ঝিনাইদহ : টানা অবরোধ আর হরতালে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন সবজি ঝিনাইদহের সবজি চাষী ও ব্যবসায়ীরা। পরিবহন বন্ধ থাকায় সবজির পাইকারি বাজারে কেনাবেচা স্থবির। মোকামেই পচছে পাইকারদের কেনা সবজি। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করতে না পারায় গত এক সপ্তাহে সিম, কপি, বেগুন, পটল, মুলাসহ প্রায় সব ধরনের সবজি অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না কৃষক। সবজি চাষে ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলার চাষীরা। অনেক চাষী ক্ষেত থেকে সবজি বাজারে আনছেন না।

জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহের মাটি ও আবহাওয়া সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদিত হয়। সারা বছরই নানা ধরনের সবজির আবাদ হয়ে থাকে। শীত মৌসুমে সবজি আবাদ বেশ কয়েকগুন বেড়ে যায়। চলতি মৌসুমে এখানে ছয় উপজেলায় ১২ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে।  প্রায় দেড় লাখ লোক প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সবজি উৎপাদন ও বিপনণের সাথে জড়িত। এখান থেকে প্রতিবছর এক লাখ মেট্রিক টন সবজি বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। এ জেলায় ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, লাউ, কুমড়া, শসা, শিম, পটল, ঝিঙে, বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি উৎপাদন হয় প্রচুর পরিমাণে। জেলার ভাটই, গাড়াগঞ্জ, হাটগোপালপুর, চড়ুইবিল বারোবাজার, ডাকবাংলা, নগরবাথান, ও শেখপাড়া সবজির হাট হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। এসব হাট থেকে প্রতিদিন ৫০ ট্রাক সবজি সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়।

কিন্তু চলমান হরতাল-অবরোধে সবজি চাষিদের সে আশায় গুড়ে বালি। বাজারের বদলে ক্ষেতের সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে। চাষীদের এখন এই দুরবস্থা। টানা হরতাল ও অবরোধে পরিবহন সংকট থাকায় আড়ত থেকে সবজি বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাতে পারছেন না পাইকাররা। এজন্য আড়তেই পচছে সব সবজি। শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর এলাকার সবজি চাষী সাজ্জাদুর রহমান জানান, অনেকেই এনজিও হতে ঋণ নিয়ে শিমের আবাদ করেছেন। হরতাল-অবরোধে কিসিত্মর মাফ নেই। এনজিও’র কিসিত্ম কিভাবে পরিশোধ হবে এই আশংকায় চাষিরা চরম ভাবে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সবজি সংরক্ষণেরও কোন ব্যবস্থা না থাকায় শিম চাষীরা আর্থিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ্থ হচ্ছেন। এভাবে হরতাল-অবরোধ চলতে থাকলে ক্ষেত থেকে শিম তুলতে পারবেনা কৃষকেরা। এনজিও’র টাকা পরিশোধে শিম চাষীদের তখন গলায় দড়ি নিতে হবে। মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

ভাইট বাজার এলাকার চাষী  লিয়াকত হোসেন বলেন, এ বছর ঋণ নিয়ে ১০ বিঘা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছি। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে জমি থেকে বাঁধাকপি তুলতে পারছি না। ফলে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে বাঁধাকপি। চাষী আব্দুল আলীম জানান, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করতে তাঁর ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত পাঁচ দিন সবজি তুলতে না পারায় খেতে অনত্মত পঞ্চাশ হাজার বাঁধাকপি পড়ে আছে। এসব বাঁধাকপি ফেটে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে  জানান তিনি। শেখপাড়া বাজারের পাইকারি বাজারের আড়ৎদার আব্দুল হাকিম বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে সবজি কিনে বিপাকে পড়ছেন তারা।

ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জয়নুল আবেদীন বলেন, এ জেলায় বিভিন্ন জাতের সবজি প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়ে থাকে। সবজির ভরা মৌসুমে কৃষক সবজি বিক্রি করতে পারছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে পথে বসবে কৃষক। সরকারিভাবে এলাকায় সবজি প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা নেওয়া হলে এ ক্ষতির হাত থেকে চাষিদের কিছুটা রক্ষা করা সম্ভব।

একটানা অবরোধের কারণে গাড়ী চলাচল না করায় আসতে পারছেনা বাইরের জেলার বড় বড় ব্যবসায়ীরা। ফলে চাষীরা তাদের পচনশীল এ ফসল স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে খুব কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। গুণতে হচ্ছে তাদেরকে লোকসান। অনেক চাষী তাদের পূঁজি হারিয়ে ইতোমধ্যে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, অবরোধের কারণে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা কম দামে সবজি কিনছে পাইকাররা। গত এক মাসে রাজনৈতিক সহিংস কর্মসুচির কারণে জেলার চাষীদের দুই শত কোটির টাকার উপরে ক্ষতি হয়েছে।

আহমেদ নাসিম আনসারী/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here