টাকা আত্মসাতের অভিযোগজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায় কাজ না করেই টিআর ও কাবিটা প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২২১টি প্রকল্পের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের সাংসদ ১ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেন। কিন্তু অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ না করে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকল্পের কাজ না করায় ক্ষুব্ধ হন। এ জন্য তিনি কয়েকটি প্রকল্পের বিল না দেওয়ার নির্দেশ দেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচির অধীনে টেষ্ট রিলিফ (টিআর ও কাবিটা) কর্মসূচির ১৫৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। এছাড়া আরও ৬৪টি প্রকল্পে ৪৪৫টি সোলার স্থাপনের জন্য ৮৬ লক্ষ টাকায় বরাদ্দ দেয়া হয়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সোন্দড়া পালকুড়ির বাড়ী থেকে সামছু ম্যানেজার বাড়ীর সলিং এর জন্য দেড় লক্ষ টাকা, দক্ষিন নারায়নপুর মিয়াজী বাড়ী পাকা রাস্তা হইতে মাহবুব মাওলানার বাড়ী পর্যন্ত দেড় লক্ষ টাকা, দক্ষিন নারায়নপুর মিয়াজী বাড়ী হইতে পশ্চিম দিকে রাস্তা সলিং দেড় লক্ষ টাকা, আলামিন বাজারের পশ্চিম দিক হইতে আমজাদ হোসেন ভুঁইয়া বাড়ী পর্যন্ত সলিং দেড় লক্ষ টাকা, রাজবাড়ী হইতে শ্রীরামপুর হাই স্কুলের রাস্তা সলিং দেড় লক্ষ, নোয়াগাঁও মমিন পাটওয়ারীর বাড়ীর রাস্তায় মাটি ভরাট ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু প্রকল্প গুলোর কোন কাজ করা হয়নি।

শোয়েব শেখ ও আবুল হাসেমসহ কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, সোলার স্থাপনের টাকাও আতœসাৎ করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহকারী ফরিদ আহম্মেদ বাঙ্গালী প্রতিটি সোলার থেকে ৫-৬ হাজার টাকা করে নিয়েছেন। পাইন বাড়ীর রাজু, মুকবুল, শফিক, মিজান, মো. হোসেনসহ অনেকের কাছ থেকে সোলার দিয়ে টাকা নেওয়ার কারণে তাঁরা ক্ষুব্ধ।

ইছাপুরের হাসেম, নোয়াগাঁও গ্রামের রিপনসহ কয়েকজন বলেন, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার যোগ সাজসে কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন দেলু ও এমপির সহকারি ফরিদ আহম্মেদ বাঙ্গালীসহ ৪-৫ জনের একটি সিন্ডিকেট এসব টাকা ভাগ ভাটোয়ারার মাধ্যমে লুটপাট করে।

তারা আরো জানান, প্রকল্প কমিটির সভাপতি সম্পাদকদের নিকট থেকে প্রভাব বিস্তার করে ডিওতে স্বাক্ষর নিয়ে ৩০ হাজারের স্থলে ১০-১২ হাজার টাকা দিয়ে বাকী টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও সদস্যরা নামমাত্র কাজ করে বাকী টাকা লুটপাট করে নেয়। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্ধ নিয়ে কাজের কাজ কিছুই করেনি, পুরো অর্থই হরিলুট হয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা বোরহান উদ্দিন বলেন, যে সমস্ত প্রকল্পে কাজ হয়নি তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত নেওয়া হবে।

রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জানান, কাজের অস্তিত্ব না থাকায় সংসদ সদস্যের সহকারী ফরিদ বাঙ্গালীর দেওয়া অনেকগুলি প্রকল্পের বিল দেওয়া হয়নি। সেগুলো সংসদ সদস্যকে অবগত করেছি। গত দু বছর থেকে টিআর-কাবিটার কাজের বিষয়ে অনেক গুলি অভিযোগ পেয়েছি।

জানতে চাইলে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আওয়াল বলেন, কাজ না হওয়ার বিষয়টি আমিও শুনেছি। কাজগুলো আদায় করে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বলেছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here