ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডেস্ক ::

আমাদের মধ্যে অনেকেরই শীতের সময়ে ঠাণ্ডা পানির কারণে গোসল না করার প্রবণতা দেখা যায়। আবার অনেকেই গরম পানি দিয়ে গোসল করে থাকেন। খুব হালকা পরিমাণে গরম পানি মিশিয়ে গোসল করা ভালো। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করারও রয়েছে আশ্চর্য উপকারিতা। 

ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে সেটি সকালে ঘুম থেকে ওঠার মতো কাজ করে, শরীরের ব্যথা উপশম করতে পারে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

এ ছাড়া কোল্ড হাইড্রোথেরাপি নামের একটি থেরাপিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর এটি হচ্ছে এমন একটি থেরাপি, যেটি ব্যথা উপশমের জন্য এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিৎসা হিসেবে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করার অভ্যাস। এটি বিকল্প ওষুধের একটি অংশ হিসেবে ভারতীয়, মিসরীয় এবং চীনা সংস্কৃতিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

জেনে নিন ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করার ৮ উপকারিতা—

১. আর্দ্রতা হ্রাস করতে পারে:
পানির তাপমাত্রার পরিবর্তন ত্বকের সিবাম উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। গরম বা উষ্ণ জল আপনার ত্বককে শুষ্ক করে ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল সরিয়ে ফেলতে পারে। অন্যদিকে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে তা ত্বকের হাইড্রেশনের মাত্রা বজায় রাখতে ট্রান্সপিডার্মাল পানির ক্ষতি রোধ করে। এটি মাথার ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্যকেও বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।

২. মেজাজ উন্নতি করতে পারে:
কোল্ড হাইড্রোথেরাপির একটি অ্যান্টি-ডিপ্রেসিভ প্রভাব থাকে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো দেখা যায় যে, ঠাণ্ডা পানি ত্বকের ঠাণ্ডা রিসেপ্টরগুলোর মাধ্যমে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক আবেগ পাঠাতে পারে এবং সহানুভূতিশীল স্নায়ুতন্ত্রকে সক্রিয় করতে পারে। এটি বিষণ্নতার উপসর্গও উপশম করতে পারে।

৩. ব্যায়ামের পরে পুনরুদ্ধারে বুস্ট করতে সহায়তা করে:
তীব্র ব্যায়াম করলে শরীর অনেক পরিমাণে ঘামতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, ব্যায়ামের পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে তা রক্তনালিগুলোকে সংকুচিত করে এবং প্রভাবিত টিস্যু থেকে বর্জ্য পদার্থগুলো ফ্লাশ করে। ফলে শরীরে ফোলাভাব, ব্যথা, পেশির ব্যথা এবং টিস্যু ভাঙন কমতে পারে।

৪. শরীরকে উষ্ণ রাখতে পারে:
শুনতে অবাক লাগলেও এটি সত্য যে, শীতকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে তা আপনাকে উষ্ণ থাকতে সাহায্য করতে পারে। কারণ ঠাণ্ডা এক্সপোজার আপনার শরীরে উপস্থিত ব্রাউন অ্যাডিপোজ টিস্যু (বিএটি) সক্রিয় করে। আর এই টিস্যু আপনাকে উষ্ণ রাখতে ও শীতের সময় শরীরের তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৫. সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারে:
সাধরণ স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করতেও সহায়তা করতে পারে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল। ৩ হাজারেরও বেশি সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের ৩০ দিনের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, যারা নিয়মিত ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করেন, তাদের অসুস্থতার হার ২৯ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে।

৬. চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়:

সকাল সকাল ঠান্ডা জলে স্নান করলে ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে। আসলে ত্বক এবং চুলের অন্দরে থাকা প্রকৃতিক তেল যাতে বেশি মাত্রায় ক্ষরণ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে ঠান্ডা জল। ফলে ত্বক বা চুল আদ্র হয়ে গিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে।

৭ ওজন হ্রাস পায় :

আমাদের শরীরে দু ধরনের ফ্যাট থাকে। একটা হল ব্রাউন ফ্যাট, যা শরীরকে গরম রাখতে সাহায্য করে। আর আরেকটি হল হোয়াইট ফ্যাট, যা শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়। এই দ্বিতীয় ধরনের চর্বি গলানোর কথাই চিকিৎসকেরা সব সময় বলে থাকেন। প্রসঙ্গত, ঠান্ডা জলে স্নান করার সময় ব্রাউন ফ্যাট খুব অ্যাকটিভ হয়ে যায়। ফলে একদিকে যেমন শরীরের এনার্জির ঘাটতি দূর হয়, তেমনি ক্যালোরি বার্ন হতে শুরু করে। ফলে শরীরে জমে থাকা অতিরিক্ত সাদা চর্বি ঝড়ে গিয়ে দেহ মেদমুক্ত হয়ে ওঠে।

৮ ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে:

ঠান্ডা পানিতে ডুবকি লাগানোর সময় আমরা শ্বাস বন্ধ করে জলের তলায় যাই। যে মুহূর্তে শ্বাস ফুরিয়ে যায়, অমনি হাপুস হুপুস করে অক্সিজেন টেনে নেওয়ার প্রচেষ্টায় লেগে পরি। এমনটা করার সময় আমাদের ফসুফুসের কর্মক্ষমতা মারাত্মক বেড়ে যায়। তাহলে একবার ভাবুন, যারা রোজ স্নান করছেন অথবা যাদের পুকুরে স্নান করার অভ্যাস রয়েছে, তাদের ফুসফুস কতটা কর্মক্ষম!

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here