জঠিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা মাত্র বিশ টাকায় !আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: স্বল্প শিক্ষিত নারীদের মাধ্যমে বিশ টাকা মুল্যে বিক্রি হচ্ছে একুশ পদের হোমিও প্যাথিক ঔষধ। স্বল্প শিক্ষিত এসব সেবিকার দেয়া ঔষধ পত্রে মুক্তি মিলে মানবদেহ ও গবাদি পশু-পাখির সকল রোগ। গ্রামীন সহজ সরল মানুষদের ভুল-ভাল বুঝিয়ে এভাবে রইচ উদ্দিন আকন্দ হসপিটালের নাম ভাঙ্গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি ইউনিয়নের তালুক দুলালী গ্রামের পল্লী সমাজ উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্থানীয় এনজিও।

স্থায়ী রেজিষ্টার্ড কোন চিকিৎসক বা আবাসিক রোগী না থাকলেও এসএসসি পাশ স্বাস্থ্য সেবিকারা গ্রামীন মানুষের সকল প্রকার রোগের চিকিৎসা পত্র দিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে। হোমিও প্যাথিক এ চিকিৎসার এক একটি শিশি ২০ টাকা সার্ভিস চার্জ মুল্যে বিক্রি করছেন তারা।

এ হসপিটালের এসএসসি পাশ একজন সেবিকা সুমাইয়া বেগম জানান, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি পড়ে প্রতিমাসে ৫ হাজার ১২৫ টাকা বেতনে নিজ গ্রামে সেবিকা হিসেবে সেবা দিতে এ চাকুরীতে যোগদান করেন। যোগদান করেই এ হসপিটালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক লোকমান আলী একটি ব্যাগে কিছু ঔষধ ও তার সেবন বিধি এবং রোগের নাম সম্বলিত একটি কাগজ হাতে ধরিয়ে দেন। ঔষধের প্রতিটি শিশি ২০ টাকা মুল্যে বিক্রি করতে হবে। নিজ গ্রামের মা, চাচি, ভাই, বোন আর খালাদের হাতে ঔষধ তুলে দিয়ে অর্থ প্রতিষ্ঠানের অফিসে জমা দেন। এ ভাবে দুই মাস কেটে গেলেও বেতন ভাতা কোনটাই পাননি তিনি।

জঠিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা মাত্র বিশ টাকায় !উল্টো টার্গেট পুরন না করায় চাকুরী হারানোর হুমকী পেত হচ্ছে তাকে। অবশেষে সাম্প্রতিক সময় হসপিটাল থেকে বলা হয়েছে প্রতিটি শিশি বিক্রির ২০ টাকার মধ্যে ৮ টাকা সেবিকার, ৭ টাকা প্রতিষ্ঠানের এবং ৫ টাকা রইচ উদ্দিন আকন্দ হসপিটাল বা কোম্পানী পাবে। রোগের লক্ষণ, কারন ও প্রতিকারে কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি এবং দীর্ঘ দুই মাস চাকুরীর বয়স হলেও একটি টাকা বেতন পাননি বলে দাবি করেন সেবিকা সুমাইয়া বেগম।

জানা গেছে, হসপিটালের ব্যাগ ঘাড়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়ি বাড়ি ঘুরে গ্রামীন সকল বয়সের মানুষদের কার কি রোগ জানার চেষ্টা করা এবং তার ঔষধ বিক্রির করাই সেবিকাদের কাজ। মানবদেহের সকল রোগের সাথে তারা বাড়ির গবাদি পশু পাখির সকল সমস্যা ঔষধও বিক্রি করেন সুমাইয়ার মত কালীগঞ্জ ও আদিতমারী দুই উপজেলার ৪২ জন সেবিকা। মানবদেহের ত্বকের ব্রুণ মেছতা থেকে শুরু করে গ্যাষ্ট্রিক আলসার, অর্শ্ব, যৌন, মহিলাদের যাবতীয় গোপন ও জঠিল রোগের চিকিৎসা পত্র দিচ্ছেন এসব সেবিকা। বাদ পড়েনি লিভার, ফুসফুস, মুত্রথলি, জরায়ু, মস্তিস্ক ও চক্ষুর মত মানবদেহের গুরুত্বপুর্ন অঙ্গের চিকিৎসা। অস্ত্রপাচার ছাড়াই যে কোন জঠিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। মুলতই মানুষসহ সকল প্রাণি দেহের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা চলে এখানে।

ভেলাবাড়ি এলাকা নেয়ামত উদ্দিন কমলাবাড়ি এলাকার রফিজ উদ্দিন জানান, ঔষধের শিশি কিনেছেন কিন্তু কোন উপকার পাননি। এটা গ্রামীন সহজ সরল মানুষদের সাথে প্রতারনা ছাড়া কিছু না। সরকারী উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন হোমিও প্যাথিকের পল্লী চিকিৎসক জানান, চিকিৎসা ব্যবস্থা এত সহজ হলে তো সবাই চিকিৎসক হতেন। রেজিষ্টার্ড কোন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা ঠিক নয়। সেখানে চার্ট দেখে ঔষুধ, সে আবার মনবদেহ ও পশু পাখির সকল রোগের চিকিৎসা। আশু ব্যবস্থা না নিলে অপচিকিৎসার কারনে সহজ সরল গ্রামের এসব মানুষের বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তালুক দুলালী গ্রামে পল্লী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সুলতান মাহমুদ নামে একজন ম্যানেজার সেবিকাদের বিক্রিত ঔষধের টাকা নিচ্ছেন এবং আগামী দিনের জন্য ঔষধ তুলে দিচ্ছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জনের লিখিত অনুমতি পত্র থাকলে ঔষধ সংরক্ষণ, বিপনন ও চিকিৎসা দেয়ার লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। মানুষ কম টাকায় ঘরে বসে চিকিৎসা পাচ্ছে- এটা ক্ষতি কি? প্রশ্ন তুলেন তিনি।

জঠিল ও কঠিন রোগের চিকিৎসা মাত্র বিশ টাকায় !

লালমনিরহাট সিভিল ডা. কাসেম আলী স্বাক্ষরিত একটি কাগজে দেখা গেল গ্রামীন দুঃস্থ ও হতদরিদ্রদের মাঝে বিনামুল্যে হোমিও চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৬ মাসের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে প্রতি মাসে কার্যক্রমের অগ্রগতি স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মাধ্যমে সিভিল সার্জনকে অবগত করতে হবে। বিনামুল্যের চিকিৎসায় ২০ টাকা নেয়ার বিষয়ে ম্যানেজার সুলতান মাহমুদ কোন মন্তব্য করেননি।

পল্লী সমাজ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক এ হসপিটালের মালিক লোকমান আলী জানান, ঔষধের বিপরীতে ২০ টাকা গ্রামীন মানুষদের জন্য কোন ব্যাপার না। বাড়িতে ঔষধটা পৌছানো হচ্ছে তাই সার্ভিস চার্জ হিসেবে এটা নেয়া হচ্ছে। প্র্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই, চার্টে রোগের নামের সাথে ঔষধের নাম ও সেবন বিধি লেখা আছে সেটা দেখে সেবিকারা ঔষধ বিক্রি করছেন। এটা কোন অপরাধ নয় বরং মানব সেবা বলে দাবি করেন তিনি।

আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নবিউর রহমান জানান, গবাদি পশু ও মানুষের চিকিৎসা এক সঙ্গে হতেই পারে না। বিষয়টি তার জানা নেই। তবে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বলেন, রেজিষ্টার্ড ভুক্ত চিকিৎসক দিয়ে বিনামুল্যে হোমিও চিকিৎসা সেবার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাদের অনিয়মের বিষয়টি আমিও শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here