ঢাকা : জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড বৃহস্পতিবার রাতে কার্যকর করা হলো। যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের ৩ বছর ৯ মাস পর এ দণ্ড কার্যকর করা হলো।

এবার সুপ্রীমকোর্টে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ৯টি রায়ের মধ্যে ৭টির বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করা হয়েছে।

এর মধ্যে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে এবং একটির শুনানি চলছে।

শুনানি শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৫ জনের আপীল মামলা।

শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের আমির মাতিউর রহমান নিজামীর মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বর্তমানে দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে আরও ৫ জনের, বিচার শুরু হতে যাচ্ছে ২ জনের, এছাড়া তদন্ত চলছে আরও ১১ জনের বিরুদ্ধে।

ব্যক্তি ছাড়াও যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এর আগে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের দেয়া নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ।

বর্তমানে সুপ্রীমকোর্টে বিচারাধীন এ মামলাটি।

সুপ্রীমকোর্টে আপীল এবং রিভিউ চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পর বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে কার্যকর করা হলো জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড। এ ছাড়াও দুই ট্রাইব্যুনাল মিলিয়ে দেয়া হয়েছে আরও ৮টি মামলার রায়।

এতে দণ্ড পেয়েছেন ৯ যুদ্ধাপরাধী। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭ জনই পেয়েছেন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডদেশ, ১ জনের ৯০ বছর ও একজনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

সুপ্রীমকোর্টে শুনানি চলছে সাঈদীর : সাঈদীর মামলার আপীল শুনানি শুরু হয়েছে গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রথমে শুনানি শুরু করে ট্রাইব্যুনালের ১২০ পৃষ্ঠার রায় পড়ে শুনানো হয়েছে আসামিপক্ষের। তারা সাক্ষ্য-প্রমাণভিত্তিক যুক্তি উপস্থাপনও শুরু করেছে। সুপ্রীমকোর্টের চলমান শীতকালীন অবকাশকালীন ছুটি শেষে ১৯তম দিনের মতো শুনানির কথা রয়েছে আপীল বিভাগে।

অন্য মামলাগুলোর আপীল শুনানি শুরুর দিন ধার্যের অপেক্ষায় রয়েছে। সাঈদীর মামলায় প্রমাণিত সব অভিযোগগুলোতে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ আর ফাঁসির দণ্ডাদেশ থেকে খালাসের আরজি জানিয়ে আপীল করেছে আসামিপক্ষ।

সুপ্রীমকোর্টে বিচারাধীন আরও ৫ মামলা : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ৯টি রায়ের মধ্যে ৭টির বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আপীল করা হয়েছে। এর মধ্যে কাদের মোল্লার মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হলো আর শুনানি চলছে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর। শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে যুদ্ধাপরাধের আরও ৫ মামলা।

ট্রাইব্যুনালের ৯ রায় : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ মামলায় ১০ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়েছে দুই ট্রাইব্যুনাল থেকে। এর আগে বিচার প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে গত বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

গঠনের পর প্রথম দুই বছর যুদ্ধাপরাধ মামলার বিচারের গতি কম থাকলেও গত বছর এ প্রক্রিয়া গতি পায়। এ পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬ মামলার রায়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-২ আর তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।

রায়ের অপেক্ষা নিজামীর : ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়ে রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও পক্ষে আসামিপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

বিচার চলছে আরও ৫ জনের : দুই ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে বিএনপি-জামায়াতের আরও ৪ নেতা এবং আওয়ামী লীগের এক বহিষ্কৃত নেতার (জামায়াতের সাবেক রোকন)। বিচারিক প্রক্রিয়া শেষপর্যায়ে রয়েছে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা মোবারক হোসেনের, যিনি স্বাধীনতার পর জামায়াতের রোকন ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here