মোঃ শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটে ১৫ বছর আগে বাড়ি থেকে রাগ করে ভারত যাওয়া ছেলে হাসিব মুন্সি (২৬) কে ফিরে পেতে রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা কামনা করেছেন বৃদ্ধা মা জয়নব বিবি। মৃত্যুর পূর্বে ছোট ছেলেকে এক নজর দেখার জন্য পাগল প্রায় স্বামী ও নিজের দুই ছেলে হারানো এই মা। প্রশাসনের একটু সদিচ্ছায় ভারতের জেল থেকে দেশে ফিরে আসতে পারেন বলে দাবি হাসিব মুন্সির মা ও স্বজনদের।

বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী এলাকায় আব্দুর রহমান মুন্সি ও জয়নব বিবির ছিল সুখের সংসার। তাদের সংসারে ৫ ছেলে ও ৫ মেয়ে। এদের মধ্যে সব থেকে ছোট ছেলে হাসিব মুন্সি। ১৫ বছর আগে ২০০৪ সালের দিকে পরিবারের প্রতি রাগ করে স্থানীয় কয়েক জনের সাথে ভারতে চলে যায় ১০ বছর বয়সী হাসিব মুন্সি। তারপর থেকে পরিবারের সাথে আর কোন যোগাযোগ ছিল না হাসিবের। কয়েকদিন আগে পাশর্^বর্তী এলাকার এক ব্যক্তি ভারত থেকে এসে হাসিবের একটি ছবি ও চিঠি দেন জয়নবের কাছে। চিঠি ও ছবি পাওয়ার পরে সন্তানকে কাছে পেতে আরও বেশি ব্যাকুল হয়ে ওঠেন হাসিবের মা ও অন্যান্য স্বজনরা।

হাসিবের বড় ভাই জসিম মুন্সি বলেন, আমাদের ৫ ভাইয়ের মধ্যে হাসিব সবার ছোট। ১৫ বছর আগে ১০ বছর বয়সে আমাদের সাথে রাগ করে স্থানীয় কিছু লোকের সাথে ভারতে চলে যায়। তারপর থেকে তার আর কোন খোজ ছিল না। কিছুদিন আগে শরনখোলা উপজেলার রায়েন্দার একজন লোক বাড়িতে এসে হাসিবের লেখা চিঠি ও একটি ছবি দেয় আমাদেরকে। চিঠি পেয়ে আমরা হতবাক হই। চিঠিতে লিখেছে, হাসিব বর্তমানে ভারতের তিহার কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে। ১৫ বছর আগে ওই এলাকায় একটি হত্যাকান্ড ঘটে। ঘটনাস্থলের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসা ছিল হাসিব। সেই দোকান থেকে পুলিশ হাসিবকে ধরে নিয়ে যায়।

পরে আদালতে হাসিবের বিচার হয়। হাসিবকে সাজা দেয় আদালত। আদালতের দেওয়া সাজা শেষ হয়েছে হাসিবের। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সরকারি যোগাযোগের অভাবে সে জেল থেকে বের হতে পারছে না। আমরা সরকারের কাছে দাবি করি যে আমার ভাইকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা যেন সহযোগিতা করেন।

হাসিবের মা ৬৫ বছর বয়সী জয়নব বিবি বলেন, আমার ছোট সন্তান হাসিব বাড়ি থেকে রাগ করে বের হবার পর আর ফিরে আসেনি। এরই মধ্যে স্বামীকে হারিয়েছি। দুই ছেলে সন্তান মারা গেছে আমার সামনেই। আজ ১৫ বছর ধরে সব থেকে ছোট ও আদরের সন্তান হাসিবকে দেখি না। হাসিবকে দেখার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু হাসিবের চিঠি পেয়ে ও ছবি দেখে হাসিবকে আবারও কাছে পাওয়ার আশা জেগেছে মনে। শরীরের অবস্থা তেমন ভাল না। যে কোন সময় মরে যাব। মরার আগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই চাওয়া তিনি যেন আমার হাসিবকে আমার কোলে ফিরে আসতে সহযোগিতা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here