জামালপুর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নব অববাহিকার বিস্তৃর্ণ চরাভূমিতে আবাদকৃত টমেটোর ফলন বিপর্যয়ের পাশাপাশি বাজারে দাম হ্রাস পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।

চলতি শীত মৌসুমে সদরের নান্দিনা রানাগাছা, লক্ষ্মীরচর, তুলশীরচর ও শরিফপুর ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র চর অংশে প্রায় কয়েক হাজার বিঘা জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, বিগত ২০ বছর আগেও জামালপুরের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে দু’কুল ঘেঁষে থৈ থৈ পানি ছিল। ছিল নদ ভর্তি নানা প্রজাতির মাছ। কিন্তু উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করা এবং পাহাড়ি ঢলের সাথে মাটি ও বালু এসে ভরাট করে দিয়েছে ব্রহ্মপুত্রকে। বর্ষা মৌসুমে নদ পানিতে ভরাট থাকে, আর শুষ্ক মৌসুমে পানি শূন্যতায় ভোগে। কার্তিক অগ্রাহায়নে ব্রহ্মপুত্র তার রূপ চেহারা পাল্টে জীর্ণ শীর্ণ হয়ে পড়ে। তখন তপ্ত বালির স্তুর পড়ে নদ অববাহিকায়। বিরাট তপ্ত বালির সত্মরে টেকসই ফসল হিসেবে কৃষি বিজ্ঞানীরা উন্নতজাতের টমেটো আবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়। সেই হতে চরাঞ্চলের প্রায় লড়্গাধিক মানুষ প্রতি বছর টমেটোসহ নানা জাতের সবজি আবাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকা বর্তমানে সবজি উৎপাদনে ভান্ডার হিসেবে দেশব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে। উন্নয়ন, উদয়ন, সবল, সুফলা, চায়নাসহ নানা জাতের টমেটো আবাদ হচেছ এই বিশাল চরে।

চাষিদের সাথে আলাপ হলে তারা জানান, এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদে মোট খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন পাওয়া যায় ৭০ থেকে ৮০ মন। ফলন ভালো হলে এবং আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে প্রতি বিঘায় লাভ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। লাভজনক বিধায় চরের কৃষকরা প্রতি মৌসুমে টমেটো আবাদে সর্বস্ব বিনিয়োগ করছেন। শরীরের ঘাম ঝড়াচ্ছেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, অন্যান্য বছর আবাদ ভালো হলেও এবার বীজের মান খারাপ থাকায় ফলন ভালো হয়নি। তারা জানান, এবার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বীজের মান এতটাই নিন্মমানের ছিল যে, টমেটোর চারা রোপনের কয়েক দিন পর গাছ ফুলে যায় এবং পাতা পচা রোগে আক্রানত্ম হয়। তার উপর দেখা দেয় অজানা ভাইরাস। ভাইরাসে কৃষকদের ড়্গেত নষ্ট হয়ে যায় এবং ফলন কম হয়।

লক্ষ্মীরচরের কৃষক মোসত্মফা ও দারোগ আলী ইউনাইটেড নিউজ টয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাজারে উৎপাদিত টমেটো ক্রয় বিক্রয় শুরম্ন হয়েছে। মৌসুমের শুরম্নতে দাম ছিল প্রতিমণ ১ হাজার থেকে ১২ টাকা। কিন্তু দাম কমতে কমতে এখন প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে ৪শ’ টাকা।

সদরের নরম্নন্দি ইউনিয়নের কোচনধরা,তারাগঞ্জ, ছাতিয়ানতলা, গজারিয়া এলাকার কৃষকদের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমাদের এলাকায় টমেটোর আবাদ খুব একটা ভালো হয়নি। বীজের মান ছিল খুবই খারাপ। কীটনাশক ছিটিয়েও কাজ হয়নি। এনিয়ে বিভিন্ন মিডিয়াতে অনেক লেখালেখি হয়েছে। ভূমিমন্ত্রীসহ কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা সরেজমিনে ড়্গেত পরিদর্শন করেছেন। দিয়েছেন অনেক পরার্মশ। কিন্তু তার পরেও কাজ হয়নি।

বীজের মান খারাপ হওয়ায় প্রতি বিঘা জমিতে এবার ফলন উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। তারা আরও জানান, যেখানে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৮০ মণ ফলন পাওয়া যেত সেখানে শুধু বীজের মান খারাপের কারণে ৩৩ থেকে ৩৫ মণের বেশি ফলন পাওয়া যাচ্ছে না।

গত ডিসেম্বরের অর্ধেক থেকেই রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিলস্না, মৌলভীবাজার, নোয়াখালী, সিলেট, বি- বাড়িয়া, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ থেকে পাইকার নান্দিনা এসে ট্রাক ভর্তি টমেটো কিনে নিচ্ছেন।পাশাপাশি এক শ্রেণীর ফঁড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগির দাপটে চাষিরা কম দামেই টমেটো বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে, চরবাসীকে এবার কয়েক কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ছাইদুর রহমান/জামালপুর

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here