শিপুফরাজি, চরফ্যাশন(ভোলা) প্রতিনিধি :: ঘূর্ণিঝড় বুলবুল’র প্রভাবে ভোলারসহ চরফ্যাশনে দেড় শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি বিদ্ধস্ত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন। এদের মধ্যে গুরুতর ৫ জনকে চরফ্যাসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দিকে ইলিশা এলাকার ইলিশা নদীতে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১ জেলের লাশ উদ্দার হয়েছে এবং ১৩ জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে।

এছাড়া শনিবার রাত থেকে রবিবার বিকাল পর্যন্ত গোটা জেলায় ভারি বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাস বইছিল। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। উপড়ে গেছে বিদ্যুতের খুটি। বেশ কয়েকটি এলকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ৬৭টি ঘর বিদ্ধস্ত হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়ন এবং চরফ্যাসনের ওসমানগঞ্জ এলাকায় কয়েক মিনিটের টর্নেডো আঘাত হানে। এতে অন্তত শতাধিক কাচা ঘরবাড়ি বিদ্ধস্ত হয়। এ সময় লালমোহনের পিয়ারিমোহন গ্রামে ঘর চাপা পড়ে আহত হয় অন্তত ১০ জন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৫ জনকে চরফ্যাসন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অপর দিকে রবিবার দুপুরে ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ঝড়োবাতাসে চরফ্যাসন উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স’ানে বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়েছে। ফলে জেলার অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। অপর দিকে চরফ্যাসনের আবদুল্লাহপুরের ২০ জেলেসহ একটি ট্রলার বরিশাল থেকে মাছ বিক্রি করে ফেরার পথে ভোলার ইলিশা মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। এসময় ১৫ জন তীরে উঠতে পারলেও ৫ জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধারে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন চরফ্যাসন উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা।

এদিকে রবিবার দুপুরে চাদপুরে মাছ বিক্রি করে ফেরার পথে ২৪ জন মাঝি ও জেলে নিয়ে আম্মাজান-২ নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ভোলার ইলিশা নদীতে ডুবে যায়। ১০ জেলে তখন জীবীত উদ্ধার হলেও ১৪ জেলে নিখোজ থাকে। রবিবার সন্ধ্যায় কোস্টগার্ড সদস্যরা অভিযান চালিয়ে খোরশেদ নামের এক জেলের লাশসহ ট্রলারটি উদ্ধার করে। তবে সোমবার বিকাল পর্যন্ত নিখোঁজ ১৩ জেলের সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন ভোলা থানার ওসি এনায়েত হোসেন।

এদিকে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয় করতে কিছুটা সময়ের প্রয়োজন উল্লেখ করে চরফ্যাশন উপজেলা প্রশাসক জানান, যাদের ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে দুই একদিনের মধ্যেই তাদেরকে ঘর নির্মাণ করার জন্য ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার করে টাকা ও চাল দেওয়া হবে। এছাড়া গুরুতর আহতদের চিকিৎসার জন্যে নগদ ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে। তিনি আরও জানান, ‘বুলবুল’ মোকাবেলায় প্রশাসক থেকে ব্যাপক প্রস্ততি নেয়া হয়েছিল। শনিবার রাতে চরফ্যাশন সহ জেলার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ লাখ ২৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।

এছাড়াও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের ৩৯টি মুজিব কিল্লায় লক্ষাধিক গবাদি পশু নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছিল।

এদিকে ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব চরফ্যাসনের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিদর্শন করে সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত হওয়া ২০টি পরিবারকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here