জুঁই জেসমিন

জুঁই জেসমিন :: গল্প হলেও সত্যি- এক অর্ধ বয়সী মহিলা বাসায় আসে জিকির মায়ের কাছে। চোখে মুখে অদ্ভুত চঞ্চলতা, ড্রেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বুকটা বার বার দু হাতে কেমন করতে থাকে নানা ভঙ্গীমায়, শাড়ীর আচলখানি মেঝেতে শীতল পাটির মতো সৌন্দর্য ছড়ায় একরকম চমকে।
যেন সমস্ত যৌবন তাকে চঞ্চল করে তোলেছে নিরব রাত্রির রূপ সমুদ্রে, বরফ গলা ঢেউয়ের মতো।
জিকিরমার বাসায় নিশি সাবলেট হিসেবে আজই উঠেছে,
নির্লজ্জ মহিলা বেলা শেষে আপা আপা করে জিকির মায়ের রুমে আসে
সেই সন্ধা অবধি এখনো কিসব কিসব বাজে বাজে বকেই চলেছে!
রাত প্রায় গভীর হয়ে আসে, নিশির হতাশায় ভয়ে গলা শুকিয়ে যায় ভয়াল ভাবনায় –
“এ কোন পাপের মোহলে ঠাঁই, আহা এখন কি হবে?
এদের তো স্বভাব মোটেও সুবিধের নয়।”

নির্লজ্জ মহিলা জিকির মাকে হেসে হেসে বলে “ও আপা দ্যাখ আমার বুকটা কি অদ্ভুত সুন্দর লাগতাছে দ্যাখ না দ্যাখ,
যেন এক ভরা যৌবনা যুবতি আমি সেই।”
জিকির মা বলে,,
“তা তো দেখতেই পাচ্ছি
তো এখন ক’জনের সাথে চলছে?
রকিব উল্লাহ কি এখনো আছে নাকি?’
না আপা রকিবুল্লাহর কাছে তেমন আর মাল কড়ি পাইনা, শালারে খেতাই দিইছি,
এহন এক এসপি বাবু আসে, বেশ! যহন যেডা চাই তহন সেডাই দেয়”
তাইলে তো বেশ ভালাই আছিস!
তাইতো ভাবি পিঞ্জিরার দেহে যৌবনের ঝলক এতো কেমনে আইলো?
জিকির মা ও মহিলা উচ্চস্বরে হো হো হো করে হাসে কথায় কথায়।

নিশি
হতবাক!
তাদের কথা বার্তা শুনে,
এই বয়সে এসব কথা,
ভয়ে তার বুক ধসধস করে, আঁটসাঁট ঘরে জড়সড় হয়ে আল্লাহ আল্লাহ করে,
নিশির নীরবতা দেখে মহিলা বলে, চুপ কেন ফুল যুবতী,
বেলুন লাগবে বুঝি?
এ বলে হা হা হা করে হেসে, জিকির মাকে বলে,
ও আপা আজ বেগুন ওয়ালা আসবেনা, বেলুন ধরে-?
বুড়ি বলে এই তুই চুপ করতো,
বুঝিস না,
পাখি মা আমার নতুন আসছে,
ভয় পাবেনা?
মহিলা আবার হো হো হো করে হেসে বলে,
ওমা ভয় কিসের ফুল যুবতীর তো এখন খেলা করার সময়,
ফুল যুবতী? কি গো তোমার মন খারাপ?

মন খারাপ করোনা! জগতে অনেক রঙ, নিজ খুশিমত রঙ নিয়ে রাঙাও, খেলাও, ফুর্তি করো। তবে সাদা রঙে রাঙিওনা এ রঙে হরেক বেদনা!
-শহরের সব যান্ত্রিক মিউজিক ক্রমশ নীরবতায় ঢেকে গেলে রজনীর মুখোমুখি শুধু নিজের প্রতিচ্ছবি হাজারো প্রশ্নের ঝড় তোলে। সাদা রঙে অনেক বেদনা এই কথা ঠিক বুঝে উঠতে পারলোনা নিশি।
নিশি, ঢাকা কেন্দ্রীয় কলেজে ইংলিশে অনার্স থার্ড ইয়ার পড়ে। ব্যতিক্রম মহিলা হোস্টেলে সে থেকেছে দীর্ঘদিন,
কিছু সাশ্রয়ের জন্য হোস্টেল ছেড়ে সাবলেট বাসায় ওঠে। হোস্টেলে হাজার পাঁচেক টাকা লাগে খাওয়া দাওয়া সবসহ। মাত্র পনেরো শো টাকা সাবলেট রুম ভাড়া পাওয়ায়- সে পরিবারের কথা ভেবে স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিলো। বেশির ভাগ লাঞ্চসহ বিকেলের নাস্তাটা বাইরেই হয়ে যেতো তার, পার্ট টাইম জব আর টিউশনিতে নিজের খরচ নিজেকেই ভাবতে হতো। ঘরে তার অসুস্থ বাবা, তার মাকেই সামাল দিতে হয় পরিবার চালাতে। আর এখানে এসেই এই মহা বিপদের মুখোমুখি
ভয়ে কোনো ক্রমেই কান্না সামলাতে পারেনা, এতো রাতে এই ঢাকা শহরে,
কি করবে না করবে ভেবে পায়না, সকাল হওয়ার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনে,
রাত পোহালেই আবার সে হোস্টেলে ফিরে আসবে।
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ,

নিশির বুকটা ধক করে উঠে এতো রাতে আবার কে এলো
জিকির মায়ের কাছে ?
মহিলা ঝটপট দরজা খুলে খুশির সুরে বলে ওয়াও , মুহির ভাই?
মুহির রুমে ঢুকে, নিশি এক নিশ্বাসে আল্লাহর নাম জিকির করতে থাকে,
কেমন বিশ্রী চাহনিতে মুহির নিশিকে দেখছে,
আর ফিসফিস করে বলে, জিকির মা নতুন পাখি বুঝি?
বাহ সেই লাভলী মালতো হে! জিকির মা নিশির অবস্থা দেখে, হেসে হেসে বলে -ওমা এ আমার ছেলের মত খুব ভালা, ভয়ের কিছু নেই!
অনেক রাত হয়েছে তুই ঘুমা গা ঘুমা!
ও পিঞ্জিরা তুই মুহিকে নিয়ে ওই ওই রুমে গল্প করগে, ওনিশি মা ঘুমা, তুই ঘুমা।।
মহিলা মুহিরের হাত টেনে পাশের ঘরে নিয়ে যায়।
রাতের চিবুকে রাত সহস্র শিরোনামে কত খেলা দেখে, যে খেলার সনদ দিনের আলোয় অদৃশ্য হাওয়া মাত্র, যা কেউ জানেনা, কেউ দেখেনা!

হোস্টেল হতে বই প্রেমী একজন মানুষ চলে যাওয়াতে ঘরটা কেমন শূণ্যতায় বেদনার সুর ছাড়ছে, আপুটা ছিলো; যেন রবীন্দ্রনাথ ছিলো, পৃথিবীর সব মহা কবিরাই ছিলো, ছিলো মহা কবি গ্যাটে, এক গুচ্ছু রাইটারের বই কি অরূপ ভাবে সাজানো ছিলো তার বিছানা ও টেবিলে। বই যেন তার আত্মার আত্মীয়, দুচোখের অনাবিল সুখ সৌন্দর্য। নিপা বলে, ও জেমি আপু
নিশি আপু হোস্টেলে নেই রুমটা বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগে, খুব কান্না পাচ্ছে ঘুম আসেনা নিশি আপুর জন্য, আপুকে আমরা একবার ফোন করি? আমি ঠিক সমভাবনা ঝেরে বালিসের ভেতর থেকে ফোনটা বের করে কল দিলাম, ফোন রিসিভ করেই নিশি আপু চিৎকার করে কেঁদে উঠে, বার বার জিজ্ঞেস করি আপু কি হয়েছে তোমার? কি কোনো সমস্যা?
কাদঁতে কাঁদতে বলে, আমার ভাল লাগছেনা, খুব মাথা ধরেছে,
আমি বলি আপু সকাল হলেই আমি আর নিপা তোমার কাছে যাবো,
নতুন বাসাতো প্রথম প্রথম খারাপ লাগবেই আপু,
পরে সব ঠিক হয়ে যাবে,

এখন ঘুমাও তো-আপু। নিশি আপু নীরব হয়ে ভাবে এসব বলি কি করে? জানিনা এ রাতে আমার কি সর্বনাশ ঘটে—!! কিছুক্ষণ পর জবাব আসে কাঁপা মৃদু স্বরে
ঠি, ঠিক আছে, শুধু দোয়া রেখো দুজনে তোমরা -“এ বলে
ফোন রেখে দেয়!
কিছুক্ষণ পরেই নিপার ফোনে টুং করে নিশি আপুর এসএমএস আসে-
আমি ভাল নেই নিপা, জেমি।

ভয়ংকর পরিবেশে আমি,
জিকির মা সুবিধের না!
দোয়া করো যেন ভাল থাকি,
ভোর হলেই ফিরে যাবো, থাকবো না।
ম্যাসেজ পরে নিপা আর আমি
আর ঘুমুতে পারিনি!!
নানান প্রশ্নের ঝড় বয়ছে,
কি হলো নিশি আপুর, জিকির মা তো অনেক ভাল, সব সময় তসবি হাতে, জিকির করে, মাজারে বেশির ভাগ পরে থাকে,
তাহলে?
দু জনে ভোরের প্রতিক্ষায় রইলাম
তারপর…………..

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here