ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহে অনাবাদী জমিতে মাছ চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন মহসিন আলী বকুল।

আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর চাকুরীর আশায় বসে না থেকে নেমে পড়েন মৎস্য চাষে।

১৯৯১ সালে প্রথমে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন।

বর্তমানে ৫২ বিঘা জমির উপর গড়ে তোলা এ খামার থেকে প্রতি বছর কোটি টাকা উপার্জন করছেন। তার মৎস্য খামারেই এখন ৫০ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে। বকুলের এই পরিবর্তনে অনেকেই এখন মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভালকী গ্রামের নিম্ন মধ্যবর্তী পরিবারের ছেলে মহসিন আলী বকুল পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। তিনি কোটচাঁদপুরে গ্রামে মামার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেন। আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন।

এরপর চাকুরীর জন্য ধর্না না দিয়ে ১৯৯০ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মাছ, গরু ও মুরগী পালনের উপর তিনটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগাতে খুঁজতে থাকেন  জায়গা, পেয়েও যান। ঝিনাইদহ শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে কোটচাঁদুপর উপজেলার প্রত্যন্ত অজপাড়া গাঁ পাঁচলিয়া।

সেই গ্রামের অধিকাংশ জমি ছিল অনাবাদী। এসব জমিতে কোন ফসল না হওয়ায় মাঠের পর মাঠ জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতো। সেখানে জন্মাতো ঢোল কলমীর গাছ। বকুল সেখানে প্রথমে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন।

বর্তমানে ৫২ বিঘা জমির উপরে ১০ টি পুকুর রয়েছে বকুলের। এ সবই তার নিজের। এ সব পুকুরে মনোসেক্স জাতের সহজ উৎপাদনশীল নাইলোটিকার পাশাপাশি রুই, কাতলা, মৃগেল, পাঙ্গাশ সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। প্রতি বছর তার খামার থেকে প্রায় কোটি টাকা আয় হয়। এই খামার থেকে ৫০ টি পরিবারের কর্মসংস্থান হচ্ছে ।

মৎস্য খামারের পাশাপাশি পুকুর পাড়ে তিনি নেপিয়ার ঘাস চাষ করে একটি গরুর ফার্ম গড়ে তুলেছেন। এছাড়াও বকুল খামারে বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষ করছেন। এর পাশেই সে আরও ৯০ বিঘা জমি কিনে একটি বিনোদন কেন্দ্র (পার্ক) গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছেন। পরিশ্রমী বকুলের সার্বক্ষণিক সহযোগী হিসেবে পাশে থেকে কাজ করছে তার স্ত্রী শামীম আরা হ্যাপী। সে ফার্মের পরিচালক হিসেবে সব রকম দায়িত্ব পালন করে চলছে।

এলাকাবাসী এই খামার থেকে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামেই মাছ কিনতে পারছেন। পাঁচলিয়া গ্রামের আবুল হাশেম জানান, আমরা গরীব মানুষ। বাজারে যেখানে ১৫০ টাকা কেজি দরে নাইলোটিকা মাছ বিক্রি হচ্ছে সেখানে আমরা ১০০ টাকা দরে কিনছি খামার থেকে।

মৎস্য খামারে কাজ করছে রাসেল নামে এক কিশোর। সে খামারে কাজের পাশাপাশি সপ্তম শ্রেনীতে পড়াশোনা করছে। বকুল মৎস্য খামার ম্যানেজার আবদুল কাদের জানান, এই মৎস্য খামারে ৫০ জনের বেশী অসহায় ও বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।

মৎস্য চাষী মহসিন আলী বকুল জানান, তার খামার এলাকায় ব্যাপক সুনাম অর্জন করলেও খামার পরিচালনা করতে নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ না থাকায় প্রয়োজনীয় সেচ দেওয়া যাচ্ছে না সম্ভাবনাময় এই খামারে। এছাড়া রাস্তা মেরামত না করায় এখানকার মাছ বাজারজাত করতে অসুবিধায় পড়তে হয় প্রতিনিয়ত। অনেকে সময় মাছ পঁচে যায়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রফুল্ল কুমার সিকদার জানান, লেখাপড়া শিখে চাকুরীর দিকে না ঝুঁকে মাছ চাষ করে মহসিন আলী বকুল যা করেছেন তা শুধু ঝিনাইদহে নয় সারা দেশের মডেল হয়ে থাকবে। তাকে দেখে অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন এই মাছ চাষে। এ সব বেকার যুবকদের নিজ উদ্যোগের পাশাপশি সরকারও একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবে এমনটিই আশা মৎস্য কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর।

আহমেদ নাসিম আনসারী/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here