মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি :: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ডাকাত সন্দেহে পুলিশের উপস্থিতিতে কিশোর শামছুদ্দিন মিলন (১৬) কে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২৯জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করেছে আদালত। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় জড়িত তৎকালীন কোম্পানীগঞ্জ থানার এস আই আকরাম শেখসহ পলাতক ২১জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

সোমবার বিকেলে এ আদেশ দেন নোয়াখালী আমলী আদালত-২ এর বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম মোসলে উদ্দিন মিজান ।

আদালত সুত্রে জানা গেছে, ২০১১সালের ২৭ জুলাই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর কাঁকড়া ইউনিয়নের ৬ ডাকাতকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে স্থানীয়রা। ওইদিন সকালে কিশোর মিলন চর ফকিরা গ্রামের বাড়ি থেকে উপজেলা সদরে যাচ্ছিলেন। পথে চর কাঁকড়া একাডেমি স্কুলের সামনে থেকে একদল লোক তাকেও ডাকাত সন্দেহে আটক করে পুলিশের গাড়িতে তুলে দেন।

কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন এসআই মো. আকরাম শেখের নেতৃৃত্বে একদল পুলিশ মিলনকে থানায় না নিয়ে ডাকাত সাজিয়ে চরকাঁকড়া ইউনিয়নের টেকের বাজারে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেন। এরপর লোকজন নিরপরাধ কিশোর মিলনকে পুলিশের উপস্থিতিতে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘটনার কয়েকদিন পর মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিওচিত্রে নৃশংস এই হত্যাকান্ডের খবর গণমাধ্যমে ওঠে আসে। এনিয়ে দেশব্যাপী শুরু হয় সমালোচনা ।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের জুলাই মাসের প্রথম দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নোয়াখালী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতাউর রহমান ভূঁইয়া তার তদন্তে ভিডিও চিত্র দেখে হত্যার ঘটনায় সনাক্ত হওয়া ২৭ ব্যক্তি ও চার পুলিশ সদস্যসহ ৩২জন আসামির সবাইকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে নোয়াখালীর ২নম্বর আমলি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন রিপোর্ট দাখিল করেন।

পরে মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে সিআইডি কুমিল্লা-ে নোয়াখালী অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মেদ চলতি বছরের ৯মার্চ আদালতে পুলিশ সদস্যদেরকে বাদ দিয়ে ২৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দাখিল করেন।

কিন্তু সোমবার আদালত মামলার নথি পর্যালোচনা করে এস.আই আকরাম শেখকে চার্জশিট ভুক্ত করেন। এর মধ্যে আবদুর রাজ্জাক নামে একজনের মৃত্যু হওয়ায় তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এ মামলায় বর্তমানে আট আসামি জামিনে রয়েছেন।

বিগত ২০১১ সালের ২৭ জুলাই সকাল সাড়ে দশটার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আকরাম শেখের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একদল পুলিশ শামছুদ্দিন মিলনকে ডাকাত সাজিয়ে তাঁদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে স্থানীয় জনতার হাতে তুলে দেন। এ সময় স্থানীয় জনতা পুলিশের কথামত ডাকাত ভেবে তাঁদের (পুলিশের) উপস্থিতিতেই কিশোর মিলনকে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

এ ঘটনার মামলা করতে বারবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় আসলেও পুলিশ মামলা না নিলে অবশেষে আটদিন পর মিলনের মা নোয়াখালীর ২ নম্বর আমলী আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রাথমিক ভাবে মামলায় সরাসরি কোন আসামির নাম উল্লেখ করা না হলেও ঘটনার সময় স্থানীয়ভাবে ধারণকরা একাধিক মুঠোফোনে ধারণকৃত ‘ভিডিওচিত্র’ দেখে পুলিশের সহায়তায় ও উপস্থিতিতে কারা কিশোর মিলনকে পিটিয়ে হত্যা করেছে তা বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। মিলনের হত্যাকারীদের নাম প্রকাশ পায়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here