জমে উঠেছে লক্ষ্মীপুরে কোরবানির পশুর হাট

জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। এরই মাঝে লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন উপজেলায় জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। প্রতিদিন জেলার স্থানীয় পশুরহাট গুলোতে প্রচুর গরু-ছাগল ওঠতে দেখা গেছে। প্রতিটি হাটে ব্যাপক পরিমাণ দেশী গরুর আধিপত্য দেখা গেলেও পাশা-পাশি রয়েছে বিদেশী গরুও।

বিক্রেতারা জানান, এবার কোরবানির জন্য ভারত, মিয়ানমার, ভূটান থেকে দেশে গরু-মহিষ তেমন একটা আসতে পারছেনা। ফলে এবার কোরবানির বাজার পুরোপুরি দেশীয় পশু নির্ভর হতে যাচ্ছে। ঈদ পর্যন্ত হাট গুলোতে বিদেশী গরু তেমন একটা না আসতে পারলে এবার দেশীয় গরুর খামারীরা লাভবান হতে পারবেন। এতে আগামী দিনে খামারীরা গরু পালনে আরো উৎসাহী হবে। লোকসানের মুখে পড়তে হবেনা স্থানীয় খামারীদের।

এ ছাড়া বিক্রেতারা জানান, গো-খাদ্যের দাম বেশী হওয়ায় গরুর দাম কিছুটা বেশী। অপর দিকে ক্রেতারা জানান, গত বছরের চেয়ে এবার গরু ও ছাগলের দাম প্রায় দ্বিগুন। পশুর এমন উচ্চ মূল্যের কারণে অনেক ক্রেতাই হতাশ।

জেলায় নদীপথে গরু আসার একমাত্র রুট মেঘনা নদীর মজুচৌধুরীর হাট ঘাট এলাকা। গরুর ব্যপারীরা জানান, মজুচৌধুরী ঘাট এলাকায় তাদেরকে গরু আনতে চাঁদা দিতে হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাদের কাছ থেকে গরু প্রতি ১২০টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। মজুচৌধুরীর হাট সড়কে গরুর ট্রাক ভর্তি করতে দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকা করে। এ ছাড়া সড়ক ও নদীপথে গরু আনতে প্রতিটি পয়েন্টে চাঁদা দিতে হয় তাদের, এতেও করে গরুর দাম কিছুটা বেশী।

লক্ষ্মীপুর পৌর গরুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পছন্দের পশুটি কিনতে অনেকেই এসেছেন হাটে, কেউ একা এসেছেন, কেউ এসেছেন দলবেঁধে। যেন তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যবাহী এ হাটটিতে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের এই উপস্থিতি যেন ঈদ উৎসবেরই অংশ। শুধু পৌর গরুর বাজার নয় জেলার প্রতিটি হাটেই পছন্দের কোরবানির পশু কিনতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল লক্ষ্যনীয়। দাম যাই হোক শেষ পর্যন্ত পছন্দের পশুটি কিনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা, আবার অনেকেই দাম বেশির কারনে আগামী হাট পর্যন্ত অপেক্ষা করার চিন্তা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। গো-খাদ্যের সংকটের কারণে অনেক ক্রেতাই এখন গরু কিনছেনা তাদের মতে ঈদের দু-এক দিন আগে গরু ক্রয় করবেন তারা।

লক্ষ্মীপুর পৌর গরুর বাজারে কোরবানির গরু ক্রয় করতে আসা এমরান হোসেন, মো. আলমগীর ও জাকির মিয়াসহ অনেক ক্রেতা জানান, গত বছরের চেয়ে গরু ও ছাগলের দাম এ বছর আরো বেড়েছে, গতবার একটা মাঝারী গরু ক্রয় করতে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাগলেও এ বছর সেই গরু কেনার জন্য ৯০ হাজার থেকে একলাখ টাকা লাগছে।

চর আবদুল্লাহ

লক্ষ্মীপুরে প্রতিটি উপজেলায় কোরবানির পশুর হাট বসেছে। এই সব পশুরহাটে স্থানীয় পাইকার ও ব্যাপারীরা ছাড়াও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে বহু পাইকার ও ব্যাপারীরা গরু ও খাসী এনে বিক্রি করে থাকেন। হাট গুলোর নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি নজরধারীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে প্রশাসনের বারণ সত্ত্বেও জেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ের মাঠে কোরবানির পশুহাট বসানো হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের পৌর পশুর হাট কর্তৃপক্ষ জানান, এবার লক্ষ্মীপুর পৌর পশুর হাটে একলাখ টাকার মধ্যে গরু কিনলে টোল (খাজনা) ধরা হায়েছে এক হাজার টাকা। একলাখ টাকার উপরে গরু কিনলে টোল (খাজনা) ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫শ’ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। এছাড়া হাটে ছিনতাই-চাঁদাবাজী ঠেকাতে ও ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের নিরাপত্তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান জানান, হাট গুলোর নিরাপত্তার জন্য পুলিশের মোবাইল টিম কাজ করছে। গরু ব্যাপারীদের টাকার নিরাপত্তার জন্য মানি স্কটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জাল নোট ঠেকানোর জন্য পুলিশের নজরধারী রয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও নৌ পথে গরু আনার ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি ঠেকাতে পুলিশের বাড়তি নজরধারী রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here