ডেস্ক রিপোর্টঃঃ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুই যুবক মেহেদী হাসান ও জামাল উদ্দিন। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় কারাগারে ছিলেন তারা। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই মামলা থেকে তাদের খালাস দেন আদালত। ২২ ফেব্রুয়ারি তারা কারামুক্ত হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পরিবারের দাবি, জেল গেটের মসজিদের কাছে থেমে থাকা মাইক্রোবাসে করে ৮-৯ জন মাস্ক পরা ব্যক্তি জোর করে মেহেদী ও জামালকে তুলে নিয়ে গেছে।
নিখোঁজ মেহেদী হাসান হাতীবান্ধা উপজেলার ঠাংঝারা গ্রামের আব্দুর লতিফের ছেলে। আর জামাল উদ্দিন কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি গ্রামের মৃত হাসমত আলীর ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে হল রুমে নিখোঁজ মেহেদী হাসানের বাবা আব্দুল লতিফ ও জামাল উদ্দিনের ভাই আবুল কালাম আজাদ সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সন্ধান চেয়েছেন।
লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট মেহেদী হাসান ও জামাল উদ্দিনসহ ১৪ জনকে জেএমবি উল্লেখ করে হাতীবান্ধায় থানায় মামলা করা হয়। ওই দিন হাতীবান্ধা থেকে কয়কজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু মেহেদী হাসান ও জামাল উদ্দিন মামলার আসামি, সেটা পরিবারের কেউ জানতেন না। পুলিশ বাড়িতে যাওয়া আসার কারণে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায় তাদের নামে থানায় মামলা হয়েছে। প্রায় ৫ বছর পর ২০২২ সালের ৩০ জুন মেহেদী হাসান যশোরে গাড়ি চালানোর সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন হাতীবান্ধা থানায় পাঠানো হয়। ২২ জুলাই সকালে লালমনিরহাট আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আর জামাল উদ্দিন আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন।
পরে দীর্ঘ দিন মামলা চলাকালে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মামলায় বিজ্ঞ জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক মো. মিজানুর রহমান সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রমাণিত না হওয়ায় মেহেদী হাসান ও জামাল উদ্দিনসহ চারজনকে বেকসুর খালাস দেন। আর ওই মামলায় দুইজনকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি খালাসপ্রাপ্ত মেহেদী হাসান ও জামাল উদ্দিন জেল থেকে বের হওয়ার পরপরই নিখোঁজ হন।
মেহেদী হাসানের বাবা আব্দুল লতিফ ও জামাল উদ্দিনের ভাই আবুল কালাম আজাদ বলেন, খালাসপ্রাপ্ত মেহেদী হাসান ও জামাল উদ্দিন লালমনিরহাট জেলা কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে জেল গেট থেকে বের হওয়ার পর গেটের পূর্বে মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কালো গ্লাস সম্বলিত একটি সাদা মাইক্রোবাসে মাস্কপরিহিত ৮-৯ জন ব্যক্তি জোর করে দুজনকে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
মেহেদী হাসানের বাবা বলেন, ছেলের সন্ধান পাওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। গতকাল বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করলে মেহেদী হাসান কোথায় আছে সেটি তিনি জানেন না বলে জানান।
নিখোঁজ জামাল উদ্দিনের বড় ভাই আবুল কালাম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুক্তি পাওয়া ভাই জামালসহ বাকি খালাস পাওয়াদের রিসিভ করতে আমরা সবাই জেল গেটে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে গেটে পৌঁছামাত্রই সাদা রঙয়ের কালো গ্লাসের একটি মাইক্রোবাসে জামাল ও মেহেদীকে জোর করে উঠিয়ে নিয়ে চলে যায়। এ সময় আমি তাদের পিছু নিতে চেষ্টা করলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অবগত করেছি। জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও তাদের কোনো সন্ধান পাইনি।
এ বিষয় জানতে লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি।
লালমনিরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার ওমর ফারুক বলেন, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আসামিরা কোথায় যাবে সেটি আমাদের দায়িত্ব নয়। তবে তারা নিখোঁজ থাকলেও থানায় খোঁজ নিয়ে পুলিশের সহযোগিতা নেওয়া উচিত।
লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম বলেন, অভিযোগ দুটি পেয়েছি। তদন্ত চলছে। তদন্তে শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।