চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠে এখন সরিষার ফুল আর সরিষার ফুল। চলনবিলের দিকে তাকালেই চোখ হলুদ রংঙের ফুলে ভরে উঠে। ফুলের সাথে কোটি কোটি মৌমাছির গুঞ্জন শুনতে বেশ ভাল লাগে। সরিষার মাঠের মধ্যে গেল ফুলের গন্ধে মন ভরে উঠে। প্রকৃতির হলুদ রংঙ মানুষের মন কেড়ে নেয়। পুরো চলনবিল এখন সরিষার ফুলে ঢাকা। কৃষি অফিস ও এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর চলনবিলের ৯ উপজেলায় এই সময়ে প্রচুর পরিমাণে সরিষার আবাদ হয়। ফলনও হয় বেশ ভালো। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে কৃষক কোমর বেঁধে মাঠে নামে সরিষার আবাদ করতে। এক সময় চলনবিলে বোনা আমন ধান, মাছ আর পানি ছাড়া কিছুই পাওয়া যেতো না। কালের পরিবর্তে আমন ধানের বিকল্প হিসেবে বোরো ধানের চাষ শুরু করে এ অঞ্চলের কৃষকরা। চলনবিলের তলদেশে যাদের অবস্থান সেই সব কৃষক কখনো সরিষার আবাদ করার কথা ভাবতো না। বর্তমানে  প্রায় ৭ বছর ধরে বন্যার পানি দ্রুত নেমে যাওয়ায় চলনবিলের বুকে বাম্পার সরিষার আবাদ হচ্ছে। এ বছর চলনবিলে প্রায় ৪৫হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বর্তমানে সরিষার গাছে ফুলের সমাহার। কৃষক আশা করছে কোনো রোগবালাই না হলে এবার চলনবিলে বাম্পার সরিষার ফলন হবে। চলনবিলের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উলাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া, আত্রাই, রানীনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে ব্যাপক হারে সরিষার চাষ হয়েছে। তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের কামাড়শোন গ্রামের কৃষক মুনজিল হক জানান, এ বছর আমি ১২ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার রোগবালাই দেখা দেয়নি। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৬ মণ হারে সরিষার ফলন হবে। দিঘিসগুনা গ্রামের সোলায়মান জানান, সরিষার আবাদের পরই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা যায়। এক সময় বন্যার পানি নামতে দেরি হওয়াতে শুধুমাত্র বোরো ধানের আবাদ করতাম। বর্তমানে মাঠে সরিষার ও ভুট্টার আবাদ হয়েছে। মাকড়শোন গ্রামের কৃষক মজিরউদ্দিন জানান, সরিষার চাষে লাভ বেশী খরচ কম। তাছাড়া সহজেই বিক্রয় করা যায়। সরিষার আবাদ ঘরে তোলার পর ঐ জমিতেই আবার কম সারে বোরো ধানের চাষ করা যায়। তাই চলনবিলের কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে সরিষার চাষ করে আসছে। কুন্দইল গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, কম খরচে সরিষার আবাদ করা হয়। সরিষার জমিতে বোরো ধানের চাষ করতে বেশী সারের প্রয়োজন হয়না। সিংড়া উপজেলার সরিষাবাড়ি গ্রমের কৃষক আতাহার আলী জানান, চলনবিলে সরিষার চাষ হয় তা ভাবতেই অবাক লাগে। কখনো আমাদের নিচু জমিতে সরিষার আবাদ হয়নি। গত ৫ বছর ধরে আমরা নিচু জমিতে সরিষার আবাদ করছি। গুরুদাসপুর উপজেলার বামনবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মহাতাব আলী মন্ডল জানান, আগে আমাদের উঁচু জমিতে সরিষা, রায়, মাল ও তীলের চাষ হতো। কিন্তু বর্তমানে বোরো জমিতে সরিষার আবাদ হচ্ছে। সরিষা ঘরে তোলার পর ঐ জমিতে আবার বোরো ধানের আবাদ করা যাচ্ছে। এতে কৃষক দুই ফসল পেয়ে লাভবান হচ্ছে। সরিষা চাষে ১ বিঘা জমিতে ৮শ’ টাকা থেকে ১ হাজর টাকা খরচ হয়। অথচ যদি ঠিকমত সরিষা গরে তোলা যায় তাহলে ৫/৬ মণ সরিষা ঘরে উঠে। বাজারে বর্তমান সরিষার দাম ভালো।  তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার মিজানুর রহমান জানান, তাড়াশসহ চলনবিলে এবার বাম্পার সরিষার আবাদ হয়েছে। আমরা কৃষককে একের অধিক ফসল ফলানোর জন্য নানাভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছি। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ সার্বক্ষণিক মাঠে কৃষকের সাথে অবস্থান করছে। যাতে কৃষকের কোনো প্রকার সম্যসার সৃষ্টি না হয়। আমি আশা করছি প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে এবার তাড়াশে বাম্পার সরিষার ফলন হবে।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/সুজন সরকার/সিরাজগঞ্জ 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here