[dropcap][/dropcap]

স্টাফ রিপোর্টার :: বেসরকারি সংস্থা ঘাসফুল এর নির্বাহী পরিষদ সদস্য পারভীন মাহমুদ এফসিএ. আজ রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালেে চট্টগ্রাম পূর্ব মাদারবাড়িস্থ সেবক কলোনীতে ঘাসফুল শিশু বিকাশ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

এসময় তিনি বিকাশ কেন্দ্রের শিশু-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন, খোঁজ খবর নেন এবং ভালোভাবে পড়ালেখা করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি শিশুদের মাঝে খেলনা বিতরণ করেন।

পরিদর্শনকালে তাঁকে স্বাগত জানান, কেন্দ্রের সহায়িকা শিরিন সুলতানা ও ঘাসফুল পাবলিকেশন বিভাগের সহকারি ব্যবস্থাপক জেসমিন আক্তার।

উল্লেখ্য, আশির দশকে উন্নয়ন সংস্থা ‘ঘাসফুল’ এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শামসুন্নাহার রহমান পরাণ চট্টগ্রাম পূর্ব মাদারবাড়িস্থ সেবক কলোনীতে এই অচ্ছুত সম্প্রদায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ শুরু করেন। উন্নয়ন সেক্টরে প্রয়াত পরাণ রহমানই সর্বপ্রথম পিছিয়েপড়া এ জনগোষ্টিকে উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসেন। নগরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী; অবহেলিত সেবক জনগোষ্টির স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা সূসংহত করতে পরাণ রহমান ১৯৯৩ সালে তাদের কলোনীতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে নন-ফরমাল প্রাইমারি এডুকেশন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সন্তানদের প্রাইমারি শিক্ষা এবং স্কুলমুখি করার কঠিন সংগ্রাম শুরু হয়। পরাণ রহমানের অক্লান্ত পরিশ্রম, দীর্ঘতর প্রচেষ্টা ও সৃজনশীল কৌশলের মাধ্যমে এ শিক্ষাকেন্দ্রটি বর্তমানে একটি সফল প্রতিষ্ঠানে অধিষ্ঠিত হয়। শিক্ষাকেন্দ্রটির কার্যক্রমে তৃণমুল থেকে উঠে আসা বহু সফল ছাত্র-ছাত্রী গর্ব করার মতো বিষয় এখানে রচিত হয়েছে। একসময় যেখানে কলোনীর বাচ্চারা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ঝগড়াঝাটিতে লিপ্ত হতো আজ সেখানে প্রতিটি সকাল মুখরিত হয় শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। একসময় এখানকার শিশুদের বংশ পরম্পরা নিশ্চিত গন্তব্য ছিল; নগরের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হওয়া।

ঘাসফুলের এ শিক্ষাকেন্দ্রটি তাদের স্বপ্ন বদলিয়েছে, তাদের মনে মানব মর্যাদার বীজ বপন করতে সক্ষম হয়েছে। ঘাসফুল শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ছাত্র অভিরাম দাশ আজ প্রকৌশলী হয়ে ভাল একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। অনেকে পড়ালেখা করে সফলভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। কন্যাশিশুরাও কলেজে পড়ছে।

প্রথমদিকে কলোনীর বাসিন্দারা কিছুতেই সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে রাজি হতো না। তখন পরাণ রহমান তাদের স্বাক্ষর শেখানোর নামে এখানে বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে যখন তারা বুঝতে পারে বাচ্চাদের পড়ালেখা তাদের জীবনেও আলোকিত করতে সক্ষম তখন তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে রাজি হয়। এভাবে একসময় পিছিয়েপড়া এই জনগোষ্ঠির বসতিতে স্কুলগামি ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে স্থানীয় এস. কলোনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে ওভারলেপিং সমস্যা দেখা দিলে ঘাসফুল কর্তৃপক্ষ স্কুলটিকে শিশু বিকাশ কেন্দ্রে রূপ দেয়। যাতে করে কলোনীর স্কুলগামি ছাত্র-ছাত্রীদের আসা অব্যাহত থাকে, যাতে কষ্ঠার্জিত এ ধারা কখনো থেমে না যায়, যাতে কলোনীর শিশুগুলো মানুষ হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।

ঘাসফুল এর এই শিক্ষাকেন্দ্রটি নিরবচ্ছিন্নভাবে ১৯৯৩ সাল থেকে অদ্যবধি শিক্ষাসেবা দিয়ে আসছে। এখানে বর্তমানে দুই শিফটে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। সকাল ৯-১১টায়; ০২-০৫ বছর বয়েসি শিশুদের প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা এবং ১১-০১.০০ পর্যন্ত; ৬-১৪ বছর বয়েসি শিক্ষার্থীদের টিউটেরিয়াল সাপোর্ট দিয়ে থাকে।

এছাড়াও শিশুদের মানসিক বিকাশে এখানে নাচ, গান, ছবি আঁকা, ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি, বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদযাপন, অভিনয়সহ বিভিন্নধরণের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এখানকার শিশুরা জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠান/প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে থাকে।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here