বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনসহ ছয়টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য জানানো হয় ৷ সারা দেশের তৃণমূল পর্যায়ের ১৪৫ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানায় জনশুমারিতে প্রতিবন্ধীদের তথ্য সঠিকভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। এ অবস্থায় জনশুমারিতে প্রতিবন্ধীদের প্রকৃত চিত্র তুলে আনতে প্রতিবন্ধী তথ্য অন্তর্ভুক্তির সময় বৃদ্ধির দাবি জানায় তারা।

অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বলেন, জনশুমারিতে প্রতিবন্ধীদের তথ্য অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিগত আড়াই বছর ধরে বিভিন্ন সভা ও কর্মশালার আয়োজন, সুপারিশ প্রদান ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে এসেছি। আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম যখন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো আমাদের লিখিতভাবে গত ২৭
সেপ্টেম্বর জানায় যে, শুমারির মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সেশন থাকবে, প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে, শুমারির প্রশ্নপত্রে আইনের
আলোকে প্রতিবন্ধকতার ধরন যুক্ত করা হবে। তারা প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত মডিউলেও আমাদের সুপারিশ বিবেচনায় আনে। কিন্তু তথ্য সংগ্রহকারীরা সঠিকভাবে তথ্য না নেওয়ায় এগুলো কোন কাজেই আসেনি।

সারা দেশের ১৪৫ জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনগুলো জানায়, এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনায় অধিকাংশ তথ্য সংগ্রহকারী প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রশ্ন করেনি। বাসায় কোনো প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছে কিনা সে বিষয়েও প্রশ্ন করেনি। এমনকি দৃশ্যমান প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদেরকেও তারা প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক কোন প্রশ্ন করেনি। কোনো কোনো তথ্য সংগ্রহকারী মৌলিক কয়েকটি প্রশ্নের (নাম, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বৈবাহিকঅবস্থা, পেশা, ঠিকানা) উত্তর নিয়ে সম্পূর্ণ প্রশ্নাবলি শেষ না করেই চলে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, তথ্য সংগ্রহকারীরা সব বাড়িতে যায়নি। ঢাকা শহরের কোন কোন অ্যাপার্টমেন্টের দারোয়ানকে গিয়ে কতটি ফ্ল্যাট ও একেকটি ফ্ল্যাটে কতজন করে মানুষ থাকে জিজ্ঞাসা করে তারা চলে গেছে।

কেউ কেউ তথ্য সংগ্রহকারীর কাছে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি যোগ করতে চাইলেও বলা হয়েছে ‘অপশন নেই’। কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা তথ্য যুক্ত করতে চাইলে তথ্য সংগ্রহকারীরা বলেছে সে নিজেই যুক্ত করে দিয়েছে। পরে জিজ্ঞেস করলে জানা যায়, প্রতিবন্ধিতার ভুল ধরন যুক্ত করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তথ্য সংগ্রহকারীর কাছে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রশ্নটি কেন করা হচ্ছে না জানতে চাইলে অনেকেই বলেছে, কেউ যদি কষ্ট পায় এ জন্য প্রশ্নটি করা হয়নি। কোনো কোনো তথ্য সংগ্রহকারী বলেছে, এই প্রশ্ন করলে তো আপনি রেগে যাবেন। কেউ কেউ প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক প্রশ্ন না করে জিজ্ঞেস করেছে আপনার কোন সমস্যা আছে কিনা? কোনো কোনো তথ্য সংগ্রহকারী বলেছে এটা ঐচ্ছিক বিষয় না দিলেও চলবে।

উইমেন্স উইথ ডিজঅ্যাবিলিটি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি বলেন, সরকার থেকে বারবার বলা হয়, প্রতিবন্ধীদের সম্পদে পরিণত করা হবে। কিন্তু প্রতিবন্ধীদের প্রকৃত সংখ্যাই যদি জানা না থাকে তাহলে তাদের উন্নয়নের জন্য কর্মপরিকল্পনা কীভাবে তৈরি হবে।

২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী দেশে জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪১ শতাংশ প্রতিবন্ধী। খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১০ অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আবার খানা আয়-ব্যয় জরিপ ২০১৬ তে বলা হয় প্রতিবন্ধী ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। আর ২১ জুন পর্যন্ত পরিচালিত প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপে দেখা যায় দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ৩৯৯ জন। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবন্ধীদের সংখ্যা নিয়ে এই অসামঞ্জস্যতা দূর করতে এবারের জনশুমারিতে প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্তির সময় বৃদ্ধির দাবি জানান বক্তারা। অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, ডিজেবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর ডিজেবল উইমেন, সীতাকুণ্ড ফেডারেশন, টার্নিং পয়েন্ট ও উইমেন্স উইথ ডিজআবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এই ছয়টি সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জনশুমারি ও গৃহগণনা শেষ হলেও বাদ পড়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তথ্য যাতে যথাযথভাবে গণনায় আসে সে ব্যাপারে অতি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। অন্যথায় প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কার্যকর এবং ফলপ্রসূ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানান তারা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here