শিপুফরাজী, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি :: সংস্কারের অভাবে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হতদরিদ্রদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্প। গত এক দশক ধরে আশ্রিতরা জরাজীর্ণ এসব ভবনে মানবেতর জীবন যাপন করলেও মেরামতের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র। বাধ্য হয়ে যারা বসবাস করছেন তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।
নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিরুপায় শাহানুর বেগম পরিবার ৬ বছর আগে সদর উপজেলার আছলামপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আয়শাবাগ আশ্রয়ণে আশ্রয় নেন। ছেলেমেয়ে নিয়ে নিরাপদে বেঁচে থাকার যে স্বপ্ন নিয়ে শাহানুর বেগম এখানে বসবাস শুরু করেছিলেন, সাত বছরের মাথায় তা হতাশায় রূপ নিয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া ঘরটি এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কোনো ঘরের চাল আছে তো বেড়া নেই, আবার বেড়া আছে তো দরজা নেই । চালের টিনগুলো ভাঙ্গা। বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে।এখানকার বেশিরভাগ নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। টয়লেট সমস্যাও প্রকট। বর্ষার ৬ মাস জোয়ারের পানিতে ঘরভিটা তলিয়ে থাকে।
এখানকার অন্য বাসিন্দারা নানা সমস্যার কথা জানিয়ে বলছেন, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা ব্যবহার অযোগ্য এসব ঘরে মানবেতর অবস্থায় বসবাস করছেন। ১৪টি আশ্রয়হীন পরিবার বর্তমানে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোতে বসবাস করছে।
সরজমিনে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে জানা যায়, ২০০৯ সালে এটি নির্মাণ করা হয়। এখানে নারী ও শিশুসহ অন্তত ১২০জন মানুষ বসবাস করছে। আশ্রিত পরিবারের সংখ্যা ছিল ৪০টি। ইতিমধ্যে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে চলে গেছেন অন্যত্র এমন পরিবার ২৬ টি। আশ্রয়ণের পরিবার গুলির জন্য নির্মিত চারটি নলকূপ মধ্যে সচল আছে মাত্র ১টি। প্রতি পাঁচ পরিবারের জন্য বাথরুম আছে একটি, তাও আবার ব্যবহার অযোগ্য। স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সুবিধা থেকেও বঞ্চিত আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দারা। নির্মাণের পর থেকে এ আশ্রয় কেন্দ্রের কোনো প্রকার সংস্কার হয়নি ।
আয়শাবাগ আশ্রয়ণের মতো একই অবস্থা চরফ্যাশন উপজেলা ২শ ৮৩টি আশ্রায়ন প্রকল্পের প্রায় ৫ হাজার পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। বিদ্যমান এসব দুরবস্থা থেকে রেহাই পেতে ইতোমধ্যেই প্রায় ২ হাজার পরিবার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
উপজেলার আছলামপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আয়শাবাগ আশ্রয়ণে প্রকল্পের সভাপতি মোঃ আবদুর রাজ্জাক জানান-আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মেরামত, টয়লেট, টিউবওয়েল মেরামত করা প্রয়োজন। তিনি জানান, এখানে যাতায়াতের রাস্তাটাও ভাঙা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অনেকবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল পাইনি। আমরা সরকারিভাবে কোন সুযোগ সুবিধা পাইনি। নেই শিশুদের কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের যেসব ঘরের চাল , বেড়া এবং দরজা নেই । চালের টিনগুলো ভাঙ্গা। বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে সেইসব ঘরের বেশিরভাগ পরিবার পাশের বেড়ী বাধে আশ্রয় নিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের কোনো বাজেট নেই, মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলেই মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করে যেন জরুরি ভিত্তিতে বসবাস অযোগ্য আশ্রয়ণ প্রকল্প মেরামতের ব্যবস্থা করা হয়।