সমপ্রতি বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আল-কায়েদার শীর্ষনেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরির ২৯ মিনিটের যে অডিওবার্তা প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়ে যেমন আলোচনা চলছে সর্বসত্মরে তেমনি জঙ্গি হামলার আতঙ্কে ভূগছে গোটা-জাতি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করা ওই বার্তাটিতে পুরোপুরিই জামাতী-হেফাজতির বক্তব্য প্রতিফলিত হয়েছে তাও সবার কাছে অত্যনত্ম স্পষ্ট। কণ্ঠস্বরটি সত্যি সত্যি জাওয়াহিরির বলেই যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট অধ্যাপক তাজ হাশেমী নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া জাওয়াহিরির নামে অন্য কেউ এধরনের মিথ্যে অডিওবার্তা  প্রচার করলে আল-কায়েদা তার প্রতিবাদ করতো নিশ্চয়ই। উক্ত অডিওবার্তার প্রভাব ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে, পুলিশকে হত্যা করে ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে জেএমবির দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন আসামিকে ছিনতাই করলো। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এবং সাধারণ মানুষ যে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ওই অডিওবার্তা এদেশের নারীর জন্য কী পরিমানে অশনিসংকেত বয়ে আনছে সেকথা কেউই বলতে চাচ্ছে না।

নারীর প্রতি সামপ্রদায়িক-ধর্মান্ধ-মৌলবাদী-জঙ্গিবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার প্রয়োজনীয়তা নেই বলেই আমার মনেহয়। মালালা ইউসুফজাইকে পশ্চিমাবিশ্ব সমর্থন দেয়ার পরও তাঁকে কিভাবে হত্যার হুমকি দিচ্ছে তা বিশ্ববাসী ভালমতোই দেখছে। তাছাড়া কয়েকদিন আগে সিরিয়ায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, যা গত ১৭ই ফেব্রুয়ারী তারিখে বাংলাদেশের অধিকাংশ জাতীয় পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছে। ফাতেয়াম নামক সেদেশের একজন তরুণী ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। ‘মানুষ সামাজিক জীব’ কথাটি বহুল প্রচলিত এবং অকাট্য সত্য, তাই মেয়েটি নিজেকে সামাজিক জীব মনেকরেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক ব্যবহার করছিল। কিন্তু আলকায়েদী-তালেবানী-হরকাতুলী-জেএমবী-জামাতী-হেফাজতী দর্শন অনুযায়ী নারী যেহেতু মানুষের পর্যায়ে পড়ে না, তাই তারা কোনোমতেই নারীকে সামাজিক জীবের মধ্যে অনত্মর্ভূক্ত করতে রাজি নয়। সেজন্যে ফেসবুক ব্যবহারের অপরাধে সেখানকার আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট সংগঠন ‘দ্য ইসলামিক ষ্টেট অব ইরাক এন্ড দ্য লেভান্ট(আইএসআইএল)’-এর সদস্যরা মেয়েটিকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের শরীয়া আদালতে হাজির করে। কোনো নারীর ফেসবুকে একাউন্ট থাকা ব্যাভিচারের শামিল বলে উল্লেখ করে ওই আদালত ফাতেয়ামের প্রতি পাথর ছুঁড়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়। আইএসআইএল-এর সদস্যরা সেভাবেই তাঁকে হত্যা করলো।

বাংলাদেশের নারীরা এখনও বিনাবাধায় ফেসবুক ব্যবহার করছে, তবে জাওয়াহিরির অডিওবার্তার অংশবিশেষ শুনে আমি প্রচন্ড ভীতসন্ত্রস্থ। দেশটি জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে যাচ্ছে কি-না সেটাই ভাববার বিষয়। ইতোমধ্যে জামাতে ইসলামের অঙ্গসংগঠন ‘শিবির’ বিশ্বের অন্যতম সন্ত্রাসী সংগঠনের খেতাব পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আনত্মর্জাতিক তথ্য ও মতামত সরবরাহকারী ওপেন সোর্স সংস্থা আইএইচএস-এর সন্ত্রাসের সূচকে বিশ্বের ১০টি সক্রিয় বেসরকারী সশস্ত্র গোষ্ঠির তালিকার ৩য় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশের ইসলামী ছাত্রশিবির। দেশের ৬৮টি কারাগারে ২৫০০ জঙ্গিকে গ্রেফতার রাখার পরও অবস্থার কতটুকু উন্নতি হয়েছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। জঙ্গিবাদীতা এখানে এতই শক্তিশালী আকার ধারণ করেছে এবং করতে যাচ্ছে যে, ভবিষ্যতে এদেশের নারীরা ফেসবুকের নামই উচ্চারণ করতে পারবে কি-না সন্দেহ প্রকাশ করেই এই লেখার অবতারণা করছি। সামপ্রদায়িকতা এবং নারী-অধিকার শব্দদুটি সম্পূর্ণরূপে পরস্পরবিরোধী। সত্তর-আশির দশকে আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম তখন মেয়েদেরকে এখনকার মতো নাক-মুখ বেঁধে স্কুল-কলেজে যেতে হত না, কারণ তখন সামপ্রদায়িকতার বিষবাস্প এখনকার মতো এতটা ছড়িয়েছিল না। ৫ মে শাপলা চত্তরে কয়েক লক্ষ হেফাজতীর মধ্যে একজন নারীকেও দেখা যায়নি বরং একজন নারী-সাংবাদিক পেশাগত প্রয়োজনে সেখানে যাওয়ায় তাঁকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করতে ওদের বাধেনি কারণ ওরা নারীকে ভোগের বস্তু ছাড়া কিছুই মনে করে না। জামাতি-হেফাজতিদের প্রধান লক্ষ্য নারীকে যুগ যুগ ধরে দাসী বানিয়ে রাখা। ওদের বক্তব্য নারী এসেছে পুরুষের সেবা করার জন্য। ইহকালেও নারী দাসী, পরকালেও নারী দাসী; ওরা পরকালে হুর পাবে আর নারী কিছুই পাবে না। উত্তরাধিকারে নারীর সম্পত্তির কথা শুনলে ওদের গা জ্বলে। ওরা ফতোয়ার রাজত্ব কায়েম করতে চায়। নারীকে ওরা দোর্‌রা মারে, পুরুষকে মারে না। ওদের জাত-ভাইয়েরাই অতীতে নারীকে চিতায় তুলতো। জাওয়াহিরির এদেশীয় এজেন্ট হেফাজতে ইসলামের জন্মই হয়েছে নারীর বিরুদ্ধে, তা-কি মানুষ ভুলেছে ? নারীকে মানুষের পর্যায়ে আসতে না দেয়ার লক্ষ্যেই হেফাজতে ইসলাম নামক অপসংগঠনটির সূত্রপাত হয়েছিল। ২০১০ সালে সরকার যখন খসড়া নারী-নীতি প্রণয়ণ করতে যাচ্ছিল তখন তা বাতিল করতে সরকারকে বাধ্য করানোর জন্য নেজামে ইসলামী পার্টি, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফতে ইসলাম, ওলামা পরিষদ এবং আরও কয়েকটি সামপ্রদায়িক দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল হেফাজতে ইসলাম; যে সংগঠনের ঘোষণা ‘নারীরা হচ্ছে তেঁতুলের মতো’। গার্মেন্টসে মেয়েদের চাকরি করাকেও বেহায়াপনা উল্লেখ করে ওদের নেতা আহমদ শফি বলেছেন, মেয়েদের ক্লাস ফোর-ফাইভ এর বেশি লেখাপড়া করানো ঠিক নয়।

শাপলা চত্ত্বরে সেদিন হেফাজতের হাজার হাজার মানুষ মারা যাওয়ার মিথ্যে গল্পটির পক্ষে জাওয়াহিরির কণ্ঠও শোনা গেল। মিথ্যে দর্শন যাদের ভিত্তি, মিথ্যের বেসাতি বলায় তাদের একটুও বাধে না। সেদিন লোক মারা গেলে সেইসব মৃত ব্যাক্তিদের মা-বাবা-আত্মীয়স্বজন-কেউই কি ছিল না ? কারো আপনজন মারা গেছে এমন দাবী আজ পর্যনত্ম কেউ করলো না, শাপলা চত্তরের কোথাও কোনো গুলির চিহ্ন দেখা গেল না, আর জাওয়াহিরিরা এখনও সেই পচাগল্প করেই চলেছে। আমি লক্ষ্যকরি যে, ওদের অনুসারীরা ওইসব মিথ্যে ঠিকই বিশ্বাস করে। কারণ একটাই, তা হলঃ মুর্খতা, অজ্ঞতা, অশিক্ষা, কুশিক্ষা, অন্ধত্ব। অন্ধত্বই জঙ্গিবাদের মূল কারণ, একমাত্র উৎপাদনশীল এবং বৈজ্ঞানিক শিক্ষাই একটি জাতিকে অসামপ্রদায়িক চেতনা দিতে পারে, দূর করতে পারে অজ্ঞতা। জঙ্গিদমনের জন্য ইদানিং বিভিন্নজন বিভিন্নরকম তত্ত্ব হাজির করছেন বটে, তবে কেউই সমস্যার মূল জায়গায় যেতে চাচ্ছেন না। বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন জঙ্গিদমন করতে হলে দেশে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করতে হবে, কেউ বলছেন বিশেষ ট্রাস্কফোর্স গঠন করতে হবে, কেউ বলছেন রোহিঙ্গা প্রবেশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরদারী বৃদ্ধি করতে হবে। সুজনের সভাপতি বদিউল আলম মজুমদার বলছেন, ‘মানুষ নিম্ন আদালতে বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে। এভাবে সাধারণ মানুষের প্রতি অবহেলার কারণেই জঙ্গিবাদের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে।’ এডভোকেট সুলতানা কামাল জঙ্গিবাদকে ‘আনত্মর্জাতিক রাজনৈতিক খেলা’ বলে মনত্মব্য করেছেন আর মাহমুদুর রহমান মান্না মনে করেন জঙ্গিবাদ দমনে ধারাবাহিক লড়াই এবং সাংস্কৃতিক লড়াই প্রয়োজন। অনেকেই আবার সরকারের ব্যর্থতার কথা বলছেন। গুণীজনদের অনেকেই বলছেন, জঙ্গিদমনে আলেম-ওলামাদের কাজে লাগাতে হবে। তাঁদের কেউ বলছেন জঙ্গিদের অর্থের উৎস বন্ধ করতে হবে, আবার অনেকেই বলছেন জামাতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে হবে। হ্যাঁ, ধর্মভিত্তিক রাজনীীত অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, তবে সামপ্রদায়িকতার মূল উৎপত্তিস্থল বন্ধ করতে হলে ঢেলে সাজাতে হবে শিক্ষা-ব্যবস্থাকে।

মাদ্রাসাশিক্ষা নামক একধরনের অনুৎপাদনশীল-অবৈজ্ঞানিক শিক্ষা হচ্ছে হেফাজতি-জামাতিদের মূলভিত্তি। মৌলবাদের দাপট এদেশে বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, কারণ ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা। আলিয়া মাদ্রাসা, কওমী মাদ্রাসা, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, এবতেদায়ী মাদ্রাসা, হাফেজি মাদ্রাসা, ক্যাডেট মাদ্রাসা। ১৯৭১ সালে দেশে আলিয়া মাদ্রাসা ছিল ১ হাজার এখন সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজারের উর্ধ্বে। কওমী মাদ্রাসার সংখ্যাও অস্বাভাবিক পরিমানে বেশি। মজার ব্যাপার যে, মাদ্রাসা শিক্ষার প্রবক্তাদের কেউই তার নিজের ছেলেকে মাদ্রাসায় পড়ায় না। গোলাম আযম, নিজামী, মুজাহিদ, বাবুনগরী কেউই নিজের সনত্মানকে মাদ্রাসায় পাঠায়নি। প্রফেসর আবুল বারাকাত কয়েক বছর ধরে মেধা ও শ্রমদিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষার উপর বিসত্মর গবেষণা করেছেন। ৬০টি আলিয়া ও ৬০টি কওমী মাদ্রাসার উপর পরিচালিত তাঁর জরিপে দেখা গেছে, কওমী মাদ্রাসার ৮৫ শতাংশই বোর্ডিং-এ থেকে লেখাপড়া করে যারা সবাই ইসলামের নামে সবকিছু করতে প্রস্তুত, এমনকি নিজের জীবন পর্যনত্ম দিতে প্রস্তুত এদের কেউ কেউ, বেহেসেত্ম যাওয়ার লোভে নেতাদের হুকুমে মানুষ হত্যা করতেও ওরা প্রস্তুত থাকে। হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সহ ভয়ঙ্কর সব জঙ্গি সংগঠনের উৎপত্তি মাদ্রাসা থেকে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধুনিক কোনো কিছুতেই এদের বিশ্বাস নেই। মসিত্মস্কের সৃজনশীল কোষগুলোকে নাট-বল্টু দিয়ে আটকানো। মানবতা কি ওরা তা জানে না। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের কিছুই ওদের মসিত্মস্কে ঢুকে না। উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কহীন, অবৈজ্ঞানিক ও বাসত্মবতাবিবর্জিত শিক্ষা দেয়ার স্থানের নাম মাদ্রাসা। কওমী মাদ্রাসাসমূহে বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ও বিজ্ঞান পাঠদান নিষিদ্ধ। সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস যেখানে পড়ানো হয় না সেগুলিকে কিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলা হয় তা আমার মাথায় আসে না। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নশাস্ত্র, দর্শন, ধর্মের উৎপত্তি ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, নৃ-বিজ্ঞান, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মৌলিক অধিকারের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক, বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক ক্রমবিকাশ, বিশ্ব-ব্যবস্থা এসব বিষয়ে পাঠদানের কোনো বালাই সেখানে নেই। মাদ্রাসা থেকে পাশ করা ছাত্ররা দেশ ও সমাজের কী কাজে আসবে সে বিবেচনা না করেই আমাদের সরকারসমূহ ওদের সার্টিফিকেট দেয়, সমমান দেয়। ধর্মান্ধ মানুষের ভোট পাওয়ার লোভে রাজনৈতিক দলগুলো জাতির জন্য আত্মঘাতি কাজ করতেও পিছপা হয় না, এভাবে তারা সামপ্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়, জঙ্গি তৈরি করে, আবার জঙ্গি দমন করার কথাও বলে। কিন্তু জঙ্গি সৃষ্টির কারখানা সচল রেখে দু’একজন জঙ্গিকে গ্রেফতার করার মধ্যে ক্ষতি ছাড়া লাভ নেই।

কওমী মাদ্রাসাসমূহের ছাত্রদেরকে শার্ট-প্যান্ট পরতে দেখা যায় না। ‘ছাত্র-ছাত্রীদের’ কথাটা না বলে শুধু ‘ছাত্রদের’ বলছি কারণ সেখানে নারী শিক্ষা নেই বললেই চলে। প্রফেসর আবুল বারাকাতের গবেষণায় এসেছে কওমী মাদ্রাসমূহের ৯১ শতাংশেরও অধিক শিক্ষার্থী ছেলে। আলিয়া মাদ্রাসাগুলোতেও প্রায় একইরকম চিত্র। ওদের দর্শন অনুযায়ী মহিলারা মানুষ নয়, ওরা নিজেরা মানুষ আর মহিলারা অমানুষ, মহিলারা বড়জোড় ওদের সেবিকা। এ প্রসঙ্গে নারীদেরকে বলছি, শোনো। ধর্মান্ধরা কতটুকু নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তা তোমরা মেপে দেখেছ কি? কয় মসজিদে পুরুষের পাশাপাশি তোমাদের নামাজের ব্যবস্থা আছে, তা কি তোমরা দেখেছ? ওরা কি ঈদের নামাজের জন্য তোমাদের ঈদগাহে ডেকেছে? কোন মসজিদ বা কোন মাদ্রাসার কমিটিতে ক’জন নারী সদস্য আছে তা কি জান? কোনো ইসলামী জালসায় নারী-মাওলানাকে ওয়াজ করতে দেখেছো? তাছাড়া, ৭১ সালে আমাদের মা-বোনদের ওরা কি করেছিল ভুলে গেছো ? এখনও কিন্তু ৭১-এর কর্মের জন্য ওরা অনুতপ্ত হয়নি। অনুতপ্ত হওয়ার প্রশ্নটিও অবানত্মর। কারণ ওদের দর্শনই নারীকে বন্দী রাখার দর্শন। সুযোগ পেলে আবার ৭১-এর মতোই করবে। শোনো নারী, ওদের ১৩ দফা মানলে এমপি মন্ত্রী হওয়া দূরের কথা গার্মেন্টেসের চাকুরিটাও তোমরা করতে পারবে না। দেশের অর্থনীতিও ধবংস হয়ে যাবে। নারীর মনটা নরম তাই নারীর হাত দিয়েই কোরবানির পশুর চামড়া, যাকাত, ফেতরা, অনুদান, নগদ সাহায্য বেশি নেয় ওরা। নারীর নিকট থেকে ওসব সাহায্য নিয়ে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে নারীবিদ্বেষী দাবী আদায়ে ধবংসাত্মক কার্যকলাপ করে ওরা। ওরা মানবতার শত্রু, নারীর দুশমন।

জাওয়াহিরির অডিওবার্তা প্রচারকারী, জামাত-শিবিরের ওয়েবসাইট ‘বাঁশের কেল্লা’-র পেজ এ্যাডমিন রাসেল বিন সাত্তারকে গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে জামাত-শিবিরের সঙ্গে আল-কায়েদার কানেকশনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে ( সূত্র: জনকণ্ঠ- ১৯/০২/২০১৩)।  জানা গেছে যুদ্ধের ফ্রন্ট হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আল-কায়েদার টার্গেটে রয়েছে বাংলাদেশ এবং সেলক্ষ্যে জাওয়াহিরি তিনবার বাংলাদেশে এসেছেন। আরও জানা গেছে নিহত হওয়ার আগে ওসামা বিন লাদেনও চট্টগ্রামে ছদ্মবেশে এদেশীয় জঙ্গি ও উগ্র মৌলবাদী নেতাদের সঙ্গে একাধিক গোপন বৈঠক করেছেন। জাওয়াহিরির অডিওবার্তার পর অতি সমপ্রতি মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করলে দেশের ভবিষ্যত এবং নারীর ভাগ্য নিয়ে অসনত্মষ্ট হওয়া ছাড়া উপায় নেই। তবে আমি আশাবাদী এদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে, দূর হবে জঙ্গি তৎপরতা, এগুবে গণতান্ত্রিকতা। স্বাধীনতার জন্য যে জাতি মাত্র নয় মাসে ত্রিশ লক্ষ জীবন দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করতে পারে সে জাতি ঘুরে দাঁড়াবেই।

মিলন আহমেদ/
 নারীবাদীকলাম্‌নিস্ট

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here