প্রদর্শিত হয় ছবিগুলো।