হোসেইন জামালঃ ফতেয়াবাদ স্টেশন থেকে শাটল ট্রেনে উঠল মেয়েটি । তবে ট্রেনের ভেতরে নয়, বাঁদুড়ের মতো টেনের দরজায় ঝুলে আছে সে। বয়স পনের কি ষোল হবে। রোদে পোড়া তামাটে শরীর। খুব সুন্দরী নয়, তবে আকর্ষণীয়। যৌবন যেন অভুক্তের মতো মেয়েটির দেহে ভর করেছে। নোংরা জামাটি ঝুলন্ত দেহকে ঢেকে রাখার ব্যর্থ চেষ্টারত। তাতে বাঁধ সেধেছে ছুটন্ত ট্রেনের বাতাস। প্রকৃতির নিজস্ব খেয়াল মেয়েটির যৌবনকে এই গ্রীষ্মের দুপুরেও অস্থির করে তুলেছে। উচ্চতাও খুব বেশি নয়। সাড়ে চার কি পাঁচ ফুট। আমি দরজায় বসা। ট্রেনে ছুটে চলছে। গন্তব্য ক্যান্টনমেন্ট। তারপর ষোলশহর।

গরমের সময়। দুপুরের ভাত ঘুমটা তখনো চোখে। আকাশে সূর্যের প্রখর আলো। চলন্ত ট্রেনের দরজায় মিষ্টি বাতাসে আমার কান্ত চোখে ঘুম ঘুম ভাব। মেয়েটি তখনো ঝুলে আছে। তার সঙ্গে কয়েকবার দৃষ্টি বিনিময় হলো। আমার লজ্জা দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে সে। হয়ত ভাবছে ভার্সিটির ছাত্র, অথচ লাজুক। আমি আবার তাকালাম। দেখি, অপলক আমার দিকে তাকিয়ে আছে মেয়েটি। উদাস দৃষ্টি। প্রচন্ড গরমে গাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। যেন শীতের খেজুরের রস। চিবুক বেয়ে টুপটুপ করে পড়ছে ঘাসের বুকে।

হঠাৎ নীরবতা ভেঁঙ্গে অদ্ভুত খেয়ালে মেতে উঠলো সে। ঝুলে ঝুলে রাস্তার পাশের গাছের পাতা, ফুল ছিঁড়ে উড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসে। এভাবে কাটল অনেকটা সময়। মাঝে মাঝে মুখের ঘামে আটকে থাকা সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে পরম মমতায়। পেছনের চুল উড়ছে হাওয়ায়। একটা স্বর্গীয় সুখে ভরে গেছে মেয়েটির মুখ। তবে পরের দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। পরম আনন্দের পরে চরম ট্র্যাজেডি যে অপেক্ষা করছে, তা ভাবিনি। আমার হাতে ছিল একটা পানির বোতল।

পানি খেতে গিয়ে ওটা পড়ে যায়। মেয়েটির বোতলটা তোলার ব্যর্থ চেষ্টা করতে গিয়ে হাত ফসকে পড়ে যায় রাস্তার পাশে। চরম দুঃসাহসিকতা দেখাতে গিয়ে তার এমন পরিণতি হবে তা জানা ছিল না। শুধু একটা ক্ষীণ কণ্ঠের আওয়াজ শুনেছি। ততক্ষণে ট্রেন বাঁক ফিরেছে। মেয়েটিও চলে গেলো চোখের আড়ালে। পরের তিন বছর ভার্সিটিতে কাটিয়েছি। মনও তাকে বারবার খুঁজতো। কিন্তু কখনো আর দেখা মেলেনি তার। তবে আশ্চর্য হলো, গতকাল রাতে গভীর ঘুমে তাকে আবার দেখলাম। হাঁটছে মেঘলোকে। মুখে তার অদ্ভুদ সুন্দর সেই হাসি।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here