ডেস্ক রিপোর্ট:: স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন দেশসেরা কলেজ থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলেও কেড়েছিলেন সবার নজর। মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় নিজ বিদ্যালয় থেকে প্রথম ছাত্র হিসেবে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় টিউশন করে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। এতকিছুর পরও সারোয়ার জাহান সাঞ্জু তার এলাকায় চায়ের দোকানদার হিসেবেই পরিচিত।
মেধাবী হওয়ার পাশাপাশি পরিশ্রমী হওয়ার চেষ্টা করুন। অনেক মেধাবী দেখেছি, যারা পরিশ্রমের অভাবে সফল হতে পারেনি। তবে এমন অনেক পরিশ্রমী দেখেছি, যারা পরিশ্রম করে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। আপনি কতটা মেধাবী, দৈনিক সে হিসাব না কষে চিন্তা করবেন, দৈনিক কত ঘণ্টা পড়লেন বা কাজ করলেন। সময়ের ব্যবধানে দেখবেন আপনিও সমাজের চোখে একজন মেধাবী। এমনটাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন চায়ের দোকানদার থেকে প্রভাষক হওয়া সারোয়ার জাহান সাঞ্জু।
সারোয়ারের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে। তার বাবা মো. শাহজাহান আলীর ৩২ বছর ধরে বারোঘরিয়া বাজারে চায়ের দোকান রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) রাতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বাংলাদেশে বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশ করে। ওই ফলাফল অনুযায়ী, সারোয়ার জাহান সাঞ্জু বগুড়ার গাবতলী উপজেলার সৈয়দ আহম্মদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
জন্ম থেকেই দারিদ্র্যতার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে সারোয়ার জাহানকে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সারোয়ার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। বারোঘরিয়া ৩৭ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০১ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। এরপর চামাগ্রাম হেনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন তিনি। এতে নিজ বিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম ছাত্র হিসেবে জিপিএ-৫ পান সাঞ্জু।
২০০৮ সালে নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্ব দেখান তিনি। এইচএসসি পাসের পর দেশের সেরা ও র্যাংকিংয়ের এক নম্বর রাজশাহী সরকারি কলেজের রয়াসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন।
সারোয়ার বলেন, আমার জীবনে কষ্টের অভাব ছিল না, চারদিকে ছিল শুধুই অন্ধকার। ছোটবেলায় ভালোভাবে খেতে পাইনি। নোংরা জামা-কাপড় পরে ঘুরে বেরিয়েছি, তবুও কখনো নিজের পড়াশোনা বন্ধ করিনি। বারোঘরিয়া বাজারে সরকারি জায়গায় এক চালা দেওয়া বাবার চায়ের দোকান। ২০০১ সালে ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় থেকেই চায়ের দোকানে বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতে থাকি। স্কুল-কলেজে যাওয়া ছাড়া বাকি সময় কাটত চায়ের দোকানে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এভাবেই চলে।
তিনি আরও বলেন, সকাল ১০টায় বাবা যাওয়ার পর দোকান বন্ধ করে চাকরির পড়া শুরু করি। দুপুর একটা নাগাদ বাসায় চলে যাই। আবার বিকেলে এসে রাত ৮টায় দোকান বন্ধ করে বাবা বাসায় যাই। আমি সে সময় দোকানে বসেই রাত ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পড়ি। তারপর বাসায় যায়। বন্ধ দোকানে পড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসায় অনেক লোকজন ও পড়ার উপযুক্ত কোনো পরিবেশ ছিল না। তাই দোকানে বসেই পড়ি। বাড়িতে এক দিনের জন্যও পড়া হয়নি।
পড়াশোনার পাশাপাশি দোকান চালিয়ে ছোট দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট ভাই নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছে। নিয়োগপ্রাপ্তির খবরে আমার থেকে বাবা-মা বেশি খুশি হয়েছে। আল্লাহর অশেষ কৃপায় জায়নামাজে থাকা অবস্থায় মাকে এই খুশির খবরটি দিতে পেরেছি।
রোববার (১৮ জুলাই) রাতে চায়ের দোকানে কাজ করা অবস্থায় সারোয়ার জাহান আরও জানান, প্রভাষক হিসেবে নিয়োগেই আটকে থাকতে চাই না। শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় এখন আমার প্রধান লক্ষ্য।