এস এম শফিকুল ইসলাম,জয়পুরহাটঃ

আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক’ ব্যাংক স’াপনের কথা বলে ৩১,৮৭৭ জন গ্রাহকের কাছে শেয়ার বিক্রির পর ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও আজও জয়পুরহাটে স’াপিত হয়নি ‘আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক’। শেয়ার বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ৩২ লাখ টাকার কোন হিসাবই নাই জেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয়ে। দিনের পর দিন ধর্না দিলেও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না ভূক্তভোগী গ্রাহকদের শেয়ার কেনার লভ্যাংশ সহ টাকা।

জয়পুরহাট জেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে জয়পুরহাটের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ব্যাংক স’াপন করে ঋণ বিতরণ সহ বিভিন্ন সুবিধার কথা বলে সাধারণ মানুষদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে ‘আনসার-ভিডিপি’। শেয়ার কেনার মাত্র ৬ মাসের মধ্যে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবার আশায় হুমরি খেয়ে পড়ে জেলার ৫ উপজেলার মোট ৩১, ৮৭৭ জন গ্রাহক। তারা সোনালী ব্যাংকের ফরমের মাধ্যমে ১০০ টাকা মূল্যের এক বা একাধিক শেয়ার ক্রয় করেন। এর মধ্যে জয়পুরহাট সদর উপজেলার ৪,৪০২জন শেয়ার হোল্ডার ৩,৯৮৮টি শেয়ার ক্রয় করেছেন যার মূল্যে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৪০ হাজার ২শ টাকা। আক্কেলপুর উপজেলায় ৫,৩৩৯ জন শেয়ার হোল্ডার ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৯ টাকায় ৫,২৯৪টি শেয়ার, ক্ষেতলাল উপজেলায় ৫,১৫৩ জন শেয়ার হোল্ডার ৫ লাখ ১৫ হাজার ৩শ টাকার ৪,৮৩৩টি শেয়ার, কালাই উপজেলায় ৩,৯৭৩জন শেয়ার হোল্ডার ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৩শ টাকায় ৪,৬২০টি শেয়ার এবং পাঁচবিবি উপজেলার ১৩০১০ জন শেয়ার হোল্ডার ১৩ লাখ ১ হাজার টাকায় ১১,৫৭৭টি শেয়ার ক্রয় করেন। জেলার ৫ উপজেলার ৩১,৮৭৭ জন গ্রাহকের কেনা ৩০৩১২টি শেয়ার বাবদ ৩১ লাখ ৮৭ হাজার ৭শ টাকার হিসাব গরীব অসহায় এসব গ্রাহকেরা জানে না কোথায় কিভাবে আছে তাদের টাকা।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার বম্বু ইউনিয়নের কাচারী গ্রামের ভ্যান চালক মোবারক হোসেন জানান, সেই সময় ৪০ টাকা মণ দরে আড়াই মন আলু বিক্রি করে অনেক আশা নিয়ে একটা শেয়ার কিনেছিলাম। মনে করেছিলাম, আনসার-ভিডিপি আমাদের মত গরীব মানুষদের সহজ শর্তে ঋণসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করবেন। কিন’ কোথায় শেয়ার কেনার ১৫ বছর পার হলেও আজই আমরা কোন ব্যাংকই দেখতে পেলাম না। ঋণতো দূরের কথা। শুধু কাচারীপাড়া গ্রামের মোবারক হোসেনই নয়। এমন অভিযোগ শেয়ার কেনা ভূক্তভোগী ফারাজী পাড়ার মোকছেদ আলী, কাচারী পাড়ার এনামূল হক, খবির উদ্দীন সহ শত শত গ্রাহকের। কালাই উপজেলার আনসার-ভিডিপির সদস্য হারুঞ্জা গ্রামের আফাজ উদ্দীন, মফিজ উদ্দীনসহ অনেকের মুখেও ব্যাংক স’াপন না হওয়া এবং শেয়ারের টাকা ফেরত না পাওয়ার হতাশা শোনা গেল।

দোগাছী ইউনিয়নের আনসার ভিডিপির দলপতি আজিজুল ইসলাম জানালেন, সেই সময় অর্থাৎ ১৯৯৬ সালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশে বিভিন্ন মানুষের কাছে শেয়ার বিক্রি করে টাকা জমা দিয়েছিল। কিন্ত আজ পর্যন্ত কোন ব্যাংকের মুখ দেখতে পারলাম না। প্রতিনিয়ত আমি ওইসব গ্রাহকের দ্বারা অপমানিত হচ্ছি।

গ্রাহকদের দেওয়া আশ্বাস অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলাতে ব্যাংক স’াপন কখনো হবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে আনসার-ভিডিপির সদর উপজেলার কর্মকর্তা আব্দুল বারিক জানান, গ্রাহকের টাকাগুলো এখন পর্যন্ত তসরুপ হয়নি, তবে সরকারী পলিসির কারণেই সব উপজেলাতেই ব্যাংক স’াপন করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে টাকার খোজে অনেক গ্রাহক জেলা আনসার-ভিডিপির কার্যালয়ে দিনের পর দিন ধর্ণা দিলেও কোন লাভ হচ্ছে না। ব্যাংক স’াপনের মিথ্যা তাল-বাহনা আর নানা অজুহাতই শুধু জুটেছে তাদের ভাগ্যে অনেক কর্মকর্তা আবার সোনালী ব্যাংকে তাদের টাকা আছে মর্মে ওইসব গ্রাহকদের পাঠিয়ে দেয় ব্যাংকে খোজ নেওয়ার জন্য। গ্রাহকরা উপায়ন- না পেয়ে খোজ খবরও নিয়েছেন নিয়মিত।
আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের কোন টাকা কিংবা একাউন্ট আছে কিনা এ ব্যাপারে গত ২০ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার শাখা ব্যবস’াপক দেওয়ান রেজাউন নবীর সাথে কথা হয়। তিনি জানান, আমাদের ব্যাংকে কোন হিসাব নাই। ১৯৯৬ সালে কেবল তারা আমাদের কাছ থেকে শেয়ার কিনেছিল মাত্র।

অভাব অনটনে থাকা গরীব অসহায় গ্রাহকদের কেনা এসব টাকার খোঁজ খবর নিতে আনসার-ভিডিপির জেলা কার্যালয়ে কয়েকদিন গেলেও দেখা মেলেনি জেলা কমাডেন্টের সাথে। সর্বশেষ মুঠোফোনে তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তার খুব একটা ভাল জানা নেই তবে অন্যান্য জেলাতেও এ রকম সমস্যার কথা তিনি শুনেছেন। ভূক্তভোগী গ্রাহকদের মতই তিনিও মনে করেন প্রতিটি উপজেলাতে ব্যাংক স’াপন করে গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা জরুরী।
এদিকে ৫ উপজেলার মধ্যে কেবল পাঁচবিবি উপজেলাতে একটি মাত্র ব্যাংক স’াপন করা হয়েছে। ব্যাংকের শাখা ব্যবস’াপক রমজান আলী জানালেন, পাঁচবিবি উপজেলায় সবচেয়ে বেশী শেয়ার বিক্রির কারণে এখানে আগে ব্যাংক স’াপন হয়েছে। গ্রাহকরা কি ধরনের সুবিধা ভোগ করছেন? এমন প্রশ্নে তিনি জানান, মূলত আনসার-ভিডিপির সদস্যদের উন্নয়নের জন্যই এ ব্যাংকের যাত্রা শুরু। তবে এখানে এস.এম.ই, ব্যাটালিয়ন, ক্ষুদ্র ঋনী সহ কয়েকটি ধাপে ঋণ বিতরণ করা হলেও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমই এখানে বেশী জনপ্রিয়।

দিন আনা দিন খাওয়া সহায় সম্বলহীন এসব সহজ সরল মানুষের কেনা শেয়ারের টাকা লভ্যাংশসহ ফেরত দেওয়া হোক কিংবা প্রতিটি উপজেলা একটি ব্যাংক স’াপন করে আশ্বাস অনুযায়ী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হোক এমন দাবীই এখন ভূক্তভোগী গ্রাহক এবং জয়পুরহাট জেলাবাসীর।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here