স্টাফ রিপোর্টার :: জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগ দিতে শুক্রবার নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অধিবেশনে তিনি বাংলাদেশকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করা দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে নতুন প্রস্তাবনা উপস্থাপন করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইট বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে।
মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২২ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় ইতিহাদ এয়ারওয়েজে করে যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান বিমাবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় দেবেন।
শেখ হাসিনা স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা ২৫ মিনিটে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। সেখানে তাকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।
শেখ হাসিনা ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ (ইকোসোক) চেম্বারে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ- ইউএইচসি) বিষয়ে উচ্চ পর্যয়ের বৈঠকের সমতুল্য হিসেবে আয়োজিত বহুপক্ষীয় প্যানেলে সহ-সভাপতি থাকবেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও সহ-সভাপতি হিসেবে যোগ দেবেন। প্যানেলের বিষয় হলো- সবার জন্য ন্যায্যতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চালক ইউএইচসি।
তিনি অছি পরিষদে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিষয়ে উচ্চ পর্যয়ের বৈঠকের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে নিজ দেশের বক্তব্য তুলে ধরতে পারেন। সেই সাথে তিনি সাধারণ অধিবেশন কক্ষে জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন এবং জাতিসংঘ সদরপ্তরের ১ নম্বর সম্মেলন কক্ষে টিকা নিয়ে কাজ করা জোট জিএভিআই আয়োজিত ‘রিকগনাইজিং পলিটিক্যাল লিডারশিপ ফর ইম্যুনাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৪ সেপ্টেম্বর লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলের কেনেডি রুমে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন। সেই সাথে তিনি জাতিসংঘ সদরপ্তর বুথে জাতিসংঘ মহাসচিবের উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়ন বিষয়ক বিশেষ দূত রানি ম্যাক্সিমার সাথে বৈঠক করবেন এবং জাতিসংঘ সদরপ্তরের ৭ নম্বর সম্মেলন কক্ষে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপ্টেশন আয়োজিত পার্শ্ব-অনুষ্ঠান ও নর্থ ডেলিগেট’স লাউঞ্জে জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত রাষ্ট্রীয় মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
এছাড়া, তিনি জাতিসংঘ সদরপ্তরের ১১ নম্বর সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন ও ওআইসি সচিবালয়ের আয়োজনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব-অনুষ্ঠান, ইকোসোক চেম্বারে সমসাময়িক বিশ্বে মহাত্মা গান্ধীর প্রাসঙ্গিকতা শীর্ষক অনুষ্ঠান এবং লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত অভ্যর্থনায় অংশ নেবেন।
শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর অছি পরিষদে টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি সম্মেলন) ওপর উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে ‘লোকালাইজিং দ্য এসডিজিস’ শীর্ষক লিডার’স সংলাপ ৪-এ কো-মডারেটর করবেন এবং কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসে সরাসরি আলোচনামূলক সংলাপ ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথোপকথন’ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
একই দিনে তিনি লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পানির সভাপতি কেভিন রাডের সাথে বৈঠক করতে পারেন। সেই সাথে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ হাউসে নৈশভোজে অংশ নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী ২৬ সেপ্টেম্বর লোটে নিউইয়র্ক প্যালেস হোটেলের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে এক্সনমোবিল এলএনজি মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ইনকের চেয়ারম্যান অ্যালেক্স ভি. ভলকভ, ইউনেস্কোর সাবেক মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার বিল গেটস ও আইসিসি কৌঁসুলি ফাতোউ বেনসোউদার সাথে বৈঠক করবেন এবং একই হোটেলের হোলমসে মার্কিন চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেবেন।
সেই সাথে তিনি ইউনিসেফ হাউসের লাবোইসি হলে ইউনিসেফ আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে এক সন্ধ্যা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
শেখ হাসিনা ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরপ্তরের ১ নম্বর সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য ও প্রতিবন্ধিতা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব-অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য রাখবেন।
২৮ সেপ্টেম্বর সকালে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংবাদ সম্মেলনে তার বক্তব্য দেয়ার কথা রয়েছে। বিকালে তিনি নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট মারকুইজ হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেয়া সংবর্ধনায় অংশ নেবেন। সন্ধ্যায় তিনি জাতিসংঘ সচিবালয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আবুধাবি হয়ে ঢাকায় পৌঁছার জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর রাত ৯টায় ইতিহাদ এয়ারওয়েজে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন। জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন।
তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় রাত ৮টায় আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। সেখান থেকে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার পথে যাত্রা করবেন। ১ অক্টোবর সকাল ৫টা ৩৫ মিনিটে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে বুধবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে আলোচনায় আসবে। এতে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমি রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য ত্বরিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টা চাইবে বাংলাদেশ। সেই সাথে অধিবেশনের ফাঁকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে চীন ও মিয়ানমারের সাথে বৈঠকের ইঙ্গিতও দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।